সোহিনী চট্টোপাধ্যায়ঃ বাইডেনের প্রশাসনে বাঙালি কন্যা বাঁকুড়ার সোহিনী চট্টোপাধ্যায়

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনে ২০ থেকে ২৫ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে জায়গা দিয়েছেন। সেই দলে এবার অন্তর্ভুক্ত করা হল আরও দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলাকে। রাষ্ট্রসংঘে মার্কিন-মিশনের অন্যতম প্রতিনিধি করে বিদেশ বিষয়ক দুই বিশেষজ্ঞ সোহিনী চট্টোপাধ্যায় ও অদিতি গরুড়কে পাঠানো হচ্ছে।বাঁকুড়ার সোনামুখীর সেই সোহিনী চট্টোপাধ্যায় এ বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অন্দরে। সূত্রে খবর, রাষ্ট্রসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করবেন সোহিনী।
সোহিনীর বাবা স্বদেশ চট্টোপাধ্যায় সোনামুখীর মনোহরতলার বাসিন্দা। তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবনের অনেকটাই এ দেশে। ১৯৭৮ সালে অল্প পুঁজি সম্বল করে স্ত্রী ও কোলের শিশুকন্যা সোহিনীকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দেন। সেখানে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলার পাশাপাশি, প্রশাসনের অন্দরেও বিশেষ প্রভাব গড়ে ওঠে তাঁর। দেশের বাইরে থেকেও ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক মজবুত করার বিষয়ে অবদানের জন্য ২০০১ সালে ভারত সরকার সোহিনীর বাবা স্বদেশ চট্টোপাধ্যায় পদ্মভূষণ সম্মান দিয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সোহিনী চট্টোপাধ্যায় কিছুদিন আগে পর্যন্তও কাজ করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের একজন অধ্যাপক হিসাবে। তার আগে শিক্ষা ব্যুরোর নীতি নির্ধারক পদেও তাঁকে দেখা গিয়েছে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) সংস্থায়। এক সময় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে বিদেশনীতি নির্ধারিত কমিটির উপদেষ্টা পদের দায়িত্বও সামলাতে হয়েছে তাঁকে।কলেজে পড়ার সময়ে কলকাতায় এসে মাদার টেরিজার জীবদ্দশায় তাঁর ‘মিশনারিজ় অব চ্যারিটি’র হয়ে কয়েক মাস কাজ করেছেন সোহিনী।
শেষ বার সোনামুখীর দেশের বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন বছর আটেক আগে। বছর চারেক আগে কলকাতায় এসেছিলেন। সে বার উঠেছিলেন ছোটপিসির বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে। কর্মসূত্রে প্রায়ই সোহিনীকে ভারত-সহ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হয়। একটি সংবাদমাধ্যমকে স্বদেশবাবু বলেন, “প্রথম থেকেই নিজের দেশ ও বিশ্বের জন্য ভাল কিছু করার তাগিদ ছিল সোহিনীর মধ্যে। আমরা নিশ্চিত ও নিজেকে প্রমাণ করবে।” এ দিকে সোহিনীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত আত্মীয়েরা।
সোহিনীর পিসি, সোনামুখী কলেজের শিক্ষিকা ছায়া মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ওর মন খুব স্পর্শকাতর। আমাদের অসুস্থতার খবর পেলে চিন্তায় পড়ে যায়। বাংলা বলতে পারলেও ‘তুই’ আর ‘তুমি’র তফাৎ বুঝত না। এক বার তো আমার কলেজের অধ্যক্ষকে গিয়ে সরাসরি ‘তুই’ সম্বোধন করে দিয়েছিল। তার পরে ওকে ভাল করে ‘তুই’ ও ‘তুমি’র ফারাক শিখিয়েছি। এখন অবশ্য আর ভুল করে না। ওর ছায়াপিসি হিসেবে আমি ভীষণ গর্বিত।” সোহিনীর ছোটপিসির ছেলে, কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা দেবজিৎ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমার সঙ্গে ওর খুব কাছের সম্পর্ক।
দিদির মধ্যে এতটাই আত্মবিশ্বাস, যে কোনও রকম বড় সিদ্ধান্ত কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটা খুবই শিক্ষনীয়।” সোহিনীর ছোটপিসি মনিকা চক্রবর্তী বলেন, “বেগুন পোড়ার পোকা সোহিনী। বাড়িতে এলে ওটা ওর চাই-ই। এখানে এলে ওকে আমার শাড়ি পরিয়ে সঙ্গে নিয়ে ঘুরি। কাছে বসিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছি। ওকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।” গত নভেম্বরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন সম্পর্কে তাঁর উচ্চাশার কথা জানিয়েছিলেন সোহিনী।
তিনি বলেছিলেন, জো বাইডেনের প্রশাসন ভারতের সঙ্গে আরও বেশি সুষ্ঠু এবং চিন্তাশীল সম্পর্ক গড়ে তুলবে। তাঁর কথায়, বাইডেনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থায়ী এবং ধারাবাহিক হবে। গত ডিসেম্বরে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে সোহিনী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক বহুদিনের। ফলে বাইডেন জমানায় ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি নতুন উচ্চতায় উঠবে বলে তাঁর ধারণা। সোহিনী বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের। কারণ, জলবায়ু সংকট ভারত ও আমেরিকা দুর্বলতর অংশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে। এই বিষয়ে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে তাঁর আগ্রহ রয়েছে বলেও জানান সোহিনী।