ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জেরে ফেসবুকের আড়াই লক্ষ কোটি ক্ষতি

ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জেরে  ফেসবুকের আড়াই লক্ষ কোটি ক্ষতি

হিংসায় উস্কানি জোগানোর অভিযোগে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা বসানোয় প্রশংসা যেমন জুটেছে, তেমনই তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের। দুই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকে এবং টুইটারের ব্যবসাতেও এ বার এই বিতর্কের রেশ এসে পড়ল। এমনিতেই হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ফেসবুক। সোমবার তাদের শেয়ার দরের অবিশ্বাস্য পতন হয়েছে।

মোট বাজারমূল্য থেকে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে তাদের। কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে টুইটারের। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের বিপথে চালিত করার অভিযোগে আগে থেকেই জেরবার ফেসবুক। তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে উস্কানিমূলক পোস্টের ক্ষেত্রে বিশেষ একটি দলের রাজনীতিকদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আমেরিকার ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার দায়ও ফেসবুকের উপরই চাপান অনেকে। তার পর সারা জীবনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে তারা। কিন্তু এর প্রভাব এসে পড়েছে ফেসবুকের ব্যবসায়। সোমবার তাদের শেয়ার দরে ৪.৫ শতাংশ পতন ঘটে। মোট বাজারমূল্য থেকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়ে যায়, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

তবে শুধু ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা বাসানোর জন্য নয়, বরং নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগে তাদের অধীনস্থ মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ বয়কট করারও হিড়িক পড়েছে। তাতেই এই বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ফেসবুকের মতো না হলেও, সোমবার ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে টুইটারেরও, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সোমবার তাদের শেয়ার দরে ১২ শতাংশ পতন ঘটে। নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো এবং উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত টুইটার হ্যান্ডলটি চিরকালের জন্য সাসপেন্ড করে দিয়েছে তারা। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত হ্যান্ডলটিতে ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৮০ লক্ষ (৮৮ মিলিয়ন)। প্রেসিডেন্টের হ্যান্ডল সাসপেন্ড করায় ট্রাম্প সমর্থকদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই টুইটার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।

দলে দলে অন্য আর একটি মাইক্রোব্লগিং সাইট 'পার্লার'-এ যোগ দিতে শুরু করেছেন তাঁরা। ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা প্রদানকারী অ্যামাজনের সঙ্গে এতদিন গাঁটছড়া বাঁধা ছিল তাদের। কিন্তু ক্যাপিটলে হামলার পর 'পার্লার'-এর সঙ্গে ব্যবসায় ইতি টেনেছে তারা। অ্যাপল এবং গুগলও অ্যাপ স্টোর থেকে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বেআইনি ভাবে চুক্তিভঙ্গ করা হয়েছে বলে অ্যামাজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে 'পার্লার'।

সোমবার বিকেলে সে খবর চাউর হতে অ্যামাজনের শেয়ার বাজারে ধস নামতে শুরু করে। তবে ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা তোলার কোনও প্রশ্ন নেই বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ফেসবুক এবং টুইটার। তাতে নিজের জন্য আলাদা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মই তৈরি করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।

তার জেরে আরও এক সপ্তাহ হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প সমর্থকদের হাত থেকে সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছে ফেসবুক এবং টুইটার। সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা সম্ভব নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে বলা হয়েছে সকলকে। সংস্থার দফতরের সামনে নিরাপত্তাও বাড়িনো হয়েছে।