পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য: খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য: খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

মদনমোহন মালব্য (১৯৬১—১৯৪৬) ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। ১৮৬১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশের (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য) এলাহাবাদ শহরে মদনমোহন মালব্যের জন্ম। তিনি এক গৌড় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

তাঁর পিতার নাম পণ্ডিত ব্রিজ নাথ ও মাতার নাম মুনা দেবী। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন অধুনা মধ্যপ্রদেশের মালব (উজ্জয়িনী) অঞ্চলের সংস্কৃত পণ্ডিত। সেই থেকে তাঁরা ‘মালব্য’ নামে পরিচিত। তাঁদের প্রকৃত পদবী ছিল চতুর্বেদী। মদনমোহন মালব্যের পিতা ছিলেন সংস্কৃত সন্ডিত। তিনি ভাগবত পুরাণ পাঠ করতেন।

তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চার বারের সভাপতি। তাঁকে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য বলা হয় এবং মহামনা সম্মানে ভূষিত করা হয়। ১৯১৬ সালে মদনমোহন মালব্য বারাণসীতে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় বা বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বি.এইচ.ইউ) প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১৫ সালের বি.এইচ.ইউ আইন অনুসারে স্থাপিত। এটি এশিয়ার বৃহত্তম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কলা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, কৃষিবিজ্ঞান, চারুকলা, আইন ও প্রযুক্তি বিভাগে ৩৫,০০০-এরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন।

মদনমোহন মালব্য ১৯১৯ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। মদনমোহন মালব্য চার বার (১৯০৯, ১৯১৩, ১৯১৯ ও ১৯৩২ সাল) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে হিন্দু মহাসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হিসেবে যোগ দেন। মদনমোহন মালব্য ছিলেন দ্য ভারত স্কাউট অ্যান্ড গাইডসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশেষ প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য লিডারের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৯ সালে এটি এলাহাবাদে প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে এই পত্রিকার হিন্দি সংস্করণ হিন্দুস্তান দৈনিক প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর মদনমোহ মালব্যের ১৫৩তম জন্মবার্ষিকীর আগের দিন তাঁকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন (মরণোত্তর) দিয়ে সম্মানিত করা হয়। 

 ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মদনমোহন মালব্য কলকাতায় দাদাভাই নৌরজির সভাপতিত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। এখানে তিনি কাউন্সিলে ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিয়ে বক্তৃতা দেন। তাঁর ভাষণে নৌরজি খুশি হননি। সেই সময় এলাহাবাদের নিকটস্থ কালাকঙ্করের শাসক রাজা রামপাল সিং হিন্দুস্তান নামে একটি হিন্দি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি পত্রিকাটিকে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত করার জন্য একজন যোগ্য সম্পাদক খুঁজছিলেন। মদনমোহন মালব্যের ভাষণে তিনিও খুশি হননি।

কিন্তু পত্রিকা সম্পাদনার জন্য তিনি তাঁকেই প্রস্তাব দেন। তাই ১৮৮৭ সালের জুলাই মাসে মদনমোহন মালব্য শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে সেই জাতীয়তাবাদী দৈনিকটির সম্পাদনার কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি আড়াই বছর কাজ করেছিলেন। এরপর তিনি এলাহাবাদ ফিরে এসে এল.এল.বি পড়া শুরু করেন। সেই সময় এলাহাবাদে তিনি দি ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন নামে একটি ইংরেজি দৈনিকের সহ-সম্পাদনার কাজ শুরু করেন।

আইন পড়া শেষ করে তিনি ১৮৯১ সালে এলাহাবাদ জেলা আদালতে ওকালতি শুরু করেন। পরে ১৮৯৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৯০৯ ও ১৯১৮ সালে মদনমোহন মালব্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলে। তিনি ছিলেন একজন নরমপন্থী নেতা। ১৯১৬ সালের লখনউ চুক্তি অনুসারে মুসলমানদের জন্য পৃথক আইনসভার বিরোধিতা করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁকে "মহামনা" সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯১১ সালে শিক্ষাবিস্তার ও সমাজসেবার জন্য তিনি তাঁর লাভজনক আইনব্যবসা চিরকালের জন্য পরিত্যাগ করেন।

