নারহোয়েল| বিশ্বে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী সামুদ্রিক ইউনিকর্ন নারহোয়েল|

নারহোয়েল| বিশ্বে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী সামুদ্রিক  ইউনিকর্ন নারহোয়েল|

মানুষের মধ্যে প্রচলিত হাজার হাজার বছরের পুরোনো অনেক কল্পকাহিনীর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ইউনিকর্ন। তবে ইউনিকর্ন যে শুধুমাত্র কল্পকাহিনী তা নয় কারণ ফ্রান্সের লাস্কক্স গুহায় খ্রীস্টপূর্বাব্দ ১৫০০ বছরের ইউনিকর্নের চিত্র পাওয়া যায়। মার্কো পোলো ভেবেছিলেন, বিশ্বভ্রমণে তিনি ইউনিকর্নের সঙ্গে বহুবার মিলিত হয়েছেন। রেকর্ড বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, ইউনিকর্ন খুবই কুৎসিত প্রাণী। আমরা যেভাবে উপস্থাপন করি, সেরকম তারা নয়। তিনি মূলত গণ্ডারদের দেখে এমন মন্তব্য করেছিলেন।

বাস্তবে পৃথিবীতে ঘোড়া সদৃশ ইউনিকর্ন না থাকলেও, উত্তর মহাসাগরে এক সামুদ্রিক ইউনিকর্নের বসবাস।   এর বৈজ্ঞানিক নাম “Monodon Monoceros” যাকে আমরা বলে থাকি  “নারহোয়েল” narwhal। নারহোয়েল মূলত এক প্রজাতির তিমি। এরা এদের শিং এর জন্যই বেশি বিখ্যাত। তবে ড্রিল মেশিনের সূচের মতো পেঁচানো লম্বা এই অঙ্গটি আসলে নারহোয়েলের দাঁত  শিং নয়। শুধুমাত্র পুরুষ নারহোয়েলের এই দাঁত গজায়। ধারণা করা হয় নারী নারহোয়েলকে আকর্ষণ করতে এবং নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে এই দাঁতের দরকার হয়। নারহোয়েলের আয়তন প্রায় ২০ ফুট লম্বা এবং প্রায় ১.৫ টন বিশালাকার ওজনের হয়ে থাকে। এদের সামনের দিকের দাঁতটি ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

আর্কটিক মহাসাগরের বরফ কাটতেও এই দাঁত ব্যবহার করা হয়। নারহোয়েল তিমির মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর্কটিক মহাসাগরের গ্রিনল্যান্ড, কানাডা আর রাশিয়া অঞ্চলে দেখা যায় এদের। আকারে একটি প্রাপ্তবয়স্ক নারহোয়েল ১৩ থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে আর ওজন হয় ৮০০-১৬০০ কেজি। নারহোয়েলের একটি মজার ব্যাপার হল এদের গায়ের রং দেখেই এদের বয়স বলে দেওয়া সম্ভব। যেমন–

  1. শিশু নারহোয়েলের রং নীল- ধুসর
  2. কৈশোর বয়সে এদের রং কালচে নীল
  3. প্রাপ্তবয়স্কদের রং ধুসর
  4. বুড়ো নারহোয়েলের গায়ের রং শুভ্র সাদাসাদা

 

এরা খাবার হিসেবে চিংড়ি, স্কুইড ও ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করে। ডলফিনের মতই এরা শিকার ধরার কাজে ইকোলোকেশন ব্যবহার করে থাকে। মেরু অঞ্চলের বিভিন্ন শিকারী এবং মেরু ভল্লুকের শিকারে পরিণত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সঙ্কটের কারনে এদের বিচরন অনেকাংশে কমে গিয়েছে এবং ধীরে ধীরে এই ইউনিকর্ন প্রানীটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।