প্রতিমা পুরী এর জীবনী

প্রতিমা পুরী এর জীবনী

অল ইন্ডিয়া রেডিও স্টেশন এবং দূরদর্শনের প্রথম সংবাদ পাঠিকা ছিলেন প্রতিমা পুরী (Pratima Puri)। প্রসার ভারতীর একটি অংশ হিসাবে দূরদর্শন ১৯৫৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সংবাদ সম্প্রচার করে এবং সেই সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমা পুরী।  হিমাচল প্রদেশের সিমলার লাল পানি অঞ্চলের এক গোর্খা পরিবারে প্রতিমা পুরী জন্ম হয়। তাঁর জন্মগত নাম ছিল বিদ্যা রাওয়াত।

পরবর্তী কালে তাঁর নাম হয় প্রতিমা পুরী। প্রতিমা পুরী দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইন্দ্রপ্রস্থ মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করার পর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি সিমলায় কর্মরত ছিলেন। ঘোষিকা হিসাবে তাঁর কন্ঠ এবং সঞ্চালনা সেই সময় প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল বেতারে। এই সময়ে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় একটি দূরদর্শন চ্যানেল চালু করার।

১৯৫৯ সালে এদেশে প্রথম পথ চলা শুরু হয় দিল্লি দূরদর্শনের। তখন দূরদর্শন অল ইন্ডিয়া রেডিওর একটি অংশ ছিল। সংবাদ সঞ্চালনার তথা ঘোষিকা হিসাবে বেছে নেওয়া হয় প্রতিমা পুরীকে। এই কাজের প্রয়োজনেই তিনি সিমলা থেকে চলে আসেন দিল্লিতে। রাজধানী দিল্লিই ছিল তাঁর পরবর্তী জীবনের কর্মক্ষেত্র। ১৯৫৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ছোট একটি ট্রান্সমিটার এবং অস্থায়ী স্টুডিয়োর সাহায্যে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে দিল্লি দূরদর্শন বা ডিডি।

সেই সময় ইউনেসকোর তরফ থেকে ২০,০০০ ইউ.এস ডলার এবং ১৮০টি ফিলিপ্সের ট্রান্সমিটার সেট সাহায্য পাঠানো হয় যার মাধ্যমেই ভারতের সর্ববৃহৎ সম্প্রচার মাধ্যমের পথ চলা শুরু। ১৯৬৫ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিও স্টেশনের অংশ হিসাবে দিল্লি দূরদর্শন নিয়মিত সম্প্রচার শুরু করে। পাঁচ মিনিটের সংবাদ বুলেটিন পাঠ করতেন প্রতিমা। তখন দূরদর্শনের দর্শক সংখ্যা ছিল মুষ্টিমেয়। সেই স্বল্প পরিসরেও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং শ্রুতিমধুর কন্ঠের দ্বারা জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি।

খুব সাধারণ আটপৌরে বেশভূষায় প্রতিমা ছিলেন স্বতন্ত্র। কর্মজীবনে তিনি অনেক বিখ্যাত মানুষের ইন্টারভিউ নিয়েছেন যার মধ্যে তৎকালীন বিভিন্ন অভিনেতা – অভিনেত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ছিলেন। তবে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৬৫ সালে নেওয়া বিশ্বের প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের সাক্ষাৎকার। এটি ডিডি নিউজের ৫ মিনিটের সংবাদ বুলেটিনে সম্প্রচারিত হয়েছিল।

ষাটের দশকে সংবাদ পাঠের ক্ষেতে তুলনামূলক ভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হত সিনিয়রদের। সেই সময় মনে করা হত তাঁদের উপস্থিতি সংবাদের গুরুত্ব বজায় রাখবে। তখন প্রতিমা পুরী এবং গোপাল কওল ছিলেন দূরদর্শনের প্রধান মুখ। কিন্তু একসময় গোপাল কওল তাঁর মাথা মুন্ডন করিয়ে ফেলায় প্রযোজকদের সাথে মনোমালিন্য হয়। ফলে প্রযোজকরা তাঁকে বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

তাঁর জায়গায় ১৯৬৭ সালে দূরদর্শনে যোগ দেন সলমা সুলতান। ক্রমে তিনিই হয়ে ওঠেন প্রধান সংবাদ পাঠিকা। পরবর্তী কালে  প্রতিমা পুরীর জায়গায় তিনিই ছিলেন দূরদর্শনের প্রধান মুখ। সেই সময় দূরদর্শনের কর্মকর্তারা নতুন সংবাদ পাঠক বা পাঠিকাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে নতুন সঞ্চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিমা পুরীকে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি দূরদর্শনের পরবর্তী প্রজন্মের ঘোষক ও ঘোষিকাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।