রেডিয়োতে মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে মহালয়ার আসল আমেজই পাওয়া যাবে না

রেডিয়োতে মহিষাসুরমর্দিনী  না শুনলে মহালয়ার আসল আমেজই পাওয়া যাবে না

একটা সময় ছিল, যখন বাঙালিরা ঘরের রেডিয়োকে নিজের আত্মীয় বলে মনে করত। তখন রেডিয়োর ভাল দামও ছিল। ফলে অনেক গেরস্তই তা কিনতে পারত না। যাদের বাড়িতে রেডিয়ো ছিল না, তারা প্রতিবেশীদের বাড়িতে রেডিয়ো শুনতে যেত। এটা অনেকটা যেন সেই গঙ্গার ঘাটে রামায়ণপাঠ শুনতে যাওয়ার মতো আনন্দের একটা ব্যাপার ছিল। তখন বাঙালি অনেক উদার ছিল। বাড়িতে রেডিয়ো শুনতে আসা অতিথিকে সে ভালবেসে চা এবং বিস্কুট খাওয়াতে কুণ্ঠা বোধ করত না। পরে, যখন কেনার সামর্থ জন্মাল, তখন মানুষের সারা দিনের নানা কাজের সঙ্গী হল রেডিয়ো। টেলিভিশন আসার পরে রেডিয়োর জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল—এটা সত্যি।

কিন্ত টেলিভিশনকে বাঙালি কোনওদিনই নিজের আত্মীয় বলে মনে করেনি। এর কারণ হয়তো এই যে, সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে রেডিয়োর সাইজ, বিরাট থেকে ক্রমশ ছোট্ট হয়ে এসেছে। তাকে কোলে নিয়ে, পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হয়েছে। টেলিভিশনের ভারীভুরি চেহারাটা বহুদিন অমন দামড়াই ছিল। ইদানীং কিছুটা স্লিক হলেও, তাকে কোলে নিয়ে এ ঘর ও ঘর করার কথা বাঙালি স্বপ্নেও ভাবেনি। টিভিকে তারা চিরকাল মোহ এবং আকর্ষণে মেশা এক সম্ভ্রমের চোখে দেখত। আর যে দেখাটা অনেকদিন ধরে বদলায়নি। রেডিয়োতে খবর হত। গান এবং বাজনা হত। হত নাটক এবং কৃষিকথার আসর। হত ভালভাল সাক্ষাৎকার, ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার ধারাবিবরণী। তবে যে অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা, অন্য সবকিছুকে ফিকে করে দিয়েছিল, তা হল মহালয়ার দিন ভোর চারটে থেকে শুরু হওয়া ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

এই গীতি আলেখ্যটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল ১৯৩২ সালে, মহালয়ার দিন ভোর রাতে। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত, মাত্র একটি বছর ছাড়া, বাকি সব বছরই এটি মহালয়ার দিন ভোর চারটে থেকে বেজে আসছে। আসলে ওইসময় থেকেই বাঙালির কাছে, মহালয়া এবং ‘মহিষাসুরমর্দিনী’—এই শব্দদুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। তখন মহালয়ার আগের রাত্তিরে, বেশিরভাগ বাড়ির টাইমপিসে, রাত সাড়ে তিনটের অ্যালার্ম দিয়ে শোয়া হত। বড়োরা সেই অ্যালার্ম শুনে উঠে, ছোটদের ডেকে তুলতেন। কারণ তাড়াতাড়ি বাথরুম সেরে, দাঁত মেজে, চা-টা খেয়ে সবাই খাটের ওপর কোলে বালিশ নিয়ে রেডিয়োর সামনে গুছিয়ে বসতে হত। যখন চা খাবার ছাড়পত্র ছিল না, তখনও এই বিশেষ দিনটিতে বড়দের সঙ্গে বসে কাপে করে চা খাচ্ছি—এ স্মৃতি এখনও মনের অ্যালবামে জ্বলজ্বল করে।

এই সময় বাতাসে একটু সিরসিরে ভাব থাকায়, অনেকেই গায়ে একটা পাতলা চাদরও জড়িয়ে নিতেন। আমার ন’জ্যাঠা—যিনি নিজেই ওই আলেখ্যতে ‘নমো চণ্ডী’ গানটি গেয়েছেন, তাঁকেও অনুষ্ঠানটি আগ্রহ নিয়ে শুনতে দেখতাম। যদিও ওঁর কাছেই শোনা, বহুকাল পর্যন্ত ওঁরা ওই গোটা অনুষ্ঠানটিই লাইভ পারফর্ম করতেন। আমার মতো ছোটরা বেশির ভাগ সময়ই শুরুটা খুব মন দিয়ে শুনে, কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ত। তারপর বেশ কিছুটা হয়ে যাওয়ার পরে আবার তাদের ঘুম ভেঙে যেত। তখন আবার নতুন উৎসাহে শুনতে শুরু করত।

