সন্তোষী মা এর ব্রতকথা

হিন্দু ধর্ম অনুসারে সপ্তাহের সাত দিনের এক একটি দিন এক একজন দেবতার নামে উত্সর্গীকৃত। শুক্রবার দিনটি সন্তোষী মায়ের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। শুক্রবার অনতে Santoshi Maar Broto Kotha সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করুন। সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করলে জীবনের অনেক দুখ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। সন্তোষী মায়ের ব্রত টানা ১৬টি শুক্রবার ধরে করতে হয় এবং শেষ শুক্রবার ব্রত উদযাপন করার জন্য আটটি ছেলেকে খাওয়ানোর প্রথা রয়েছে।
সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করার জন্য শুক্রবার সন্তোষী মায়ের কথা পাঠ করতে হয়। সন্তোষ কথাটি থেকে এসেছে সন্তোষী কথাটি। সন্তুষ্টি প্রদানের দেবী হলেন সন্তোষী। অন্যান্য ব্রতকথার মত সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা কোনও প্রাচীন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না। তাই মনে করা তুলনামূলক পরবর্তী কালে এই ব্রতকথার সৃষ্টি।
বতের নিয়ম:-প্রতি শুক্রবার উপবাসে থেকে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্রে সন্তোষী মাতার পূজা করতে হয়। পূজার সময় ধূপ-দীপ জ্বালাতে হয়। এই ব্রতে কোনও তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নাই।
ব্রতের উপকরণ— ধান, দূর্বা, ফুল, বেলপাতা, ছােলা, গুড় বা বাতাসা। এইদিন টক দ্রব্য খাওয়া নিষিদ্ধ। ব্রতের ফল-যে সব নারী ভক্তিভরে এই ব্রত উদযাপন করে সেইসব নারী বৈধব্য যন্ত্রণা পায় না ও তাদের সকল মনােবাসনা পূর্ণ হয়। তারা সারাজীবন স্বামী-পুত্র ও পরিজনবর্গসহ সুখে-স্বাচ্ছন্দে কাল কাটায়। তাদের গৃহে অর্থাভাব হয় না। যে কোনও বয়সের পুরুষ ও নারী এই ব্রত করতে পারে।
মা সন্তোষী প্রণাম মন্ত্র সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহ'স্তুতে।
সরলার্থঃ- হে দেবী,তুমি মঙ্গলের মঙ্গল রূপিণী,কল্যাণময়ী সর্বাভীষ্টপূরিকী, সকলের আশ্রয় সরূপিণী ও ত্রিনয়না। হে গৌরী,হে মাতা তোমাকে প্রণাম।
সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা Santoshi Maar Broto Kotha এক সময় এক মহিলা বাস করতেন, যার ওপরে তাঁর শাশুড়ি মা নানা ভাবে অত্যাচার করতেন। শাশু়ডি মায়ের সব রকম অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার মুখ বুজে সহ্য করতেন ওই মহিলা। কারণ তিনি তাঁর স্বামীকে খুবই ভালোবাসতেন। কিছুদিন পরে ওই মহিলার স্বামীকে কর্মসূত্রে অন্যত্র যেতে হয়।
স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে ওই মহিলার শাশুড়ি পুত্রবধূর ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই মহিলা একটি মন্দিরে যান, সেখানে তিনি সন্তোষী মায়ের ব্রতকথার বিষয়ে জানতে পারেন। এরপরই তিনি পরপর ১৬টি শুক্রবার ধরে উপবাস রেখে সন্তোষী মায়ের ব্রত পালনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম শুক্রবার ব্রত রাখার পরেই তিনি শাশুড়ি মায়ের ব্যবহারে পরিবর্তন টের পান।
তাঁর স্বামীও বিদেশ থেকে তাঁকে চিঠি ও টাকা পাঠান।এক একটা করে শুক্রবার সন্তোষী মায়ের ব্রত পালন করে কাটাতে থাকেন তিনি, আর তাঁর জীবনেও পরিবর্তন আসতে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর স্বামীর উপার্জন অনেকটাই বেড়ে যায়। তাঁদের বেশ কিছু টাকা সঞ্চয়ও হয়ে যায়। স্বামী ফিরে আসার পর ১৬টি শুক্রবার সম্পূর্ণ হলে উদ্যাপনের মাধ্যমে ব্রত উদযাপনের আয়োজন করেন ওই মহিলা।
কিন্তু তাঁর শাশুড়ি মোটেও চাননি যে তিনি সফল ভাবে সন্তোষী মায়ের ব্রত উদযাপন করতে পারেন। সেই কারণে যে আটটি ছেলেকে তিনি খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন, তাঁদের তিনি টক খাবার খাইয়ে দেন। সন্তোষী মায়ের ব্রত উদযাপন টক খাবার খাওয়ানো একেবারেই বারণ। সন্তোষী মায়ের ব্রত সঠিক ভাবে উদযাপন করতে না পারায় ওই মহিলার স্বামীর বড় ক্ষতি হয়ে যায়।
কিন্তু এরপর তিনি ব্রত উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। এবার কোনও রকম সমস্যা ছাড়াই নিষ্ঠাভরে ব্রত উদযাপন করতে পারেন তিনি। ওই মহিলার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করেন সন্তোষী মা। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সন্তোষী মায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেন তাঁর শাশুড়ি মা।