হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থান

হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থান

হুগলি জেলা Hooghly district  (পুরনো বানানে হুগলী জেলা) হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক জেলা। চুঁচুড়া শহরে এই জেলার সদর দফতর অবস্থিত। হুগলি জেলা চারটি মহকুমায় বিভক্ত: চুঁচুড়া সদর, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ। প্রাচীনকালে সুহ্ম বা দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল হুগলি জেলা। নদী, খাল, বিল অধ্যুষিত এই অঞ্চল ছিল কৈবর্ত ও বাগদিদের আবাসস্থল।

এদের উল্লেখ রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, মনুসংহিতা এবং পঞ্চম অশোকস্তম্ভ লিপিতে। মৎস্য শিকারই ছিল এদের প্রধান জীবিকা। ১৪৯৫ সালে বিপ্রদাস পিল্লাই রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে হুগলি নামের উল্লেখ দেখা যায়। এর থেকে বোঝা যায় জেলার নামকরণ বিদেশীকৃত নয়। কারণ এই রচনা কালের ২২ বছর পর পর্তুগিজরা বাংলায় প্রবেশ করেছিল।

১৫৯৮ সালে রচিত আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থেও হুগলি নামের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ত্রিবেনীতে অবস্থিত জাফর খাঁর মসজিদ ও তার মাদ্রাসায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠা তারিখ থেকে অনুমান করা যায় ১২৯৮ সালে জেলার উত্তারংশ মুসলমান শাসনভুক্ত হয়েছিল। ত্রিবেনী ও সাতগাঁ(সংস্কৃতে সপ্তগ্রাম)পরে ছিল স্থানীয় মুসলমান শাসকদের সদর কার্যালয়।

সাতগাঁয়ে এই সময় কার একটা টাঁকশাল ছিল। ১৫১৭ সালে পর্তুগিজরা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বঙ্গদেশে প্রবেশ করে। ১৫৩৬ সালে সুলতান মাহমুদ শাহের দেওয়া সনদের বলে পর্তুগিজরা ব্যবসা শুরু করে সপ্তগ্রামে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে পলি জমে সরস্বতী নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে ভাগীরথীর খাতে এই প্রবাহ পরিবর্তিত হলে পর্তুগিজরা ভাগীরথীর তীরে হুগলি বন্দর গড়ে তোলে।

১৮২৫ সালে ওলন্দাজ ও ১৬৩৮ ইংরেজ এই বন্দরে ব্যবসা শুরু করেছিল। ওলন্দাজরা পরে চুঁচুড়ার দখল পায় নবাবদের আনুকূল্যে। ১৮২৫ সালের ৭ মে চুঁচুড়া ইংরেজদের দখলে আসে। চুঁচুড়ার নিকটবর্তী চন্দননগর ছিল ফরাসিদের দখলে। ১৮১৬ সালের পর থেকে চন্দননগর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ফরাসিদের হাতে ছিল। ১৯৫০ সালের ২রা মে এই শহর ভারত সরকারের কর্তৃত্বাধীন আসে। আর শ্রীরামপুর নগরী ছিল ১৭৫৫ থেকে ১৮৪৫ পর্যন্ত দিনেমারদের দখলে। অর্থনীতি ও শিল্পে উন্নত হলেও জেলার ৫০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নিরভারশীল। সমগ্র আরামবাগ মহকুমা ও জাঙ্গিপাড়া, পাণ্ডুয়া, ধনিয়াখালি এগুলি কৃষিভিত্তিক। এছাড়াও সপ্তগ্রাম বর্তমানে আদিসপ্তগ্রাম, ব্যান্ডেল ও হুগলি ছিল পোর্তুগিজদের উপনিবেশ। 

হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থান  

চঁচুড়া- এটি কলকাতার হুগলি জেলার একটি ছোট্ট শহর, যা ইতিহাসের চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রকাশ করে। ১৭ শতকের প্রথম দিকে ডাচরা মশলা, আফিম, লবণ এবং মাশাল্লিনের ব্যবসা করার জন্য সেখানে বসতি স্থাপন করে। আজ, এটি একটি বহু-সাংস্কৃতিক শহর যা চিন্সাহারের ডাচদের শেষ ইতিহাসকে তুলে ধরে। এখানে যখন, বিখ্যাত ডাচ কবরস্থান যা প্রায় ৪৫ টি কবরস্থানে যান,১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীনতম একের সাথে।

ব্যান্ডেল- ব্যান্ডেল পূর্বে একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল, যা চন্দননগরের কাছ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল, পরে এটি পরীক্ষার সময় আত্মসমর্পণ করে। তবে এই জায়গাটি শহর থেকে তার সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে সপ্তাহান্তে গন্তব্যস্থল হওয়ার জন্য জনপ্রিয়।

চন্দননগর- ভারতের ঔপনিবেশিক অতীতে প্রথমবারের মতো একটি চৌকস হয়ে উঠতে থাকা, চন্দননগরে পণ্ডুচ্চির মতোই প্রথম দর্শনে, এই জায়গা ভারতে অন্য কোনও স্বাভাবিক নগরের মত হবে। এই জায়গাটি একটি আকর্ষণীয় স্টপের জন্য তৈরি করে, যদিও এটি তার অতীতের গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। কয়েকটি ফরাসি ভবন এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পেরেছে এবং এই জায়গায় ফরাসি প্রভাব বিস্তারকারীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য লম্বা দাঁড়িয়ে আছে।

শ্রীরামপুর- হুগলি নদীর ডান তীরে কলকাতার ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ইতিহাসের শহর শ্রীরামপুর । শ্রীরামপুর ১৭২৫ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত ছিলো ডেনিশ উপনিবেশ, এবং পরিচিত ছিল ফ্রেডেরিক নগর, এখানকার তৎকালীন শাসক সেই ডেনিশ রাজার নামে।

তারকেশ্বর মন্দির- সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শিবের নামে উৎসর্গিত প্রাচীন মন্দির তারকেশ্বর মন্দির। মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান। হুগলি জেলায় অবস্থিত এই মন্দির দেখার জন্য সব বয়সের মানুষ ভ্রমণ করেন। তারকেশ্বর মন্দিরে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় মৌসুমী সময়। 

হাঙ্গেশ্বরী মন্দির- হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম বাঁশবাড়িয়ায় হাঙ্গেশ্বরী মন্দির অবস্থিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী কালীর নামে মন্দিরটি উৎসর্গিত। মন্দিরটি ৫ তলাবিশিষ্ট। হুগলির অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এটি। সনাতন ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থীদের হাঙ্গেশ্বরী মন্দিরে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। 

কামারপুকুর  বাংলার অন্যান্য গ্রামের মতোই কামারপুকুর গ্রামেও প্রাচীনকালে বহু হিন্দু দেবদেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মন্দিরের মধ্যে শিবমন্দিরের প্রাধান্য ছিল। শিবরাত্রি, গাজন, হরিবাসর ও হরিনাম সংকীর্তনে গ্রামের লোকের উৎসাহ ছিল সর্বাধিক। তবে বিষ্ণু, কালী, শীতলা, মনসা, বিশালাক্ষী ও ধর্মঠাকুর সমানভাবে পূজা পেতেন। এই ধর্মীয় উদারতার আবহাওয়াতেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিল। ১৮৩৬ থেকে ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত প্রায় সতেরো বছর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ একাদিক্রমে কামারপুকুরে ছিলেন। পরে দক্ষিণেশ্বরে চলে যান। কিন্তু মাঝেমধ্যেই কামারপুকুরে এসে থাকতেন।