শিবরাত্রির মাহাত্ম্য

শিবরাত্রির মাহাত্ম্য

পরমেশ্বর ভগবান ছয় ধরনের অবতারের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে কার্য সম্পাদন করেন। এর একটি হচ্ছে গুণাবতার। প্রকৃতির তিন গুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) অধীশ্বর ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব যথাক্রমে সৃষ্টি, পালন ও প্রলয়ের কাজে নিয়োজিত পরমেশ্বর ভগবানেরই তিন গুণাবতার। যদিও পরমেশ্বর ভগবান নিজে গুণাতীত, প্রকৃতির তিন গুণের কোনোটিই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তবুও প্রয়োজনহেতু জগৎ সংসার মহাপ্রলয় সাধন করার জন্য তিনিই তমগুণের অধীশ্বর হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব হন। তখন শিব Shivratri পরমেশ্বর ভগবান নন। ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৪৫) বলা হয়েছে-

  • ক্ষীরং যথা দধি বিকার বিশেষ যোগ্যাৎ সঞ্জায়তে
  • ন হি ততঃ পৃথগস্তিহেতোঃ।
  • য সম্ভবতা মপি তথা সমুপৈতি কার্যাদ
  • গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।’

শিবচতুর্দশীতে শিবের Shivratri মূর্তির চেয়ে শিবলিঙ্গ আকারে শিবের পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ‘শিব’ শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং ‘লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ প্রতীক। আর এ কারণেই ‘শিবলিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক। ‘শিব’ শব্দের অপর একটি অর্থ হল- মহাপ্রলয়ের পর যার মধ্যে অনন্ত মহাবিশ্ব নিদ্রিত অবস্থায় থাকে। ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থও একই, যেখানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসের পর সব সৃষ্টবস্তু বিলীন হয়ে যায়। বৈদিকশাস্ত্র অনুসারে জগতের সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস পরমেশ্বর ভগবানের তিন গুণাবতার দ্বারা সম্পন্ন হয়। তাই শিবলিঙ্গ স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানেরও প্রতীকরূপে পরিগণিত হয়। 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এদিন সকাল থেকেই শিব মন্দিরগুলিতে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। ওম নমঃ শিবায় এবং হর হর মহাদেব মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে ভোর থেকেই মন্দিরগুলির বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন পূণ্যার্থীরা। শিব মন্দিরগুলিতে গোটা রাত ধরে এদিন চলে বিশেষ পূজার্চনা।  মহাশিবরাত্রিতে কঠোর ভাবে উপবাস পালনের রীতি রয়েছে।

এদিন শিবলিঙ্গের রুদ্র অভিষেক পুজো করা হয়। জল, দুধ, মধু, আখের রস ও দই দিয়ে শিবলিঙ্গের পুজো করা হয়। এছাড়া ধূত্র ফুল এবং ফল মহাদেবের অভিষেকের জন্য অবশ্যই দিতে হয়। বিবাহিতা মহিলারা মহাশিবরাত্রিতে স্বামীর মঙ্গল কামনা করে উপবাস রেখে পুজো করেন। অবিবাহিতা মহিলারা শিবের মতো স্বামীর পাওয়ার প্রার্থনা করে এদিন উপবাস রেখে পুজো অর্চনা করেন।

 শিবরাত্রির ব্রতকথা অনুযায়ী, এদিন এক শিকারি বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে শিকার না পেয়ে একটি বেলগাছের ডালে আশ্রয় নেয়। গাছের পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকে সে। নীচে সেখানে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। বেলপাতা পড়ায় খুশি হয়ে মহাদেব তকে আশীর্বাদ করেন। কালকূট কথা অনুযায়ী, এদিনই দেবতা ও রাক্ষসদের সমুদ্র মন্থনের ফলে ভয়ানক কালকূট বিষ উঠে আসে। সেই বিষের জ্বালায় ছটফট করতে থাকে গোটা বিশ্ব। সৃষ্টি রক্ষা করতে মহাদেব সেই বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন। বিষে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়, তাই তাঁর আর এক নাম নীলকণ্ঠ।

আগামী ১ মার্চ পালিত হবে এই বছরের মহাশিবরাত্রির উত্‍সব। শিবরাত্রি কথাটি এসেছে শিব ও রাত্রির সমন্বয়ে। অর্থাত্‍ যে রাত শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এক বছরে প্রতি মাসে একটি করে মোট ১২টি শিবরাত্রি পালন করা হয়। তার মধ্যে মহাশিবরাত্রি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গোটা দেশে মহা ধূমধামের সঙ্গে পালন করা হয় মহাশিবরাত্রি। শিবরাত্রি আসলে হল শিব ও পার্বতীর মিলন উত্‍সব।

 

[ আরও পড়ুন হনুমান জয়ন্তী ]