বর্ধমান রাজবাড়ির অজানা ইতিহাস

পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হল বর্ধমান। রাঢ় অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে দামোদর নদের তীরে ৪০ মিটার উচ্চতায় বর্ধমান শহরটি অবস্থিত। বর্ধমানের ইতিহাস শুরু খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ সন তথা মেসোলিথিক বা প্রস্তর যুগের অন্তিম সময় থেকে। বর্ধমান নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কোনো কোনো মতে জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীরের নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়। আবার অন্যমতে পূর্ব ভারতে আর্যীকরণের সময় গড়ে ওঠা এই জনপদটির বর্ধিষ্ণুতার কারণে এটিকে বর্ধমান নামে অভিহিত করা হয় এই শহরকে।
রাজা তিলকচাঁদ ছিলেন বর্ধমানের প্রথম মহারাজধিরাজ। তাদের বংশের অন্যতম রাজারা হলেন প্রতাপচাঁদ ও মহতাবচাঁদ। ব্রিটিশ আমলে রানী বেনদেয়ী তার দেওয়ান বনবিহারীর পুত্র বিজনবিহারীকে দত্তক নিয়ে বিজয়চাঁদ নাম দিয়ে বর্ধমানের সিংহাসনে বসান। পূর্বে বর্ধমানের রাজবাড়ী ছিল কাঞ্চননগর এলাকায় সেখান থেকেই চলত সমস্ত শাসনকাজ। দামোদরে বারবার বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় শাসনকাজে ব্যাঘাত ঘটছিল। সেই কারণে মহারাজ তেজচাঁদ শহরের উচুঁ জায়গায় রাজবাড়ী তৈরির পরিকল্পনা করেন।
মহারাজা তেজচাঁদ এর পুত্র মহাতাবচাঁদ সেই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপান্তরিত করেন। ১৮৫১ সালে রাজবাড়ী সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন হয়। এবং রাজা মহাতাবচাঁদ রাজবাড়ী সৃষ্টি করায় রাজবাড়ীর নাম রাখা হয় ‘মহাতাব মঞ্জিল’। তার পর থেকে এই রাজবাড়ী থেকেই সমস্ত শাসনকার্য পরিচালিত হত। ১৮৮০ এর দশকে রাজা রানী সহ সকলেয় এই রাজবাড়ীতে চলে আসেন। এই রাজবাড়ীতেই রাজত্ব করেছেন মহাতাবচাঁদ, আফতাব চাঁদ, বিজয়চাঁদ ও উদয়চাঁদ।
এই রাজবাড়ীর দূর্গাপূজায় হল বর্ধমান জেলার সবচেয়ে প্রাচীন দূর্গাপূজা। ৩০০ বছরের পুরনো এই রাজবাড়ীর দূর্গাপূজা। এখানকার দেবীকে বলা হয় পটেশ্বরী। রাজবাড়ীতে কূলদেবী চন্ডী অবস্থান করায় অন্য কোনো মূর্তি পুজো করা যেত না। সেই কারণে পুরোহিতের মতে মূর্তি পুজো না করে পটে আঁকা দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। সেই থেকেই প্রতি বছর দেবী পটেশ্বরীর আরাধনা করা হয় এই রাজবাড়ীতে।
১৯৫২ সালের রলাল নেহেরু জমিদারি উচ্ছেদ আইন আনেন। যার ফলে একাধিক রাজতন্ত্র চলে যায় সরকারের হাতে। ফলে ১৯৫৩ সালে মহারাজ উদয়চাঁদ চিরকালের জন্য বর্ধমান ছেড়ে বেনারস চলে যান। ১৯৫৮ সালে বর্ধমান রাজ পরিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজবাড়ী সরকারের হাতে তুলে দেন। এবং ১৯৬০ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়হয় এবং যার প্রথম উপাচার্য ছিলেন সুকুমার সেন। ২০০৯ সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বর্ধমানকে হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে গ্ৰহন করেন।