রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব| জীবনের কিছু অলৌকিক ঘটনার সন্ধান রইল শেষ পর্বে

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব| জীবনের কিছু অলৌকিক ঘটনার সন্ধান রইল শেষ পর্বে

আজবাংলা   শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনের নানান দৈব ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় কমবেশি সকলেই সব ঘটনাই জানি আমরা, ঠাকুরের বিষয়ে। কিন্তু এমনও কিছু ঘটনার স্থান, কাল, কথা বা অমৃতবানী রয়ে গেছে, যেইগুলো হয়ত বাকি ঘটনার মত সামনে আসেনি।আমরা এই প্রতিবেদনের শেষ পর্বে যে পাঁচটি ঘটনা তুলে ধরতে চলেছে, এই ঘটনাগুলি সেই অর্থে সকলের সামনে সমান ভাবে আসেনি। এমন অনেকেই আছেন যারা যারা কিছুটা জানেন আবার কেউ সবটা। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই বিস্ময়কর পাঁচটি ঘটনা।

১} ১৮৩৫ সালে রামকৃষ্ণের পিতা ক্ষুদিরাম তীর্থ করতে গয়া গমন করেন। সেখানে গিয়ে এক রাত্রের মধ্যে ঘুমের মধ্যে তাঁর স্বপ্নে আবির্ভূত হন বিষ্ণুর অবতার। গদাধর। তখন স্বপ্নেই গদাধর বলেন যে, তিনি ক্ষু‌দিরামের সন্তান রূপে জন্ম নেবেন এই পৃথিবীতে। এই ঘটনার ঠিক এক বছর পরে জন্ম হয় গদাধর। 

২} গদাধর যখন ৮ বছরের তখন প্রতিবেশিনীদের সঙ্গে কামারপুকুরের অদূরে আনুড় গ্রামে বিশালাক্ষী দেবীর পুজো দিতে যাওয়ার সময়ে দেবীর নাম ধ্যানে গদাধরের আবার তন্ময় ভাব জাগে। সেইসময় গদাধরের চোখ থেকে জল গড়াতে থাকে।সন্ত্রস্ত মহিলারা একমনে বিশালাক্ষী দেবীকে স্মরণ করে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেবীর স্তব করার পরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে গদাধর।

৩} গদাধরের বয়স তখন ছয়। সেইসময় তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলা করতে গিয়ে গদাধরের চোখ চলে যায় নীল আকাশের দিকে। ঘন কালো মেঘের মধ্যে এক ঝাঁক বককে আকাশের মধ্যে উড়ে যেতে দেখে অবাক হয়ে পড়ে যায় একেবারে গদাধর।এর ঠিক কিছু পরে অজ্ঞান যায়। এরপর জ্ঞান ফেরার পরে দেখা যায়, সে একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনাকেই অনেকেই বাল্যবয়সের রামকৃষ্ণ ঠাকুরের জীবনের প্রথম ‘ভাবের সমাধি’ বলে মনে করা হয়।

৪} ঠাকুরের খুড়তুতো দাদা হলধারী কোনও কারণে ঠাকুরের প্রতি রেগে গিয়ে অভিশাপ দেন ঠাকুরকে, বলেন, ‘‘তোর মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে।’’ ঠিক এর কয়েকদিন পরে সত্যি সত্যিই ঠাকুরের মুখ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। হলধারী সহ সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।শেষে এক বয়স্ক সাধু ঠাকুরকে পরীক্ষা করে বলেন, আসলে হঠযোগ সাধনার চরম অবস্থা জড়সমাধিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। ফলে সুষুম্নাদ্বার খুলে গিয়ে রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছিল।এই অবস্থায় রক্ত মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে উপকারই হয়েছে তাঁর। নতুবা ঠাকুরের জড়সমাধি আর ভাঙত না। নিজের অভিশাপ বরে পরিণত হয়েছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হলধারী।

৫} দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দেবীর পূজা করছেন ঠাকুর। রানি রাসমণি উপস্থিত রয়েছেন সেখানে। হঠাৎ রানির গায়ে আলতো চাপড় মেরে ঠাকুর বললেন, ‘‘কেবল ওই চিন্তা! এখানেও ওই চিন্তা!’’ঠাকুরের এই আচরণে সকলেই যখন অভিভূত তখন রানি নিজেই লজ্জিত মুখে স্বীকার করলেন, দেবীর সামনে বসেও দেবীর ধ্যানে তিনি মনোযোগ দিতে পারেননি। বরং চিন্তা করছিলেন একটি বিশেষ মোকদ্দমা বিষয়ে।