সন্ন্যাস জীবন যাপনের জন্য তিনি সমাজসেবার কাজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। কিন্তু চৌরিচৌরার ঘটনায় ১৭৭ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর ফাঁসির হুকুম হলে তিনি আদালতে তাঁদের হয়ে সওয়াল করেন এবং তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করেন। ১৯১২ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। এই কাউন্সিল ১৯১৯ সালে কেন্দ্রীয় আইনসভায় রূপান্তরিত হলে তিনি ১৯২৬ সাল পর্যন্ত সেখানকার সদস্য থাকেন। মদনমোহন মালব্য অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

যদিও তিনি আবেদন-নিবেদনের রাজনীতি ও খিলাফত আন্দোলনে কংগ্রেসের যোগদানের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনি মতিলাল নেহেরু, জওহরলাল নেহেরু ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করেন। ১৯৩২ সালের ৩০ মে, বিলাতি দ্রব্য বর্জন করে ভারতীয় দ্রব্য কেনার আবেদন জানিয়ে তিনি একটি ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

যদিও আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ১৯৩২ সালের ২৫ মে তিনি দিল্লিতে অন্যান্য ৪৫০ জন কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে গ্রেফতার হন। কিন্তু এই বছরই সরোজিনী নাইডু গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি দিল্লিতে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালে কলকাতায় মদনমোহন মালব্য আবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার আগে মদনমোহন মালব্যই একমাত্র নেতা যিনি চার বার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৩২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ড. ভীমরাও রামজী আম্বেদকর (হিন্দুদের অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি) ও মদনমোহন মালব্যের (হিন্দুদের অন্যান্য শ্রেণির প্রতিনিধি) মধ্যে পুনা চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে স্থির হয় প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে হিন্দুদের অনগ্রসর শ্রেণিগুলির জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে এবং তা হবে আইনসভার মধ্যেই, এর জন্য পৃথক আইনসভা গঠিত হবে না। এর ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে অনগ্রসর শ্রেণিগুলিকে ৭১টি আসন দিয়েছিলেন, তার বদলে এই শ্রেণিগুলি আইনসভায় ১৪৮টি আসন পায়।

এই চুক্তির পর সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার আইনটি চুক্তি অনুযায়ী সংশোধিত হয়। এই চুক্তিতে ব্যবহৃত "অবদমিত শ্রেণি" কথাটি ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ও ১৯৫০ সালের ভারতীয় সংবিধানে "তফসিলি জাতি ও উপজাতি" শব্দে পরিণত হয়। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা আইনসভার বিরোধিতায় মদনমোহন মালব্য মাধব শ্রীহরি আনের সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেস ন্যাশানালিস্ট পার্টি গঠন করেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে এই দল কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১২টি আসন পেয়েছিল।

১৮৮৭ সালে হিন্দি দৈনিক হিন্দুস্তান-এ সম্পাদনার মাধ্যমে মদনমোহন মালব্য তাঁর সাংবাদিক কর্মজীবন শুরু করেন। কালাকঙ্করের (অধুনা প্রতাপগড় জেলা, উত্তরপ্রদেশ) রাজা রামপাল সিং ১৮৮৬ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে তাঁর ভাষণ শুনে ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে এই পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ১৮৮৯ সালে তিনি দি ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন পত্রিকার সম্পাদনার কাজ শুরু করেন।

দি ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন লখনউয়ের অ্যাডভোকেট পত্রিকার সঙ্গে মিশে গেলে মদনমোহন মালব্য তাঁর নিজস্ব হিন্দি দৈনিক অভ্যুদয়-এর সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯০৭ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। ১৮৮৩-৮৪ সালের মধ্যে ‘মকরন্দ’ ছদ্মনামে লেখা তাঁর শায়েরি বা হিন্দি কবিতাগুলি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত হরিশ্চন্দ্র চন্দ্রিকা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

হিন্দি প্রদীপ পত্রিকায় তাঁর ধর্মীয় ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে রচিত প্রবন্ধগুলিও প্রকাশিত হয়। ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার মুদ্রণ আইন ও সংবাদপত্র আইন পাস করতে চাইলে মদনমোহন মালব্য এলাহাবাদে একটি সর্বভারতীয় সমাবেশ ডেকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর তিনি একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করে সেই আন্দোলনকে সারা ভারতে ছড়িয়ে দিতে চান।

