মাদুরাই এর মীনাক্ষী মন্দির দর্শন

মাদুরাই এর  মীনাক্ষী মন্দির দর্শন

 

মীনাক্ষী মন্দির Meenakshi Temple দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর মাদুরাই Madurai শহরে ভাইগাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির। এই মন্দিরটি দেবী পার্বতীর মীনাক্ষী রূপ এবং তাঁর স্বামী শিবের সুন্দরেশ্বরের রূপের উদ্দেশ্যে নিবেদিত৷ এই অঞ্চলের প্রাচীন মন্দিরনগরী মাদুরাইয়ের কেন্দ্রস্থলে মীনাক্ষী মন্দিরটি অবস্থিত৷ খ্রিস্টীয় ষষ্ট শতাব্দীতে তামিল সঙ্গম সাহিত্যে মন্দিরটিকে মূলত দেবী মীনাক্ষীর মন্দির হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ মাদুরাই শহরটি বেশ প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক অনেক নথিপত্রে শহরটির উল্লেখ পাওয়া যায়৷

দেবী মীনাক্ষীকে শহরটির দৈবিক শাসিকা হিসাবে ধরা হতো, যিনি তাঁর স্বামী শিবের সাথে পান্ড্য সাম্রাজ্যের মতো তামিলনাড়ুর দক্ষিণের সাম্রাজ্যগুলিতে সম্মানের সাথে পূজিতা হতেন৷ খ্রিস্টীয় ষষ্ট শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকেই এখানে মীনাক্ষী মন্দিরের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। মধ্যযুগীয় সাহিত্য এবং শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জায়গাটিকে 'কদম্ববনম' (কদম গাছের বনাঞ্চল) বা 'বেল্লিয়ম্বলম' (রজত মঞ্চ, যেখানে ভগবান শিব তার আনন্দ তাণ্ডব প্রদর্শণ করেছিলেন) বলেও উল্লেখ করা রয়েছে৷

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য বিখ্যাত মন্দিরের অনুরূপ এই মন্দিরটিও বার বার আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩১০-১১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি মালিক কাফুর মাদুরাই, চিদম্বরম, শ্রীরঙ্গম প্রভৃৃতি তামিল শহর আক্রমণ করে এই মন্দির সহ সেখানকার সব মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে। অধ্যাপক ও ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর ইতিহাসের গবেষক স্যার জর্জ মিশেলের মতে খ্রিস্টীয় চতুর্দ্দশ শতকের সুলতানি আমলে এই অঞ্চলের ভারতীয় স্থাপত্যশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে খ্রিস্টীয় চতুর্দ্দশ শতাব্দির শেষদিকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটলে কুমার কম্পন তাঁর স্ত্রী গঙ্গাদেবীর অনুরোধে মাদুরাই শহরকে পুনরূজ্জীবিত করেন এবং মীনাক্ষী মন্দিরকে ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করে এর ভগ্নাবস্থা কাটিয়ে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার পূর্বক ভক্তদের প্রার্থনার জন্য পুনরায় খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।  

মাদুরাই শহরটি বেশ প্রাচীন এবং সঙ্গম কালীন নথিপত্রগুলিতেও শহরটির অস্তিত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ যুগটি ছিলো খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতকের বিস্তৃৃত সময়ের মধ্যে৷ কিছু পুরানো তামিল বইতে মাদুরাই শহরটির নাম "কূডল" বলে উল্লেখ করা রয়েছে এবং সেখানে শহরটিকে রাজধানী নগরের সাথে সাথে মন্দিরনগরীগুলির একটিও বলা হয়েছে৷ উল্লেখ রয়েছে শহরের মূলমন্দির থেকে শহরের যোগাযোগের রাস্তাগুলি বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা৷

