ভালোবাসার জয়! বউ ফিরে পেলেন মুর্শিদাবাদের প্রেমিক স্বামী

শত শাসনের মোচড় ভেঙে ভালোবাসার জয়। ভালোবাসার জোড়ের কাছে খড়কুটোর মত উড়ে গেল বাধার প্রাচীর। পরিচয় থেকে ভালোলাগা আর তা থেকে প্রেম তারও পরে ভালোবাসা। আর সবশেষে পরিবারের অমতেই আইনসম্মত বিয়ে। ছেলের পরিবার বিয়ে মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার শুরু থেকেই আপত্তি জানায়। নবদম্পতির সুখের সংসারে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় মেয়ের পরিবার ৷
একদিন হঠাৎ করে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় মেয়ের পরিবারের সদস্যরা ৷ কিন্তু স্ত্রীকে ফিরে পেতে মরিয়া স্বামী৷ বুধবার আদালত কক্ষে পুনরায় চার হাত এক হতেই আবেগের বাঁধ ভাঙল। অসুস্থ স্ত্রী এজলাসে অচৈতন্য হয়ে পড়তে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সেবা শুরু করে দেন স্বামী৷ এজলাসে স্বামী-স্ত্রী এমন ছবি দেখে মেয়ের পরিবারকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ১৩ নম্বর এজলাসের ঘটনা ৷ মেয়ে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া থানা এলাকার বাসিন্দা রহমাতুন্নেছা খাতুন৷ আর ছেলে মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা আশিক আলি ৷ আশিকের আইনজীবী জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়ের জানান, দু’জনে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মুসলিম শরিয়ত-রেজিস্ট্রি মেনে বিয়ে করেন৷ সুখেই সংসার করছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু মারধর করে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় পরিবারের লোক৷
কোনও রকম যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছিল না৷ স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্বামী বাধ্য হয়ে ১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে কাটোয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন৷ একই সঙ্গে স্ত্রীকে ফেরতের আবেদন জানান৷ কিন্তু পুলিশি অসহযোগিতায় এতদিন তা হয়ে ওঠেনি৷ আজ, বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ফের চার হাত এক করে দিলেন৷ কিন্তু, এই কয়েক মাসের মধ্যে লাগাতার রহমাতুন্নেছা খাতুনের উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ৷
যাতে প্রেমিক-স্বামী আশিক আলির কাছে ফিরতে না হয়৷ কিন্তু না ৷ মন থেকে মেনে নিতে পারেননি রহমাতুন্নেছা-আশিক আলি৷ আদালতের নির্দেশে বুধবার কাটোয়া থানার পুলিশ রহমাতুন্নেছাকে হাজির করেন৷ আইনজীবীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আশিক আলিও ৷ ভরা আদালতে রহমাতুন্নেছার কাছে বিচারপতি জানতে চান তিনি স্বামীকে ফিরে পেতে চান কিনা ৷ কিন্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে ইতস্তত করেন রহমাতুন্নেছা ৷
রহমাতুন্নেছাকে আশ্বস্থ করেন বিচারপতি ৷ তারপরই স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার আর্জি রাখেন রহমাতুন্নেছা ৷ আদালত কক্ষেই পুনরায় চার হাত এক করার নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। এ দিকে চার হাত এক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর কোলে ঢলে পড়েন রহমাতুন্নেছা ৷ কারণ, শারীরিক ভাবে তিনি অসুস্থ ছিলেন৷ তাঁকে উদ্ধার করে কলকাতা হাই কোর্টের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ চিকিৎসকের পরামর্শে সেখানে রহমাতুন্নেছাকে স্যাল্যাইন জল পান করানো, হাত-মুখ ধোয়ানো থেকে শুরু করে সমস্তটাই করেন আশিক আলি ৷ আজ থেকেই পুনরায় সংসার শুরু করবেন তাঁরা ৷