আগে আমাদের বাড়িতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনা হত ঠাকুদ্দামশাইয়ের আমলের ‘এয়ার মেক’ রেডিয়োতে। এই সেগুন কাঠের পালিশ করা রেডিয়োটি ছিল প্রায় দেড় হাতের মতো লম্বা। চওড়া ও উচ্চতায় প্রায় এক হাতের মতো। শুরুতে এর সঙ্গে ছিল তারের জালিজালি নেটের মতো একটি অ্যান্টেনা—যা আকাশ থেকে ইথার তরঙ্গকে ধরতে সাহায্য করত। অ্যান্টেনাটা মাপে ছিল মোটামুটি চার ফুট লম্বা আর পাঁচ ইঞ্চির মতো চওড়া। বারান্দার মতো কোনও খোলামেলা জায়গায়, দু’দিকে দুটো বাঁশের সঙ্গে স্প্রিং দিয়ে সেটাকে আটকে রাখতে হত।

সেই অ্যান্টেনার গায়ের সঙ্গে একটা তার আটকানো থাকত, যার এক প্রান্ত এসে ঢুকে যেত রেডিয়োটির শরীরে। পরে একবার সারানোর সময়, একটি আধুনিক ইথার-রিসেপ্টর রেডিয়োটির ভেতর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জার্মানিতে তৈরি এই রেডিয়োটিতে থার্মিওনিক ভালভ্‌ লাগানো ছিল। মানে, সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গেই এতে শব্দ শোনা যেত না। একটু গরম হওয়ার সময় দিতে হত। আর চালু হওয়ার পর প্রথমে কিছু ক্ষণ খস্‌খস্‌ খস্‌খস্‌ গোছের একটা শব্দ হত। আমি এই রেডিয়োয় অনেক অনুষ্ঠান শুনেছি।

আমাদের বাড়ির দ্বিতীয় রেডিয়োটি ছিল একটি ফুটখানেক লম্বা কালোরঙা ‘মারফি’। এর লোগো ছিল গালে আঙুল ঠেকানো একটা ঝাঁকড়া চুলো মিষ্টি বাচ্চা। আমার জন্মের বহু আগে, ছয়ের দশকের একদম গোড়ার দিকে ন’জ্যাঠা এই রেডিয়োটা নিজের বিয়ে উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার পেয়েছিলেন। এটাও ছিল একটা ছোট ভালভ—সেট রেডিয়ো। আওয়াজ ছিল চমৎকার।

এরপর ছয়ের দশকের শেষের দিকে সেজোজ্যাঠা ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ এর একটি বড়োসড়ো রেডিয়ো কাম রেকর্ড প্লেয়ার কিনে আনেন। মডেলটার নাম ছিল ‘কঙ্কোয়েস্ট’। এই সেটটা কিন্তু দাঁড় করানো নয়—শোয়ানো। সামনে উপরের দিকে ছিল কাচে ঢাকা রেডিয়ো মিটার আর তার পাশে ছিল নব গুলো। আর পিছনের বাদামি ডালা খুললে বেরিয়ে পড়ত রেকর্ড প্লেয়ারের সাদা ধবধবে গোলাকার চাকতি আর তার পাশে থাকা একটা সাদা স্টিক। এই সেটটার স্পিকার ছিল অসামান্য এবং অনেক জোরে চালালেও গলা বা বাজনার আওয়াজ ফেটে যেত না।

 নতুন জ্যাঠা সাতের দশকের গোড়ায় আমেরিকান ব্র্যান্ড ‘জেনারেল ইলেকট্রিক (জি. ই.)’ এর একটি দশ ইঞ্চির ট্রানজিসটর কিনেছিলেন, যার সঙ্গে লাগানো ছিল একটি ফোল্ডিং স্টিল এরিয়াল। এর মাথার চকচকে রুপোলি বল্টুটা ধরে টানলে, সেটা প্রায় এক ফুটের ওপর লম্বা হয়ে যেত। সাতের দশকের শেষের দিকে, আমার বাবা ‘বুশ’ কম্পানির যে কালো ট্রানজিস্টরটা কিনেছিলেন, সেটা মাপে ছিল একটা থান ইটের চেয়ে সামান্য ছোট। রেডিয়োর স্টেশন বদলাবার নবটি ছিল লম্বাটে এবং সরু মতো একটি কালো রোলার।

