পোস্ট অফিসের ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলা যায় মাত্র ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগে

দেশের নানা প্রান্তে ভারতীয় ডাকবিভাগের (India Post) পোস্ট অফিসের (Post Office) অভাব নেই! সুতরাং, এই জায়গায় এসে সবার আগে যে প্রশ্ন মাথাচাড়া দেয়, তা হল- পোস্ট অফিসের ফ্র্যাঞ্চাইজি (Post Office Franchise) পাওয়া যাবে কী করে? তার অনুমোদন পাওয়া কি আদতে সহজ? দেশে ১.৫৫ লক্ষ পোস্ট অফিস আছে ঠিকই, কিন্তু এমন অনেক জায়গাও আছে যেখানে এই পরিষেবা পাওয়া যায় না।
এই দিক থেকে বিচার করে ভারতীয় ডাকবিভাগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনৈক ব্যক্তিকে পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার অনুমোদন দেয়, যার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি উপার্জনও করতে পারেন। এর জন্য মাত্র ৫০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে স্ট্যাম্প, স্টেশনারির মতো নানা জিনিস বিক্রি করা যায়; স্পিড পোস্ট, মানি অর্ডারের মতো পরিষেবা দেওয়া যায়। আর এর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে পাওয়া যায় ভারতীয় ডাকবিভাগ নির্ধারিত কমিশন, লাভের টাকাটাও আসে সেখান থেকেই।
কারা এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবেন:
১. যে কোনও ব্যক্তি এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবেন।
২. কোনও প্রতিষ্ঠান, যেমন- পানের দোকান, মুদির দোকান, স্টেশনারি দোকানও এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবে।
৩. নতুন গড়ে ওঠা জায়গা বা শিল্পকেন্দ্রের সাপেক্ষে পলিটেকনিক কলেজ, অন্য কলেজ বা ইউনিভার্সিটিও এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবে।
কারা এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবেন না:
১. পোস্ট অফিসের কর্মচারীরা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবেন না।
২. অবশ্য, পোস্ট অফিসের কর্মচারীদের পরিবারের কোনও সদস্য যদি তাঁর আয়ের উপরে নির্ভরশীল হন এবং একত্রে বসবাস করেন, তাহলে তিনি এই পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারবেন।
পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে কী করতে হয়:
পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে হলে একটি ফর্ম জমা করতে হয়। নির্বাচিত ব্যক্তিদের এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে একটি MoU চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস এবং বয়সসীমা ১৮ বছর বলে ধার্য করা হয়েছে।
কী ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে:
জনৈক ব্যক্তি ফর্ম জমা করার পরে ১৪ দিনের মধ্যে ASP/SDI একটি রিপোর্ট পাঠায় সংশ্লিষ্ট দফতরে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধান ঠিক করেন যে কাকে পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, যে সব পঞ্চায়েত কেন্দ্রে পঞ্চায়েত সঞ্চার সেবা যোজনা প্রকল্পের অধীনে পঞ্চায়েত সঞ্চার সেবা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার অনুমতি পাওয়া যায় না।
পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে হলে কত টাকা জমা করতে হয়:
এক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ হল ৫০০০ টাকা। একটি পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি দিনে কত আয় করতে পারে, তার উপরে ভিত্তি করে এই অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়। ভবিষ্যতে আয় যত বাড়ে, সেই অনুসারে জমা টাকার অঙ্কে বদল আসে। সিকিউরিটি ডিপোজিট এক্ষেত্রে NSC হিসেবে নেওয়া হয়ে থাকে।
পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে কী কী কাজ হবে:
১. স্ট্যাম্প এবং স্টেশনারি বিক্রি
২. রেজিস্টার্ড আর্টিকেল পাঠানো
৩. স্পিড পোস্ট
৪. মানি অর্ডার- ১০০ টাকার কম হলে পরিষেবা মিলবে না
৫. পোস্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্স এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে
৬. ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা
৭. বিল/ট্যাক্স/জরিমানা আদায়
লাভের টাকা কী ভাবে আসবে: প্রত্যেকটি পরিষেবা পিছু ভারতীয় ডাকবিভাগ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন ধার্য করে রেখেছে, পোস্ট অফিস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের আয় সেখান থেকেই হবে। যেমন-
১. রেজিস্টার্ড আর্টিকেলের বুকিংয়ে পাওয়া যায় ৩ টাকা
২. স্পিড পোস্টের বুকিংয়ে পাওয়া যায় ৫ টাকা
৩. ১০০-২০০ টাকার মানি অর্ডারে ৩.৫০ টাকা
৪. ২০০ টাকার উপরে মানি অর্ডারে ৫ টাকা
৫. রেজিস্টার্ড আর্টিকেল এবং স্পিড পোস্টের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে হাজারের উপর বুকিংয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাং কমিশন
৬. স্ট্যাম্প যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তার অর্থমূল্যের ৫ শতাংশ কমিশন
৭. স্টেশনারি, মানি অর্ডার ফর্ম বিক্রির ক্ষেত্রে অর্থমূল্যের ৫ শতাংশ কমিশন
৮. রেভেনিউ স্ট্যাম্প, সেন্ট্রাল রিক্রুটমেন্ট ফি স্ট্যাম্প বিক্রি সমেত রিটেল সার্ভিস থেকে যা আয় হয়েছে তার ৪০ শতাংশ কমিশন