এরই ফলশ্রুতিতে মতিলাল নেহেরুর সাহায্যে ১৯০৯ সালে তিনি লিডার পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯০৯ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক এবং ১৯১১ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকার সভাপতি থাকেন। ১৯১০ সালে মদনমোহন মালব্য হিন্দি পত্রিকা মর্যাদা চালু করেন। ১৯২৪ সালে মদনমোহন মালব্য বিশিষ্ট নেতা লালা লাজপত রাই ও এম. আর. জয়কার ও শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লার সাহায্যে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা অধিগ্রহণ করে এটিকে অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেন।

মদনমোহন মালব্য ৫০,০০০ টাকা তুলেছিলেন এই পত্রিকাটিকে বাঁচাতে। এই টাকার বেশিরভাগটাই দিয়েছিলেন ঘনশ্যামদাস বিড়লা। ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত মদনমোহন মালব্য ছিলেন এই পত্রিকার চেয়ারম্যান। ১৯৩৬ সালে তাঁরই উদ্যোগে এই পত্রিকার হিন্দি সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বিড়লা পরিবার এই পত্রিকার মালিক। ১৯৩৩ সালে মালব্য কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনাতন ধর্ম নামে একটি ধর্মীয় পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন

পণ্ডিত মদনমোহন মালব‍্যর উদ্যোগে হরিদ্বারে কুম্ভমেলার সময় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই এপ্রিল গঠিত হয় “সারা ভারত হিন্দু মহাসভা।” সহযোগিতায় ছিলেন ভাই পরমানন্দ, মুঞ্জে প্রমুখ। আর এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত উল্লেখযোগ্য ব‍্যক্তিরা হলেন— আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, তেজবাহাদুর সপ্রু, মতিলাল ঘোষ, লালা হংসরাজ, মুন্সিরাম ওরফে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ, রামভুজ দত্ত, ভগবান দত্ত। বিহার, পাঞ্জাব, যুক্তপ্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানের হিন্দু জমিদার, ধনী, ব‍্যবসায়ী, আইনজীবীরা এই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন।

হিন্দু মহাসভার শ্লোগান ছিল— হিন্দ্-হিন্দি-হিন্দুত্ব। হিন্দু জনগণের সঙ্গে হিন্দি ভাষার মেলবন্ধন, গো-রক্ষা আন্দোলন, আর্যসমাজের শুদ্ধি আন্দোলন এবং সেই সঙ্গে নিম্ন বর্ণের হিন্দু সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ছিল হিন্দু মহাসভার কর্মসূচি। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে সেপ্টেম্বর অনগ্রসর হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি ড: বি. আর. আম্বেদকর ও অন্যান্য হিন্দু সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে পণ্ডিত মদনমোহন মালব‍্যর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পুণা চুক্তি।

এই চুক্তিতে ঠিক হয়, দেশের প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে অনগ্রসর হিন্দু শ্রেণির জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে এর জন্য কোনো পৃথক আইনসভা তৈরি হবে না। ইতিপূর্বে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম‍্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে অনগ্রসর হিন্দু শ্রেণির জন্য ৭১ টি আসন বরাদ্দ করেছিলেন। এবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৮ টি। আর এই পুণা চুক্তিতে ব‍্যবহৃত “অবদমিত শ্রেণি” শব্দবন্ধটি উঠে যায় এবং তার বদলে ব‍্যবহৃত হয় “তফসিলি জাতি ও উপজাতি।” পরবর্তীকালে ১৯৫০-এর ভারতীয় সংবিধানেও এই পরিবর্তিত শব্দবন্ধ ব‍্যবহৃত হয়।

” সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা” ব‍্যবস্থায় ভারতের সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক আইনসভা গঠনের বিরোধিতা করে মাধব শ্রীহরি আনের সঙ্গে কংগ্রেস ছাড়েন পণ্ডিত মদনমোহন মালব‍্য। তৈরি করেন “কংগ্রেস ন‍্যাশনালিস্ট পার্টি।” কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় আইনসভার নির্বাচনে এই দল ১২ টি আসনে জয়ী হয়। ১৯১৬ সালের লক্ষ্মৌ চুক্তি অনুসারেই মুসলমানদের জন্য পৃথক আইনসভার বিরোধিতা করেন পণ্ডিত মদনমোহন মালব‍্য।১৯১৮ সালে দিল্লিতে আয়োজিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার সময় মদনমোহন মালব্য মুণ্ডকোপনিষদ্‌ থেকে সত্যমেব জয়তে (অর্থাৎ, সত্যেরই জয় হয়) শব্দটিকে নীতিবাক্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এটি স্বাধীন ভারতে জাতীয় নীতিবাক্য হয়।