সুরেশ বিশ্বাস

সুরেশ বিশ্বাস

  নিঃসন্দেহে কম আলোচিত বাঙালি ব্যক্তিত্ব  সুরেশ বিশ্বাস Suresh Biswas। বাংলার নবদ্বীপ থেকে বেরিয়ে নানা কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন ব্রাজিলে ভারতীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বঙ্গতনয়কে ভারতীয়রা তো দূরস্ত, বাঙালিরাও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখেনি। অথচ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে এমন অনেক কালজয়ী অভিজ্ঞতা যা আমাদের ব্যক্তিজীবনকে তো বটেই, তার সাথে  জাতীয় জীবনকেও সমৃদ্ধ করবে। তবে, তার নামের আগে বসা এই ‘কর্নেল’ উপাধিটি যথাযথ নয়।

ব্রাজিলিয়ান সৈন্যদলে তিনি ‘ক্যাপ্টেন’ উপাধি পেয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন থেকেই এই ‘কর্নেল’ কথাটি আসে এবং লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে তাঁর উপাধি হয়ে যায়। নদীয়া জেলাকৃষ্ণনগরের পশ্চিমে ইছামতী নদীর তীরে নাথপুর গ্রামের এক সচ্ছ্বল জমিদার পরিবারে ১৮৬১ সালে কর্নেল সুরেশ বিশ্বাসের জন্ম হয়। সুরেশ বিশ্বাসের ঠাকুরদা ছিলেন জমিদার রামচাঁদ বিশ্বাস। তাঁর বাবা গিরিশচন্দ্র বিশ্বাস ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের সামান্য বেতনের কর্মচারী।

কলকাতার সার্ভেয়ার জেনারেল অফিসে (Surveyor General Office) চাকরি করতেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সুরেশচন্দ্র ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড চঞ্চল, দুঃসাহসী এবং নির্ভীক ছিলেন সুরেশ। মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই তাঁর সাহসের প্রকাশ দেখা যেতে থাকে। এমনকি তিনি আগুনেও ভয় পেতেন না। একবার আগুনে যাতে সুরেশের ভয় জন্মায়, সেই জন্য, তাঁর মা তাঁকে ঘরের কোণে জ্বলতে থাকা প্রদীপের কাছে নিয়ে যান। ভয় পাওয়ার বদলে নিজের আঙুলগুলি আগুনের মধ্যে এগিয়ে দেন তিনি।

ব্যথায় কাতরানোর পরিবর্তে ওইটুকু বয়সে আগুনের তাপ তিনি নীরবে সহ্য করেছিলেন বলে জানা যায়। শৈশবে একবার ২০ ফুট উঁচু মইতেও উঠে পড়েছিলেন তিনি। ফলে তাঁর বাল্যকালের কাজকর্ম দেখে সহজেই অনুমান করা যেত যে, বড় হয়ে তিনি নেতৃত্ব দেবেন, অসমসাহসী কাজ করবেন। অতিরিক্ত শাসন তিনি পছন্দ করতেন না একেবারেই। তার বদলে ভালোবেসে বুঝিয়ে কোনো কাজ করতে বললে তাতে সন্তুষ্ট হতেন অনেক বেশি, বিনা বাক্যব্যয়ে সম্পন্ন করতেন সংশ্লিষ্ট কাজ। বন্ধুবান্ধবের মধ্যে তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়।

গ্রামের যে সকল ছেলেরা বাইরে পড়াশোনা করতে যেতেন, তাঁরা গ্রামে ফিরলে সুরেশ তাঁদের কাছে দেশ-বিদেশের বীরদের কাহিনি শুনতে চাইতেন। বন্ধুরা না থাকলে একা একাই দুপক্ষের হয়ে দাবা খেলতেন। সুরেশ বিশ্বাসের প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পর্কে সেভাবে জানা যায়নি। তবে তাঁর বাবা গিরিশচন্দ্র নবদ্বীপ থেকে কলকাতায় এসে ভবানীপুরের কড়েয়ায় একটি বাড়ি কিনে সপরিবারে সেখানে থাকতে শুরু করেন এবং তখন সুরেশ ভবানীপুরের লন্ডন মিশন কলেজে (London Mission College) ভর্তি হন।

