শ্যাম সুন্দর মন্দির -বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহাসিক প্রাচিন মন্দিীন

বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবন উপকূল সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা সাতক্ষীরা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপার লীলাভূমি সাতক্ষীরা জেলা। জেলাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।এই অঞ্চলে রয়েছে বেশকিছু প্রাচীন মন্দির। তারমধ্যে অন্যতম ‘শ্যাম সুন্দর মন্দির’।শ্যাম সুন্দর মন্দির বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া নামক স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান।
মন্দিরটির অবস্থান সাতক্ষীরা সদর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার ও উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সোনাবাড়ীয়া গ্রামে। স্থনীয়ভাবে তাই একে সোনাবাড়ীয়া মঠ বা মঠবাড়ি নামেও ডাকা হয়। যদিও মন্দিরটির দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির। এই মন্দিরটি ছাড়াও এ অঞ্চলে আরও বেশকিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ইতিহাস শ্যাম সুন্দর মন্দির এর নির্মাণ প্রসঙ্গে দুরকম মত পাওয়া যায়।
কেউ কেউ মনে করেন, ৪০০ বছর-এর বেশ কিছু পূর্বে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এই মন্দিরটি তৈরি করেন। এরপর ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে প্রচারকগণ যখন চলে যান তখন মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৭৬৭ সাল থেকে তত্কালীন জমিদার সেটিকে ব্যবহার শুরু করেন। তারা ছিলেন মূলত দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীর জমিদারের পূর্বপুরুষ।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, মন্দিরটি ১৭৬৭ সালে জমিদার হরিরাম দাশ বা দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীই নির্মাণ করেছিলেন। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের আশেপাশে আরও প্রায় ৯টি মন্দির ছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে ও জনশ্রুতি অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও এ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছিলেন। অবকাঠামো তিনতলা বিশিষ্ঠ পিরামিড অবয়বের এই মন্দিরটির উচ্চতা ৬০ ফুট।
পূর্বে এই মন্দিরের পূর্ব দিকে স্থাপন করা ছিল কষ্টি পাথরের তৈরি ১২টি শিবলিঙ্গ। এছাড়াও দোতালায় ছিল স্বর্ণের তৈরি রাধ-কৃষ্ণ মূর্তি। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও সুড়কি ব্যবহারের মাধ্যমে। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের পাশে আরও দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলো দুর্গা ও শিবের পুজো করার জন্য ব্যবহার করা হত।
এই তিনটি মন্দিরের সামনেই রয়েছে একটি ছোট দীঘি। মন্দিরটির দ্বিতীয় তলার আয়তন ৩১.১ ফুট × ৩২.৯ ফুট এবং তৃতীয় তলার আয়তন ২৪.৬ ফুট × ২৩.৬ ফুট। এছাড়াও মন্দিরের নিচ তলার চারটি ভাগের ২য় ভাগের মন্ডপের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ-এর দৈর্ঘ্য ২০.২ ফুট ও প্রস্থ ৪.৫ ফুট। তৃতীয় ভাগে রয়েছে দুটি কক্ষ।
এলাকাবাসী দের মতে, ‘প্রাচীন এই মন্দিরগুলো তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা ও ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে। কিন্তু রক্ষাণাবেক্ষনের অভাবে সেগুলি জীর্ণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তৎকালীন ইতিহাস ও স্থাপত্যরীতি তুলে ধারার জন্যই সেগুলিকে সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেই কাজ কবে শুরু হবে, তা কেউ জানে না।