স্কুলের সরস্বতী পুজোর পুরোহিত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা

প্রায় দু’বছর পর সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে স্কুল খুলেছে। আর স্কুল খোলা মাত্রই বাগদেবীর আরাধনায় চিরাচরিত বাঁধাধরা ছক ভেঙে নতুন পথ দেখাল অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলে পুজোর জন্য সরস্বতীর মূর্তি গড়ল স্কুলেরই এক ছাত্র। আর সেই সরস্বতী মূর্তির পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকায় স্কুলেরই এক ছাত্রী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষের উদ্যোগেই এই অভিনব ছবি দেখা গেল অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ে। যা দেখে অভিভূত সমগ্র শিক্ষামহল।
সরস্বতী পুজো মানেই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে। তবে স্কুলের ছাত্রের হাতেই সরস্বতী মূর্তি গড়তে সচরাচর দেখা যায় না। আর স্কুলের ছাত্রীকে পুরোহিতের আসনে বসানোর ঘটনা তো অকল্পনীয়। কিন্তু এমনই অকল্পনীয় ভাবনাকে বাস্তবায়িক করে দেখালেন অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ। তাঁর ভাবনা ও অনুপ্রেরণাতেই স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র শুভদীপ শীল নিজের হাতে এবারে সরস্বতী মূর্তি গড়েন।
আর সেই মূর্তি পুজোয় পুরোহিতের আসনে বসল স্কুলেরই মাধ্যমিকের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী। ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে বেড়ে ওঠা শর্মিষ্ঠা পুজোর বিষয়ে তালিম নিয়েছেন তাঁর পুরোহিত বাবার কাছ থেকে। সরস্বতী পুজোয় কীভাবে মন্ত্রপাঠ করা হবে, কীভাবে সাজানো হবে পুজোর উপাচার- তা নিয়ে প্রায় ৩ মাস ধরে বাবার কাছে অনুশীলন চালিয়েছেন এই দশম শ্রেণির ছাত্রী। অন্যদিকে, ছোট থেকে মূর্তি গড়ায় পারদর্শী শুভদীপ শীল গত কয়েক মাস ধরে একনিষ্ঠভাবে ধীরে-ধীরে বাগদেবীর মূর্তি গড়ে তুলেছেন।
নিজের স্কুলের পুজোতে নিজের হাতে সরস্বতী মূর্তি গড়ে দিতে পেরে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত উচ্চ মাধ্যমিকের এই ছাত্র। অন্যদিকে, মহিলা হয়েও পুরোহিতের ভূমিকা নিতে পারায় আপ্লুত শর্মিষ্ঠা প্রধান শিক্ষককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। তার কথায়, “মহিলা পুরোহিতের বিষয়টি সাধারণত আমরা কেউ ভাবি না। কিন্তু নারীরাও যে এগিয়ে যেতে পারে, সমাজের কুসংস্কার ভেঙে যাতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেটাই প্রধান শিক্ষক তুলে ধরতে চেয়েছেন।
এটায় শুধু আমি নয়, স্কুলের সব ছাত্রীরাই খুশি।” আর উপনয়ন সম্পর্কে মাধ্যমিকের ছাত্রীর ভাবনা, “পুরুষদের উপনয়ন হয়, মহিলাদের উপনয়ন হয় না। সমাজে অনেকে বলেন, উপনয়ন ছাড়া পুজো হয় মা। আমি মনে করি, নারীদের উপনয়নের প্রয়োজন নেই। নারীদের দেহ সবসময়ই পবিত্র থাকে। আর কোনও শাস্ত্রে লেখা নেই, উপনয়ন ছাড়া কেউ পুজো করতে পারবে না বা কেবল পুরুষেরাই পুজো করতে পারবে।
এটা কুসংস্কার বা সমাজের কালো মানুষেরা প্রথা হিসাবে মেনে এসেছে।” অন্যদিকে, ছক ভেঙে বেরিয়ে ছাত্রের তৈরি মূর্তিতে স্কুলের ছাত্রীকে দিয়ে পুজো করানোর বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ বলেন, “সমাজে এখনও মেয়েরা অনেক জায়গায় উপেক্ষিত। মেয়েরাও সুযোগ পেলে পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই এবছর স্কুলের ছাত্রীকে দিয়ে সরস্বতী পুজো করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এমন সাহসী ভাবনার জন্য প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষামহলের বহু গুণীজনেরা।