নকুলদানা | Nakul Dana

নকুলদানা | Nakul Dana

নকুলদানা Nakul Dana একপ্রকারের চিনির মিষ্টি । এটা ছোট ছোট বলের মত দেখতে হয় । সাধারণত পূজার কাজে ইহা ব্যবহৃত হয় । কবে নকুলদানায় জন্ম জানা নেই তবে শিশুকাল থেকে পূজোর প্রসাদ হিসেবে খাই।  নকুলদানা একই ধরণের মিষ্টি নয়। কারণ নকুলদানা সলিড চিনির তৈরি হয়, নকুল দানা শুধুমাত্র চিনির তৈরি হয়। এবার বলি এর নাম কি করে নকুলদানা হলো।

পঞ্চপান্ডবের চতুর্থ পান্ডব নকুল খাবার দাবার নিয়ে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসতেন। তিনি খই কে চিনির রসে ডুবিয়ে দেখতে গেছিলেন কেমন হয় খেতে। তো খেতে তো ভালো লাগলোই, তার সঙ্গে এটা দেখতেও বেশ আকর্ষক মনে হলো। তাই এই মিষ্টির নাম নকুলের নামেই রাখতে পরামর্শ দিলেন তাঁর সঙ্গী সাথীরা। তখন থেকেই এই মিষ্টি চলে আসছে খাদ্যরসিক নকুলের নাম বহন করে।

এ হল পরম বৈষ্ণব মিষ্টি। বৈষ্ণব পদাবলী, চৈতন্য চরিতামৃত থেকে রাধিকার শতনাম গীতাঞ্জলির নানা আচারে কাঁসার বাটিতে নকুলদানা নিবেদনের খুঁটিনাটি রয়েছে।’’ ওড়িশার শ্রীপটের রাধাকৃষ্ণ থেকে মল্লিকদের গৃহদেবতার নিত্যসেবায় অতিআবশ্যিক তার উপস্থিতি। জগন্নাথের নিদ্রাভঙ্গে বাল্যভোগে মাখন-মিছরিযোগে নকুলদানা, একটু বাদেই জলপানি ভোগে রুপোর পাত্রে পান-সুপুরি-ছোলা-আদা-মিছরির সঙ্গী নকুলদানা কিংবা বৈকালিক ভোগেও হরির লুঠের বাতাসার সহচর সেই নকুলদানাই।

‘‘নকুলদানা আগেও থাকলেও এই ধবধবে চিনির লজেন্সের গুলি, ইংরেজরা চিনির কল বসানোর পরেই হয়েছে। গত শতকেও গান গেয়ে ঘুঙুর পরে নকুলদানা বিক্রি করতেন শহুরে ফেরিওয়ালারা।’’ বাস্তবিক, চিনির মণ্ড হিসেবে নকুলদানাকে চিনলেও ছোলা-বাদামযোগে দানা পাকিয়ে নকুলদানাও এক সময়ে সহজলভ্য ছিল।‘‘নকুল মানে ছোট! আবার মুখরোচক খাদ্যবস্তুও। ভারতচন্দ্রেও কিন্তু নকুলদানার উল্লেখ রয়েছে।’’ 

 গোটা বাংলায় প্রায় ২৫০০ কদমা বাতাসা ও নকুলদানা তৈরির ছোট ‘কারখানা’ রয়েছে। বর্ধমানের নীলপুর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর, গড়িয়া-বেলেঘাটা, উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রচুর কারিগর বাতাসা-নকুলদানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। দেশ জুড়েই ভাল চাহিদা থাকা সত্বেও বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে তেমন ভাবে বাজারজাত করা যাচ্ছে না। দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নকুলদানার চাহিদা রয়েছে। হাবে তৈরি হওয়া কদমা নকুললদানা বাতাসা আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলত কারিগর ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন খাদি গ্রামোদ্যোগের কর্তারা।