Durga Puja| প্রাচীন বড়দেবী পুজোর অন্যতম উপকরণ নররক্ত

Durga Puja| প্রাচীন বড়দেবী পুজোর অন্যতম উপকরণ নররক্ত

রাজা নেই। নেই রাজপাট। তাতে কি। রাজ আমলের নিয়ম এখন অক্ষুন্ন, এই জেলার পুজো পার্বন গুলিতে৷ রাজআমলের সেই প্রাচীন রীতি মেনে দেবীর প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। আনুমানিক ১৫৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই পুজো শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। রাজার স্বপ্নাদেশ মত দেবী দুর্গার একেবারেই ভিন্ন রুপ। দেবী রক্তবর্না ও সুবিশাল। দেবীর বাহন বাঘ। দেবীর দুপাশে লক্ষী গনেশ স্বরস্বতী কার্তিক নেই ৷

দেবীর দুপাশে আছে জয়া ও বিজয়া। দেবীকে তুষ্ট করতে মহারাজা নরনারায়নের আমল থেকে শুরু হয়েছিল, নরবলি প্রথা ৷ তবে কিছু বছর পর সেই নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবের কারনে এই নরবলি বন্ধের পর ফের সেই প্রথা চালু কিন্তু উনবিংশ শতকের শুরুতে এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। রাজ আমলের ইতিহাস থেকে জানা যায় মহারাজা শীবেন্দ্র নারায়ন তার আমলে নর বলির ভয়াবহতার কথা শুনে তা বন্ধ করেছিলেন।

এরপর থেকেই নরবলি বন্ধ হলেও নর রক্তে ভেজানো পুতুল বলি দিয়ে তুষ্ট করা হয় বড় দেবীকে। তাই অষ্টমীর রাতে ‘গুপ্তপুজোয়’ পুরোহিত ও রাজ পরিবারের প্রতিনিধির সামনে কনে আঙুল চিরে রক্ত দেন শিবেনবাবু। প্রায় তিন দশক ধরে এটাই তাঁর অষ্টমী পুজোর রুটিন। বংশানুক্রমিক ভাবে মেনে আসা দায়িত্ব পালনে মুখিয়ে আছেন তিনি। চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা পুতুল তাঁর ওই রক্তে ভিজিয়েই প্রতীকি বলি দেওয়া হবে। জনশ্রুতি রয়েছে, বড়দেবীর পুজোয় একসময় নরবলির রেওয়াজ ছিল।

গবেষকদের একাংশ অবশ্য বলেন, এ নিয়ে প্রকৃত তথ্য নেই। তবে অনেকের অনুমান নরবলি বন্ধের পরেই ওই প্রতীকি বলি হচ্ছে। কোচবিহারের কালজানি গ্রামে শিবেনবাবুর বাড়ি। বাণেশ্বরে দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ডের আওতাধীন একটি মন্দিরে ‘দেউরি’র কাজ করেন। ফি বছর অষ্টমীর দিন উপোস থেকে রাতে রক্ত দিতে শহরের দেবীবাড়ি মন্দিরে ছুটে আসেন। যতদিন শরীর দেবে ততদিন পূর্বসূরীদের ন্যস্ত কর্তব্য পালন করতে চান।

রাজাদের আমলের প্রাচীন পুজোর ঐতিহ্য বজায় থাক, সেটাও মনেপ্রাণে চান পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই প্রৌঢ়। শিবেনবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজেও প্রায় তিন দশক ওই দায়িত্ব পালন করছি। বংশ পরম্পরাতেই বড়দেবীর পুজোয় ওই রক্ত দিচ্ছি। পুজোর ঐতিহ্য ভবিষ্যতেও জারি থাকুক সেটাও চাই। নইলে যদি পাছে মা কূপিত হন।’’ তাই এ নিয়ে চিন্তাও আছে তাঁর। শিবেনবাবু বলেন, আমি বিয়ে করিনি।

সন্তানের প্রশ্নও নেই। ভাই, ভাইয়ের ছেলেরা কি করবে জানি না। কোচবিহার রাজ পরিবারের সর্দসরা অবশ্য বলেন, ‘‘বড়দেবী বড়ই জাগ্রত। সমস্যা হলে তিনিই সমাধানের পথ দেখাবেন।’’ পুজোর আয়োজক কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, কথিত আছে, মহারাজা নরনারায়ণের স্বপ্নে দেখা দেবীরূপ প্রতিমায় উঠে এসেছে। বড়দেবীর মূর্তি প্রচলিত দুর্গার থেকে খানিকটা ভিন্ন। দেবী রক্তবর্ণা। বাহন বাঘ ও সিংহ। দেবীর দু’দিকে থাকে জয়া ও বিজয়া। পুজোয় মোষ থেকে পাঁঠা, হাঁস নানা বলির রেওয়াজও রয়েছে। পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী পুজো হয়। সব ঘিরে সেখানে মেলা বসে যায়। কোচবিহার তো বটেই অসম সহ উত্তরবঙ্গ এমনকি দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ যান দেবীর পুজো দেখতে।