সেটা উপর-নীচে ঘোরালে, চ্যানেল মিটারের মধ্যে একটি লাল টুকটুকে কাঠি, ডাইনে-বাঁয়ে নড়াচড়া করত।  মামার বাড়িতে একটা হল্যান্ড ফিলিপসের বড়সড় রেডিয়ো থাকলেও, ছোটমামার কেনা একটি জার্মান ব্র্যান্ড ‘টেলিফাঙ্কেন’-এর রেডিয়ো কাম স্পুল রেকর্ডারের আওয়াজ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। সেটাকে দেখতে ছিল একটা অ্যাটাচির মতো। পেটের মধ্যে গোটা দশেক হাজার পঞ্চাশ মাপের ব্যাটারি লাগালে তারপর সেটা চলত। সেটা চললে, পাশে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলে মনে হত, সত্যিই বুঝি কেউ সামনে বসে সেতার বা সরোদ বাজাচ্ছে।

এছাড়া তখনকার জার্মান রেডিয়ো ‘গ্রুনডিক’ এর নামও আমি অনেকের মুখেই শুনেছি। তিনের দশক থেকে আটের দশকের গোড়া পর্যন্ত রেডিয়োর এই জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। তারপর সেটা আস্তে আস্তে পড়তে শুরু করে। আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই শহরের ব্যস্ত মানুষজন যখন নিজেদের ব্যস্ত জীবনযাপনের সঙ্গে টেলিভিশন, ক্যাসেট রেকর্ডার, ভিসিপি—এমন বিনোদনের নানা উপকরণকে জড়িয়ে নিল, তখন রেডিয়োরা আস্তে আস্তে কোণঠাসা হয়ে পড়ল।

ঘরের মাঝখানে রাখা টেবিলের ওপর থেকে সরে গিয়ে তাদের জায়গা হল তক্তাপোশের নিচের ধুলো আর ঝুলের সঙ্গে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বছরের ওই বিশেষ দিনটি কাছে এগিয়ে এলে তাকে ধুলোটুলো ঝেড়ে ঠিক বের করে আনা হত। পেটের মধ্যে পরিয়ে দেওয়া হত নতুন ব্যাটারি । থাবড়ে-থুবড়ে, চাপড়ে-চুপড়ে ঠিক চালু করে নেওয়া হত ভোর রাতের ওই বিশেষ অনুষ্ঠানটি শোনবার জন্যে। মহালয়ার দিনে, যেমন ওই একটি দিনের জন্যে অতি নিকট আত্মীয়স্বজনের কথা মনে করার সুযোগ পান অনেকে—তেমনি ওই একটি দিনের জন্যেই তাঁদের মনে পড়ে এক সময়কার আত্মীয়, পুরনো রেডিয়ো সেটটির কথা।

কারণ, এখন যাঁদের বয়স অন্তত পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তাঁদের অনেকেই এটা এখনও বিশ্বাস করেন—‘মহিষাসুরমর্দিনী’ রেডিয়োতে না শুনলে, মহালয়ার আসল আমেজই পাওয়া যাবে না। এই জন্যে মহালয়া আসার দিন তিনেক আগে থেকেই স্থানীয় রেডিয়ো সারানোর দোকানে প্রৌঢ় থেকে বয়স্ক মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এখন যদিও রেডিয়ো সারানোর দোকান হাতে গোনা, কিন্তু নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শহর কলকাতার পুরনো পাড়াগুলোয় তাদের কিন্তু খুঁজে পাওয়া যেত। হরিশ মুখার্জি রোড ধরে রবীন্দ্র সদনের দিক থেকে এলে হরিশ পার্কের ঠিক আগে, রাস্তার ওপরেই ‘এয়ার ভয়েস’ নামের একটা রেডিয়ো সারানোর দোকান ছিল।

