শনিদেবর পুজো পদ্ধতি

মানুষের জীবনে যখন কোন খারাপ মুহুর্ত আসে, তখন বলা হয় তার উপর শনির দৃষ্টি পড়েছে। তাই তার জীবনে কোন উন্নতি হচ্ছে না। শনির (Shanidev) দৃষ্টি একবার কারোর উপর পড়লে, তা সহজে ছেড়ে যায় না। তাই শনি দেবকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য প্রতি শনিবার করে বারের পূজো করা হয়। হিন্দু মহিলারা শনিবার উপোষ রেখে শনিদেবতার পূজো করেন।
সংসারের মঙ্গল কামনায়, পরিবারের সকলের সুস্থ এবং বিপদ মুক্ত ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করেন। শনিদেবকে অশুভ বলা হলেও, এই কথা ভুল যে শনি দেব দুর্ভাগ্যের দেবতা। সনাতন হিন্দু ধর্মের একজন দেবতা হলেন শনিদেব। সূর্যদেব ও তার পত্নী ছায়াদেবীর পুত্র তিনি, এজন্য তাকে 'ছায়াপুত্র'-ও বলা হয়। শনিদেব, মৃত্যু ও ন্যায় বিচারের দেবতা। এবং তিনি সূর্যদেব এবং মাতা সংজ্ঞার পুত্র এবং কন্যা যমদেব ও যমুনা দেবীর অনুজ ভ্রাতা।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে একদিন শনি দেবের স্ত্রী দেবী ধামিনী সুন্দর বেশভূষা নিয়ে তার কাছে এসে কামতৃপ্তি প্রার্থনার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু ধ্যানমগ্ন শনি সেদিকে খেয়ালই করেন না। যার ফলে অতৃপ্তকাম পত্নী শনিকে অভিশাপ দিলেন, 'আমার দিকে একবারও তুমি ফিরেও চাইলে না। ঠিক আছে এরপর থেকে তুমি যার দিকে চাইবে, সে-ই ভস্ম হয়ে যাবে'। তবে অনেকের মত ঘটনাটি মঙ্গলদেবের চক্রান্তে হয়েছিল।
সকালে উঠে নিত্যকর্ম সেরে স্নান করা উচিত। এর পর কাঠের পুজোবেদির ওপর পরিষ্কার কালো রংয়ের কাপড় বিছিয়ে তার ওপর শনির প্রতিমা বা চিত্র স্থাপন করুন। যদি প্রতিমা বা চিত্র না-থাকে, তা হলে একটি সুপুরির দুই পিঠে শুদ্ধ ঘি ও তেলের প্রদীপ জ্বালান।
এর পর ধুপ জ্বালিয়ে শনিদেবের স্বরূপকে পঞ্চামৃত, আতর ইত্যাদি দিয়ে স্নান করান। সিঁদুর, কুমকুম, কাজল, আবির ইত্যাদির সঙ্গে নীল ফুল অর্পণ করুন। অমৃতি এবং তেল দিয়ে তৈরি বস্তু অর্পণ করা উচিত। নারকেলের সঙ্গে অন্যান্য ফলও দিতে পারেন। এর পর একমালা শনিমন্ত্র জপ করুন। শনির পাঁচালি পাঠের পরে আরতি করে পুজো সম্পন্ন করুন।
শনি দেবতার প্রণামঃ-
=================
ওঁ সৌরাষ্ট্রং কাশ্যপং শুদ্রং
সুয্যাস্যং চতুরঙ্গলম। কৃষ্ণং কৃষ্ণাম্বরং
গৃধ্র- গতং সৌরিং চতুর্ভুজম। তদ্ব দ্বা
বর – শুলং ধনু হস্তং সমাহ্বয়েৎ।
যমাধিদৈবতং প্রজা – পতিপ্রতধি
দৈবতম নমঃ নমঃ।।১
ঔঁ ণীলাজ্ঞনচয়প্রখ্যং রবিসুনুং মহাগ্রহম্।
ছায়ায়া গভ‘সস্ততং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্ নমঃ
শনিগায়ত্রী:–
—————-
ওঁ কৃষ্ণাঙ্গায় বিদ্মহে রবিপুত্রায় ধীমহি তন্নঃ সৌরী
প্রচোদয়াৎ
–
তন্ত্রোক্ত শনি মহারাজের বীজ মন্ত্র***
============
[ওঁ প্রাং প্রীং প্রৌং শনৈশ্চরায় নমঃ]
ক্ষমা প্রার্থনা-
নমো যদক্ষরং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বং সর্বং ত্বং প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস
আরও কী কী করা যেতে পারে:
শনি মন্দিরে তেলাভিষেক করুন।
শনি শান্তি পুজো ও শনি যজ্ঞ করান।
ভিখিরি, দুস্থ, গরিবদের ভোজন করান।
এদিন নিজে বা কোনও পুরোহিতের মাধ্যমে শনি মন্ত্র ২৩,০০০ বার জপ করান।
শনি জয়ন্তীর দিন কালো ঘোড়ার নাল দিয়ে তৈরি আংটি ধারণ করুন।
তেল, লোহার পেরেক, কালো তিল, কালো কাপড়, কালো বিউলির ডাল শনিদেবের প্রতিমায় অর্পণ করুন।
এ দিন নবগ্রহ শান্তি পুজো কুষ্ঠির সমস্ত দোষ নিবারণে সার্থক।
এ দিন শনি যন্ত্র স্থাপন করুন।
পরিবারের কোনও সদস্য যদি দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকেন, তা হলে শনি পুজোর পাশাপাশি তাঁকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করান।
ওম স্বহা শনিশ্চরায় নমঃ, এই মন্ত্র জপ করুন।
শনির আশীর্বাদে সমস্ত দোষ এবং কুষ্ঠিতে উপস্থিত শনির দুর্বল প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। * কাজে বাধার অবসান ঘটে। ব্যবসায় উন্নতি ও চাকরিতে পদোন্নতি হয়। * বার বার বাহন দুর্ঘটনা, অসুস্থতা থেকে শনি শান্তিপুজো ব্যক্তিকে রক্ষা করে।
শনির আশীর্বাদে আইন-আদালত, পুলিশ সংক্রান্ত মামলা থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
শনি পূজার মাধ্যমে শত্রুদেরও শান্ত করা যায়।