এবার বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদ গোলবাড়ির কষা মাংস ।

আজ বাংলা : এবার বাড়িতে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদ গোলবাড়ির কষা মাংস । গোলবাড়ি, কিন্তু বাড়িটি গোল নয়। পুরোনো কলকাতার গন্ধ লেগে আছে গোলবাড়ির দেওয়াল জুড়ে। ক্ষুদে ভোজনপ্রিয় থেকে সত্তরোর্দ্ধ প্রবীণ, কষা মাংসে মজে আছেন প্রত্যেকে। গোলবাড়ির কথা বললেই ‘গোলবাড়ির কষা মাংস’-র কথা আমাদের মনে আসবেই।এখানকার স্পাইসি, গ্রেভি কষা মাংসর স্বাদ খাঁটি বাঙালি মাংসের ঝোলের কথাই মনে করায়। অসম্ভব সুস্বাদু এই মাংসের রেসিপি দীর্ঘ ৯৫ বছর ধরে তার জনপ্রিয়তা বজায় রেখে চলেছে। অরোরা পরিবার তিন পুরুষ ধরে এই দোকানের দায়ভার সামলাচ্ছেন।
অরোরা, মূলত পাঞ্জাবি একটি পরিবার। তবে তাঁদের রান্নার মধ্যে পাঞ্জাবি গন্ধের চেয়েও পাওয়া যাবে বাঙালি স্বাদ। আর এই স্বাদের মধ্যেই জুড়ে আছে ৯৫টা বছর। বাঙালির পাল্টে যাওয়া বেঁচে থাকা, পাল্টে যাওয়া স্বাদ- সবকিছুর সাক্ষ্য বহন করে চলেছে শ্যামবাজারের গোলবাড়ি। শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে বিধানসরণির রাস্তায় পড়বে এই দোকান। দম বন্ধ করা পরিবেশে ওই ছোট্ট দোকানটায় চেপেচুপে বসে থাকেন একদল খাদ্যপ্রিয় বাঙালি। কখনও কলেজ ফেরতা যুবক-যুবতী, কখনও অফিস ফেরতা কলিগ যুগল, কখনও সান্ধ্য-আড্ডায় প্রবীণ নাগরিকদের ভিড়।
গোলবাড়ির অন্যান্য জনপ্রিয় আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে ফিশফ্রাই, চিকেন কাটলেট, ব্রেনচপ এবং এগ কাটলেট। তবে গোলবাড়ি মানেই কষা মাংস। ঠিক আমাদের বাড়ির মতো নয়। এর রং অনেকটা কালচে। মাংসের চর্বি গলিয়ে গ্রেভির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তারফলে আইটেমের স্বাদ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মাংসের দাম বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দোকানের কষা মাংসের দামও বদলে যায়। এই মুহূর্তে যার দাম ২৪০ টাকার কাছাকাছি। ১৯২৩ সালে মিত্র শ্যামবাজার এলাকায় এই রেস্তোরাঁ নির্মিত হল, নাম দেওয়া হল গোলবাড়ি।
দোকানে আসতে থাকল একের পর এক সুস্বাদু খাবার, তেমন তার বাহারি সব নাম। আজ এই ফিউশনের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কত পুরোনো দোকান, ক্যাফে। কিন্তু ওই পায়রার খোপের মতো ছোট্ট গোলবাড়ি মিত্র সমানভাবে তার জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে। নামে গোলবাড়ি হলেও প্রকৃত অর্থে এই বাড়ি গোল নয়। ফুটপাত থেকে সিঁড়ি বেয়ে একটু নিচে নেমে যেতে হবে। আজকের প্রজন্ম একবার হলেও ঢুঁ মেরে আসে- আড্ডার সঙ্গে কষা মাংস। সন্ধের ‘বাড়ি’ এইভাবে জমে ওঠে বারোমাস।
প্রায় শতবর্ষ ধরে কলকাতার মানুষজনকে পাঁঠার কষা মাংস খাওয়াচ্ছে গোলবাড়ি। স্বাদে- আল্লাদে গোলবাড়ির কষা মাংস একমেবদ্বিতিয়ম্। তুলনাহীন। প্রতিটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁর নিজস্ব রেসিপি থাকে। কোনও খাবার রান্না আর পরিবেশন করার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও থাকে। আর সেই বিশেষত্ব চোখে পড়লেও, তার রহস্য সবাই জানতে পারেন না, বলা ভাল জানতে দেওয়া হয় না। এটিই ওই রেস্তোরাঁ ও ওই বিশেষ পদটির ইউএসপি।গোলবাড়ির কষা মাংস তেমনই এক অতুলনীয় রেসিপিতে প্রস্তুত করা হয়।তেলে ভাসে নরম, তুলতুলে মাংস।
উপকরণ : ১ কেজি পাঁঠার মাংস,দুটো বড় পেঁয়াজ সোরু করে কুচানো , দু চামচ রসুন বাটা ২ চামচ আদা বাটা, ১ চা-চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা,৩ চামচ জিরেগুঁড়ো ,২ চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, তিন চামচ টক দই ভালো করে ফেটানো ,নুন স্বাদ মত, দু'তিনটে এলাচ, দারচিনি একটুকরো, তিন-চারটে লবঙ্গ, তিনটে শুকনো লঙ্কা, দুটো তেজপাতা, এককাপ সরষের তেল, এক কাপ পাকা পেঁপে বাটা , এক চামচ পাঁচফোড়ন ।
প্রণালী : পাঁঠার মাংস টা কে পাকা পেঁপে বাটা দিয়ে চার ছয় ঘণ্টা মেরিন্যাট করে রাখতে হবে। একটা বড় কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে গরম হয়ে এলে তার মধ্যে তিনটে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, পাচফোরন, এলাচ এবং লবঙ্গ ও দারচিনি দিতে হবে।সুন্দর গন্ধ বেরোলো পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিতে হবে । দশ পনের মিনিট রান্না করার পর মাংসটার রং পরিবর্তন করে কালচে হতে শুরু করবে ।
কিছুক্ষণ পরপরই কিন্তু মাংসটাকে খুন্তি দিয়ে নিয়ে যেতে হবে ,যাতে তলায় লেগে না যায়।তারপর এক কাপ গরম জল দিতে হবে । আর পাত্রটা ঢাকা দিয়ে দিতে হবে তারপর গ্যাস একেবারে কমিয়ে রাখতে হবে । এভাবে দু'ঘণ্টা রান্না করতে হবে । মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে নিলে নিতে হবে । এরপর একটা আলাদা পাত্রে আদা বাটা রসুন বাটা জিরেগুঁড়ো একসাথে মিসাতে হবে ।
অন্য একটা পাত্রে ২ চামচ সরষের তেল গরম করে তাতে ওই মশলার মিশ্রণটা দিয়ে দিতে হবে । তারপর সেটা রান্না হতে থাকা মাংসের উপর ঢেলে দিয়ে ভালো করে আবার নাড়তে হবে। তারপর তাতে লঙ্কাগুঁড়ো আর জল ঝরানো ফেটানোর টকদই মেশাতে হবে। আরো আধঘণ্টা এইভাবে রান্না করতে হবে। তারপর মাংস থেকে তেল ছাড়তে শুরু করলে মাংসের উপর গরম মশলা ছড়িয়ে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে । কিছুক্ষণ পর গ্যাস থেকে নামিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু গোলবাড়ির কষা মাংস । যা পরোটা দিয়ে খেতে অসাধারন লাগে ।