দোকানটার ভেতরে নানা ধরনের রেডিয়ো ও টেপরেকর্ডার, আর বাইরেটায় নানা মাপের রুপোলি মাইকের চোঙ আর বড়ো বড়ো স্পিকার পাশাপাশি দাঁড় করানো অবস্থায় দেখতাম। বাংলা শার্ট আর ধুতি-পরা চশমা চোখের যে রোগা মতো মানুষটি সেখানে থাকতেন, তাঁর নাম ছিল সম্ভবত সুরেশবাবু। ঢোলা ফুল প্যান্ট আর ছিটের হাফ শার্ট পরা তাঁর ছেলেও ওখানে খুটখাট করত, যার নাম ছিল তপন। ওই দোকানে আমাদের বাড়ির দু’একটি রেডিয়ো, দু’একবার অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়েছিল এবং সুস্থ হয়ে ফিরেও এসেছিল। সেই কারণে সেজোজ্যাঠার ‘কঙ্কোয়েস্ট’টার একবার সাউন্ডের কিছু সমস্যা হওয়ায় ওখানেই সারাতে দেওয়া হয়েছিল।

সারিয়ে নিয়ে আসার বেশ কিছুদিন পরে ধরা পড়েছিল—ওর বাঁ দিকের স্পিকারটাই নেই। সেখানে কেবল স্পিকারের একটা ফাঁকা খাপ লাগানো রয়েছে। এই ঘটনার কোনও মীমাংসা আমার সুভদ্র সেজোজ্যাঠা করে উঠতে পারেননি। কিন্তু আমরা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, বুলবুলিতেই ধানটুকু খেয়েছে—আর কেউ নয়। দেবেন্দ্র ঘোষ রোড ধরে আশুতোষ মুখার্জি রোডের দিকে এগিয়ে আসার সময় রাস্তার ডান হাতে যদু বাজার মসজিদের একটুখানি আগেই ছিল লক্ষ্মীবাবুর রেডিয়ো সারানোর দোকান। দোকানটির কোনও নাম ছিল কি না মনে নেই কিন্তু ওপরের ভাঙাচোরা সাইন বোর্ডে একটা রেডিয়োর ছবি ছিল আর পাশে বড়ো করে লেখা ছিল ‘ফিলিপস্‌’—এটুকু আজও মনে আছে। ভারীভুরি চেহারার খৈনিপ্রিয় লক্ষ্মীবাবু, ধবধবে ‘তরুণকুমার’ পায়জামা আর নস্যি রঙা একটি ফতুয়া পরে, আমাদের ভবানীপুর স্কুল রোডের বাড়ির সামনে দিয়েই যাতায়াত করতেন।

ওঁর কাছে আমি নিজেও রেডিয়ো এবং টেপ রেকর্ডার সারাতে দিয়েছি। খরচা একটু বেশি পড়লেও কাজটা কিন্তু খুবই যত্ন করে করতেন। ওঁর দোকানে মহালয়ার দু’একদিন আগে গিয়ে রেডিয়ো সারাতে দেওয়া খুবই কঠিন ছিল। কারণ ওঁর তখন রেডিয়োর স্তূপ থেকে মাথা তুলে, কথা বলবার অবকাশ থাকত না। লক্ষ্মীবাবুর দোকানের ফুটপাত ধরে আশুতোষ মুখার্জি রোডের দিকে একটুখানি এগোলেই ‘গুপ্তা ইলেকট্রনিক্স’। ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি হওয়া এই দোকানটি থেকে কত যে ক্যাসেট কিনেছি এবং ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেটে কত যে পছন্দ মতো গান ভরিয়ে নিয়েছি—তার ইয়ত্তা নেই।

দোকানটির মালিক, দোহারা চেহারার এবং সারা মুখে বসন্তর দাগ-ভর্তি, মৃদুভাষী কৃষ্ণচন্দ্র গুপ্তা আদতে উত্তর প্রদেশের মানুষ হলেও বেশ ভালই বাংলা বলতেন। নিজের দোকানে রেডিয়ো এবং টেপরেকর্ডার বিক্রির পাশাপাশি, সেগুলো সারানোর জন্যে উনি একজন মেকানিকও রেখেছিলেন। ওঁর কাছে যখন মহালয়ার আগে, এলাকার গেরস্তরা দলে দলে রেডিয়ো সারানোর জন্যে হাজির হত, তখন দেখতাম, দোকানের পিছনের ছোট্ট খুপরিতে, একজনের জায়গায় দুজন মেকানিক, লাল ডুম জ্বালিয়ে কাজ করে চলেছে। আর এসব দেখে আমরা আঁচ করতে পারতাম যে, পুজোর আর বিশেষ দেরি নেই। আমাদের ঘরের দোরগোড়ায়, মা দুর্গা তাঁর ছানাপোনা নিয়ে প্রায় এসে গিয়েছেন।