রানাঘাট নিলামে কিনে নিয়েছিলেন যে ব্যবসায়ী

রানাঘাট  নিলামে কিনে নিয়েছিলেন যে ব্যবসায়ী

তাঁর নামেই চলছে রথ। অথচ, সে রথে তিনি আরোহী নন! দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রাকে নিয়ে সেদিন তিনি দর্শকমাত্র। জগন্নাথের মন্দির ঘিরে চক্রাকারে ঘোরে সুসজ্জিত প্রাচীন রথ। সেখানে আসীন নারায়ণ মূর্তি। ঠিক কবে থেকে ব্যতিক্রমী এই রথযাত্রার শুরু, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। তবে একটি বিষয়ে সকলেই একমত যে, রানাঘাটের সুবিখ্যাত পাল চৌধুরী পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপান্তির আমল থেকেই এই রথযাত্রার সূচনা। সময়টা ১০৬৯ বঙ্গাব্দ।

হুগলির খানাকুল থেকে রানাঘাটে এসে বসতি স্থাপন করলেন মহেশচন্দ্র পাল। তাঁর পানের কারবারী বড় নাতি কৃষ্ণকান্ত বা তাঁর ভাই শম্ভুকে লোকজন পালের বদলে পান্তি বলে ডাকত। স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী কৃষ্ণপান্তির কপাল হঠাৎ করেই  খুলে গেল ভাগ্য। বিবিধ ব্যবসা করে বিপুল ধনী হলেন কৃষ্ণপান্তি। মহারাজ শিবচন্দ্র তাঁকে চৌধুরী উপাধি দিলেন। বলা হয়, রানাঘাট গ্রাম নিলামে কিনে নিয়েছিলেন কৃষ্ণপান্তি এবং শম্ভুপান্তি।

 এই কৃষ্ণপান্তির আমলে চালু হয় রথযাত্রা। গল্প শোনাচ্ছিলেন, কৃষ্ণপান্তির অধস্তন সপ্তম পুরুষ দেবাশিস পাল চৌধুরী। তাঁর কথায় সতেরো শতকের শেষ পর্বে কোনও এক সময়ে কৃষ্ণপান্তি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে রথযাত্রার সূচনা করেন। সেই রথ এখনও চলছে নিজস্ব নিয়মে। ভারি অদ্ভুত সেই সব নিয়ম। দেবাশিসবাবু জানান, “আমাদের পারিবারিক মন্দিরে জগন্নাথের নিত্য পুজো হয়। তাঁর রথ হয়, অথচ সে রথে চড়েন নারায়ণ।

কেন এমন অদ্ভুত প্রথা, তা অবশ্য আমাদের জানা নেই। ছোট থেকে দেখে আসছি, রথের দিন মন্দিরের চারপাশে সাত বার প্রদক্ষিণ করে নারায়ণের রথ। এখনও সেভাবেই চলছে।”  বিশেষ পুজোপাঠের পর টান পরে রথের রশিতে। প্রায় সাত ফুট উচ্চতার যে রথ এখন চলে, তা কৃষ্ণপান্তির আমলের নয় বলেই জানান দেবাশিসবাবু। কৃষ্ণপান্তির আমলে গড়া জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা মূর্তি এখনও পূজিত হয় পারিবারিক মন্দিরে। প্রায় চার ফুট উচ্চতার সেই বিগ্রহ এবং রথ সাজানোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।