কলকাতার নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেও সুরেশ পড়াশোনায় বিশেষ মনোযোগী ছিলেন না। কলেজের কাছেই ছিল তাঁর আড্ডা। অধিকাংশ সময়েই সেখানে তাস-দাবা ইত্যাদি খেলাধূলার মধ্যে তাঁকে পাওয়া যেত। পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ায় সুরেশের বাড়ির বেশিরভাগ মানুষ তাঁকে পছন্দ করতেন না। মায়ের ভালবাসা ছাড়া আর যে মানুষটির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল, তিনি হলেন, তাঁর কাকা কৈলাসচন্দ্র বিশ্বাস। ক্রমশ বাবার সঙ্গে সুরেশের সুম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। তিনি প্রায়ই বাড়িতে না ফিরে তাঁর খ্রিস্টান বন্ধুদের বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন। যত দিন এগোতে থাকে, ততই তিনি খৃস্টান জীবনযাপনের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন।

হিন্দুধর্মের প্রতি তাঁর আস্থা ক্রমশ কমতে থাকে। তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য তাঁর কাকাও তাঁর প্রতি বিরক্ত হতে শুরু করেন। বাবার সঙ্গে তাঁর বচসা চরমে উঠলে তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বাড়ির লোক যাতে তাঁকে খুঁজতে না আসে, তাই তিনি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করার পরে তাঁর বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেন।

সহায়-সম্বলহীনভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরানোর সময় তাঁর কলেজের অধ্যক্ষ অ্যান্টনি সাহেব তাঁকে এই সময় খুব সাহায্য করেছিলেন।কলকাতায় আসার পরে অনেক মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন বীরের কাহিনি শোনার সুযোগ হয় সুরেশের। কলকাতায় থাকলেও মাঝে মাঝেই নবদ্বীপে তাঁর যাতায়াত থাকতো। নবদ্বীপে মাত্র তেরো বছর বয়সে এক হিংস্র কুকুরকে হত্যা করে, অনেক নিরীহ প্রাণী এবং মানুষকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান তিনি। এর কিছুদিন পরেই এক শূকরকে উপস্থিত বুদ্ধির দৌলতে ছিপের সাহায্যে আহত করেন, যেটিকে ইংরেজ শিকারি এবং তাদের শিকারি কুকুরেরা পর্যন্ত শায়েস্তা করতে পারছিল না।

এই ঘটনার পরে তিনি সাহেবদের সুনজরে আসেন এবং ব্রিটিশ সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। সাহেব এবং মেমদের পাশাপাশি নীলকুঠিতে কর্মরত ভারতীয় কর্মচারীরাও সুরেশকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু নবদ্বীপ ছেড়ে একসময় তাঁকে বালিগঞ্জে চলে আসতে হয়। সুরেশ বিশ্বাস নৌকা চালাতে এবং দাঁড় টানতে খুব ভালোবাসতেন। নবদ্বীপে থাকাকালীন ইছামতীতে এই শখ দারুণভাবে মেটানো গেলেও কলকাতায় এসে সেভাবে নৌকা চালাতে পারতেন না। ফলে উৎসাহী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি রোয়িং ক্লাব (Rowing Club) প্রতিষ্ঠা করেন।

এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার পরে তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বিনা সমস্যায় গঙ্গাবক্ষে নৌ-চালনা করতেন। এইভাবেই একদিন গঙ্গায় নৌকা চালাতে গিয়ে চরম বিপদে পড়েন তিনি।  ভালো সাঁতার জানলেও সামুদ্রিক ঝড় এবং প্রবল স্রোতের মুখে পড়ে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ভেসে যেতে থাকেন। সুরেশ এবং তাঁর এক বন্ধু ছাড়া বাকি তিনজনকে একটি স্টিমার উদ্ধার করে। সুরেশকে অর্ধমৃত অবস্থায় জার্মান জাহাজের এক ক্যাপ্টেন দেখতে পান এবং সুস্থ করে পরেরদিন বাড়ি পাঠান। নানা জায়গায় কাজের চেষ্টা করতে করতে তিনি স্পেন্সেস হোটেলে (Spence’s Hotel) একটি সামান্য চাকরি পান।