দেবী মীনাক্ষীকে শহরটির দৈবিক শাসিকা হিসাবে ধরা হতো, যিনি তার স্বামী শিবের সহিত পান্ড্য সাম্রাজ্যের মতো তামিলনাড়ুর দক্ষিণা সাম্রাজ্যগুলিতে সম্মানের সহিত পূজিতা হতেন৷ পুরানো লিখিত প্রমাণ অনুসারে খ্রিস্টীয় ষষ্ট শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকে শহরটিতে মীনাক্ষী মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ মধ্যযুগীয় সাহিত্যে এবং শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জায়গাটিকে 'কদম্ববনম' (কদম গাছের বনাঞ্চল) বা 'বেল্লিয়ম্বলম' (রজত মঞ্চ, যেখানে ভগবান শিব তার আনন্দ তাণ্ডব প্রদর্শন করেছিলেন) বলেও উল্লেখ করা হয়েছে৷ সঙ্গমযুগের বিদ্বজ্জনদের লেখনীতে স্থানটি ছিলো বহুগুণীজনদের মিলনস্থল৷

এই ঘটনার কথা তামিল পুঁথি "তিরুবিলয়াড়লপুরাণম" এবং সংস্কৃৃত পুঁথি "হলস্য মাহাত্ম্য"-তে রয়েছে৷ এটি ২৭৫ টি পাড়ল পেত্র স্থলমের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দেবস্থান ও দিব্যমূর্ত্তি৷ তামিল ভাষায় রচিত পুরাতন পুঁথি গুলিতে এই মন্দির এবং এর দেবমূর্ত্তি একাধিক নামে একাধিক বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে৷ উদাহরণ স্বরূপ খ্যাতনামা শৈবধর্মের হিন্দু পণ্ডিত শ্রী জ্ঞানসম্বন্ধ খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তার লেখায় মন্দিরটির উল্লেখ করে দৈবমূর্ত্তিকে "আলাবৈ ইরৈবন" নামে অভিহিত করেন৷ মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এইসময়কার পুরানো তামিল পুস্তক এবং কিছু আঞ্চলিক পৌরাণিক ও সাহিত্যের বইতে পাওয়া যায়৷

এই সমস্ত জায়গার উল্লেখ অনুসারে মন্দিরকে জড়িয়ে দেবীমূর্ত্তির যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া গেলেও আলাদা আলাদা রচয়িতার কারণে ঘটনাবলীর সূক্ষতা একে অপরের থেকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্বন্ধহীন৷ কিছু সুত্র অনুসারে স্থানীয়রা দৈবমূর্ত্তিদুটিকে "আলাবৈ ইরৈবন" এবং "আলাবৈ অন্নল" বলে পূজতো আবার কোনোস্থানে এর নাম পাওয়া যায় "অঙ্গয়র কন্নি আম্মৈ" নামে৷ কেউ কেউ মন্দিরটির জনশ্রুতি হিসাবে ইন্দ্রের গল্প বলেন, যেখানে তিনি ছিলের মূখ্য আরাধ্য দেবতা, আবার এক্ষেত্রে বাকীরা বিবরণ দেন হিন্দু দেবতারা বিভিন্ন সাধু-সন্ত এবং রাজাদের কাছে এক দেবীর উদ্দেশ্যে মন্দির

নির্মানের আদেশ দিলে তখনকার বিত্তশালী বণিককুল এই মন্দির নির্মানে তৎপর হন৷ অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে সন্তানহীন এক রাজদম্পতি শিবের উদ্দেশ্যে পুত্রলাভের জন্য যজ্ঞ করেন৷ পরবর্তীতে তাদের একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয় যিনি সমস্ত রাজত্বের দায়িত্ব নেন এবং বিশ্বজয় করেন৷ পরে তার সাথে ভগবান ভিবের সাক্ষাতে তিনি নিজরূপ বুঝতে পেরে তাকে বিবাহ করলে প্রজাগণ তার পরাক্রমশীলতাকে স্মরণ করে মাদুরাইতে পার্ব্বতীদেবী রূপে তার পূজা করেন ও মন্দিরটি নির্মান করেন৷ এরকম অপ্রামাণ্য ইতিহাসগুলিকে বাদ দিয়েও পণ্ডিতগণ মাদুরাই শহর থেকে সামান্য দূরে সমকালীন বিভিন্ন নথিপত্র ও শিলালেখ থেকে মন্দির ও মন্দির নির্মানের সম্ভাব্য ইতিহাস খুঁজে পান৷ দ্রাবিড় সভ্যতার রাজবংশ ও তাদের রাজত্বের মধ্যে তুলনামূলক তথ্যালোচনার মাধ্যমে তারা খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিকের কিছু তথ্য পান৷