গাউট এর ব্যথায় ভুগছেন? রইল সমাধান

আজবাংলা গাউট বা গেঁটেবাত আমাদের দেশে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। গেঁটেবাত এর কথা শুনলে অনেকেই ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন এই ভেবে যে এবার মনে হয় আর রক্ষা নেই। বিষয়টি কী আসলে তাই? আজকের প্রতিবেদনে গাউটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।
গাউট আসলে জয়েন্ট এর একটি সমস্যা বা আর্থাইটিস। এই ব্যথাটি হঠাৎ করে আসে। যেকোনো একটি জয়ন্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের জয়েন্ট বেশি আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে জয়েন্টটিতে তীব্র ব্যথা হয়, ফুলে যায় এবং লাল হয়ে যেতে পারে।
গাউট এর কারণ- সাধারণভাবে আমাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। যা আমাদের স্বাভাবিক মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। তৈরি হওয়া ইউরিক এসিড আবার রক্তের সাথে মিশে কিডনি দিয়ে শরীরের বাইরে নির্গত হয়। কিন্তু যদি কোনো কারণে শরীর অধিক পরিমাণে ইউরিক এসিড উৎপন্ন করে,
অথবা ইউরিক এসিড বেড়ে যায় এমন ধরনের খাবার দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া হয় অথবা শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। এ সকল কারণের যে কোনটির জন্যই আমাদের শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে যেতে পারে।
ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে তা রক্তের মাধ্যমে আমাদের জয়েন্ট ক্যাভিটিতে পৌঁছায়। সেখানে এক ধরনের ক্রিস্টাল তৈরি করে সেগুলো সুচালো আকৃতির। আর এর কারণেই জয়েন্ট তীব্র ব্যথা হয় যখনই আমরা হাঁটতে যাই বা অন্য কোন কাজ করতে যাই।
যেসব করনে গাউটের বেড়ে যায়- ১. খাদ্যাভ্যাস: কিছু খাবার আছে যেগুলোতে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাংস বিশেষ করে লাল মাংস, বিভিন্ন অঙ্গের মাংস যেমন লিভার, কিডনি, থাইমাস ও প্যানক্রিয়াস, সামুদ্রিক খাবার ও মাছ।
যেমন, লবস্টার, সেলফিশ, মিষ্টি ফল সমূহ যেগুলোর মধ্যে ফ্রুক্টোজ থাকে, বিভিন্ন ধরনের বেভারেজ বা ড্রিংকস, ফাস্টফুড, আইসক্রিম ও ক্যান্ডি, অ্যালকোহল বা অ্যালকোহল জাতীয় ড্রিংকস যেমন বিয়ার ইত্যাদি।
শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া: শরীরের ওজন অত্যাধিক বেড়ে গেলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কে শরীর থেকে বের করে দেয়ার জন্য কিডনির উপরে চাপ তৈরি হয়। তাই অতিরিক্ত ওজন গাউটের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যান্য রোগের উপস্থিতি: কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলো থাকলে তাদের গাউটের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।তাদের মধ্যে অন্যতম উচ্চরক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি এর সমস্যা জনিত রোগ ও হৃদরোগ।
কিছু ঔষধ সেবন: কিছু কিছু ওষুধ সেবনের কারণে ইউরিক এসিড বেড়ে যেতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম থায়াজাইড ডাই ইউরেটিক ও এসপিরিন জাতীয় ঔষধ। এই ওষুধগুলো সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই যারা এ সকল ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে গাউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বয়স- গাউট সাধারণত পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। কারণ এদের ইউরিক এসিডের মাত্রা মহিলাদের থেকে স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে। যে কারণে পুরুষদের ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে গাউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত মেনোপজের পরে ইউরিক এসিডের মাত্রা পুরুষদের সমান হয়ে যায়। যে কারণে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪৫ বা ৫০ বছরের পরে গাউটের সম্ভাবনা থাকে।
অপারেশন বা আঘাত পাওয়া: অতি সম্প্রতি কোন অপারেশন হলে বা বড় কোনো আঘাত পেলে সেখান থেকেও গাউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গাউট এর লক্ষণ- ১. জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। সাধারনত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির জয়েন্ট বেশি আক্রান্ত হয়। অন্যান্য জয়েন্ট ও আক্রান্ত হতে পারে যেমন: হাঁটু, হাতের কব্জি, কনুই ও হাতের আংগুল।
২. আক্রান্ত জয়েন্টটি ফুলে যায় ও লাল হয়ে যায়। ৩. জয়েন্ট এর নাড়াছাড়া ক্ষমতা কমে যায় বা তীব্র ব্যথা সম্পন্ন হয়।