জাহাজের ঘাট, রেলওয়ে স্টেশনে তিনি থাকতেন এবং সাহেব বা মেম বিদেশ থেকে এখানে এলে তাঁদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে তুলতেন – তাঁদের মালপত্র বহন করা, কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানো এই ছিল তাঁর কাজ। কিন্তু, বেশিদিন এক কাজে থাকা তাঁর ধাতে ছিল না। তিনি অল্প কিছু দিন পর থেকেই দেশ ছেড়ে ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড যেতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, তা তাঁর কাছে ছিল না। ইংল্যান্ড যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা হচ্ছে না দেখে তিনি রেঙ্গুনে চলে যান।

সেখানেও চাকরির প্রভূত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলেন। তারপর কলকাতা ছেড়ে  মাদ্রাজে গিয়েও তাঁকে খালি হাতেই ফিরতে হয়। কলকাতায় ফিরে তিনি লেখাপড়ায় উন্নতি করতে থাকলেও কিন্তু বিলেত যাওয়ার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত থেকেই যায় মনে। হঠাৎ করেই বি. এস. এন. কোম্পানির এক জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। এই জাহাজেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টুয়ার্ট (Assistant Stuart) পদে তিনি নিযুক্ত হন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে সুরেশ বিশ্বাস লন্ডনের পথে রওনা দেন।

লন্ডনে গিয়ে অন্ন সংস্থানের জন্য তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করেছেন, মুটে হিসেবে কাজ করেছেন, এমনকি, নানাদেশের নানা রকমের ভাঙাচোরা জিনিস ইংল্যান্ডের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি পর্যন্ত করেছেন। এই সময়ে তিনি কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করেন, এবং সকালে ফেরি করে এসে দিনের বাকি সময় নানান কাজে ব্যয় করতেন। রসায়ন, গণিত, জ্যোতিষ ইতাদি বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ জন্মায় এই সময়ে। এই সমস্ত প্রথাগত পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইন্দ্রজাল, ভোজবাজি এসবের প্রশিক্ষণও নিতেন।

এভাবে নানা গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে সুরেশের কেন্ট প্রদেশের (Kent Province) একটি ছোটো শহরে এসে একটি সার্কাস-দলের সঙ্গে পরিচয় হয়। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা এবং সপ্তাহে পনেরো শিলিং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি সার্কাসে খেলা দেখানো শুরু করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই সার্কাসে তিনি প্রতিষ্ঠা পেলেন। সার্কাসে কর্মরতা এক জার্মান তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। সার্কাসের দলের সঙ্গে নানান জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে একদিন বিখ্যাত হিংস্র পশু-বশকারী জামবাক সাহেবের সঙ্গে সুরেশের দেখা হয়।

তাঁর সাহস, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, এবং মানসিক শক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে জামবাক (Jumbuck) সাহেব সুরেশকে পশুবশ করার শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বলাই বাহুল্য, সুরেশ সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং দুই বছর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার সার্কাসের দলে ফিরে আসেন। ঘুরতে ঘুরতে জার্মানির হামবুর্গ শহরে আসেন এবং গাজেনবাক সাহেবের পশুশালার বিষয়ে অবগত হন। এই পশুশালার সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক, হাতির মতো বন্য হিংস্র পশুদের তিনি খেলা শেখাতেন। জার্মানিতে এসে তাঁর সেই জার্মান প্রণয়িনীর সঙ্গে আবার দেখা হলেও তাঁদের সাক্ষাৎ মিলনান্তক হয়নি।

বিভিন্ন কারণে তাঁকে ইউরোপ ছেড়ে চলে যেতে হয়। এরপর তিনি পাড়ি জমান আমেরিকার উদ্দেশে। ১৮৮৫ সালে ওয়েল সাহেবের বিখ্যাত হিংস্র পশু প্রদর্শনীতে সুরেশ বিশ্বাস দায়িত্ব পান। সেই বছরেই তিনি দলের সঙ্গে গিয়ে নানা জায়গায় খেলা দেখান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র তিনি প্রশংসিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রথমে মেক্সিকো এবং তারপরে ব্রাজিলে যান। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো’তে (Rio De Janeiro) তিনি থাকতেন। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার ফলে ইংরেজি তো তিনি শিখে নিয়েছিলেনই, পাশাপাশি জার্মান, স্প্যানিশ, ফরাসি, পোর্তুগিজ, ইতালীয়, ড্যানিশ, ডাচ – এই ছয়টি ভাষাতেও অনায়াস দখল ছিল তাঁর।

ব্রাজিলে আসার পরে সার্কাসের কাজ ছেড়ে তিনি ব্রাজিলের রাজকীয় পশুশালার পরিদর্শক ও পশুশিক্ষক পদে যোগ দিলেন। এর পাশাপাশি চিকিৎসাবিদ্যা, অঙ্কসহ অন্যান্য শাস্ত্রে এবং ল্যাটিন, গ্রিক প্রভৃতি প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর সুগভীর জ্ঞান ছিল। ঘটনাক্রমে এক স্থানীয় চিকিৎসকের মেয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় যা পরে প্রেমের সম্পর্কে পরিনতি পায়। সেই চিকিৎসক কন্যাই বলেন যে তাঁকে সৈনিকবেশে খুব ভালো লাগবে। প্রণয়িনীর কথা মাথায় রেখে তিনি ১৮৮৭ সালে ব্রাজিল সম্রাটের সৈন্যদলে নিযুক্ত হন।

সমকালীন সাধারণ সৈনিকদের তুলনায় জ্ঞানে ও কর্মদক্ষতায় এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি যোগ্য সম্মান পাননি। সান্টাক্রুজের একটি ছোটো পদাতিক সৈন্যদলের নায়ক হিসেবে কর্পোর‍্যাল (Corporal) পদে তাঁকে বহাল রাখা হয়। এর কিছু পরে তাঁকে রিও ডি জেনিরোর একটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে পাঠানো হয়। এখানে থাকাকালীন তিনি অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ক্রমশ কর্পোর‍্যালের পদ থেকে তিনি পদাতিক দলের প্রথম সার্জেন্টের (Sergeant) পদে উন্নীত হন এবং ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন।

১৮৯৩ সালে তিনি ব্রাজিল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় পদ তথা প্রথম লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপরেই সেই চিকিৎসক কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৯৩ সালের শেষের দিকে সুরেশ এবং তাঁর স্ত্রীর এক পুত্র সন্তান হয়। ১৮৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রবিপ্লব শুরু হলে সুরেশের উপর সৈন্যপরিচালনার দায়িত্ব পড়ে। এই যুদ্ধে তিনি প্রবল পরাক্রমের সঙ্গে লড়াই করেন এবং মূলত তাঁর নেতৃত্বেই জয় নিশ্চিত হয়।    সুরেশ বিশ্বাসের বিষয়ে খুব বেশি লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না।

সত্যজিৎ রায়ের ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ এবং ভারতের প্রথম বিশ্বভ্রমণকাহিনি ‘দু চাকায় দুনিয়া’তে তাঁর উল্লেখ রয়েছে। বিখ্যাত কমিকস রচয়িতা ময়ুখ চৌধুরী ব্রাজিলের জঙ্গলের প্রেক্ষাপটে সুরেশ বিশ্বাসকে নিয়ে একটি কমিকস তৈরি করেন যার নাম ‘বাংলাদেশের রঙ্গ’। বনফুলের ছোটগল্প ‘বিশ্বাস মশাই’তেও সুরেশ বিশ্বাসের উল্লেখ রয়েছে।

ব্রাজিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি আজীবন সেখানেই থেকে যান। তাঁকে মৃত্যুর পরে রিও ডি জেনিরোর ‘সেমেতেরিও সাও জোয়াও বাতিস্তা’তে (Cemiterio Sao Joao Batista)  সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর ছয় বছর পরে ১৯১১ সালে কর্তৃপক্ষ এই সমাধিস্থলটি ধ্বংস করে দেন। ১৯০৫ সালে সুরেশ বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এই বীর বঙ্গসন্তানের কীর্তি এবং সাহসিকতার গল্প সর্বকালের অভিযাত্রীদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।