প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া ভারতের এই গ্ৰাম পুরুষদের ই প্রবেশ নিষিদ্ধ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া ভারতের এই গ্ৰাম পুরুষদের ই প্রবেশ নিষিদ্ধ

ভারতের হিমাচল প্রদেশের পার্বতী নদীর তীরে কসোল গ্রামটি অবস্থিত। সেখানকার মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই কাছে টেনে নেয়। আর এই গ্রামেই ভারতীয় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। কসোল-হিমাচলের কুলু জেলার পার্বতী নদীর তীরবর্তী এই গ্রামকে মিনি ইজ়রায়েল বলা হয়। পার্বতী নদীর ধার ধরে ট্রেক আর এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য বহু বিদেশি পর্যটককে প্রতিবছর টেনে আনে এখানে। কুয়াশাঘেরা ছোট্ট গ্রামটির দিন শুরু হয় মাশরুম থুকপা দিয়ে আর শেষ হয় আর আপেল-চায়ের সঙ্গে। শোনা যায় একজন ইজ়রায়েলি পর্যটক এক শতাব্দী আগে এই গ্রামটিকে জনসমক্ষে আনেন। তাই-ই ইজরায়েলের সঙ্গে এই গ্রামের যোগ আত্মিক।

ভারতীয় পুরুষদের এই গ্রামে ঢোকার নিষেধাজ্ঞা কেন? স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, ছুটি কাটাতে আসা বিদেশি মহিলা পর্যটকদের শ্লীলতাহানির বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে অতীতে। আর প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা যায় অভিযুক্ত পুরুষটি ভারতীয়। সেই কারণে পর্যটকদের সুরক্ষার স্বার্থে এই গ্রামের মানুষজন দেশীয় পুরুষদের জন্য ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

চারদিকে সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য, উচ্ছ্বল বহমান পার্বতী নদী আর বিদেশি হিপ্পি টুরিস্ট ও ট্রেকারদের দল দেখে মনে হবে বোধহয় বিদেশেই এসে পড়েছি। ট্রেকিংয়ের অনেক রুট শুরু হয় কাসোল থেকে। ট্রেক করতে গিয়ে টেন্ট খাটিয়ে কাটাতেই পারেন একটা রাত। কিন্তু আপনাকে হতে হবে অ-ভারতীয়।মানালি থেকে কাসোলের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। কুলু থেকে কাসোলের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। দিল্লি থেকে কাসোলের দূরত্ব ৫২০ কিলোমিটার। চণ্ডীগড় থেকে কাসোল পৌঁছতে সময় লাগে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। রেলপথে যোগিন্দর নগরে নেমে ১৪৫ কিলোমিটার ড্রাইভ করলেই কাসোল পৌছানো যায়। 

সেখানকার খাবার থেকে শুরু করে যাবতীয় কোনো কিছুতেই ভারতীয়দের ছোঁয়া নেই। সবকিছুই ইসরায়েলিদের নিয়মেই চলে সেখানে। কারণ এই গ্রামের সব পর্যটকই ইসরায়েলি। হিমাচলের অন্যান্য পর্যটন স্থানের মতো কসোলেও ভিড় খুব কম। সুতরাং, আপনি এখানে শান্তিতে প্রকৃতির নৈসর্গ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। যুবক যুবতীদের ঘোরাঘুরি করার জন্য এই জায়গাটি খুবই সুন্দর ও মনমুগ্ধকর।

অপরূপ এক গ্রামএই গ্রামে আগে কেবলমাত্র একটি বাস স্টপ ছিল। তবে জনবসতি ছিল না। এরপর ধীরে ধীরে এখানে বসতি স্থাপন হতে শুরু করে। ২০১৪ সাল থেকে অ্যাডভেঞ্চারের পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেন। কোনো এক সময় ইজরায়েলের কিছু ভ্রমণকারী বেড়াতে এসে এই স্থানটির প্রেমে পড়ে যায়। তারা স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে লিজে কিছু জমি নিয়ে নিজেদের দেশীয় কায়দায় কয়েকটি কটেজ ও ক্যাফে তৈরি করে। স্থানীয় মানুষদের ভালো বেতনে কাজে নিয়োগ করে তাদেরকে ইসরায়েলি রান্না-বান্না থেকে সাধারণ জীবনযাত্রা সবকিছু শিখিয়ে নেয়।

গ্রামটি ইসরায়েলিদের তীর্থস্থানএর পেছনে কারণ হচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই কঠিন প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে এখানে পাঠানো হয় কিছুদিন বিনোদনের মধ্যে কাটানোর জন্য। ক্রমে এই ছোট্ট পাড়াটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরো কিছু কটেজ, ক্যাফে ও পাব তৈরি করে একটা পূর্ণাঙ্গ ট্যুরিস্ট স্পটে পরিণত করে। পার্বতী নদীর তীরে কসোল

পার্বতী নদীর তীরে কসোলপার্বতী নদীর তীরের এই কসোল গ্রামটি বর্ধিত হয়ে নদীর দুই পাড়ে ছড়িয়ে গেছে। এক পাড়ে পুরনো কসোল অন্য পাড়ে নতুন কসোল। স্থানটি এখন ছোটখাট টাউনে পরিণত হয়েছে। এদিক ওদিক কয়েকটি ইসরায়েলি পতাকাও চোখে পড়বে। মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট, এটিএম, দোকানপাট সবই পাওয়া যাবে। যদি এটিএমে টাকা না পাওয়া যায় চিন্তার কিছু নেই। কারণ কসোলের একপাশে রয়েছে বিখ্যাত মালানা ভ্যালি টাউন আর অন্য পাশে বিখ্যাত মণিকরণ ভ্যালি টাউন। এসব স্থানে অনেক এটিএম বুথ পাওয়া যাবে। কসোল আর মণিকরণের দুরত্ব মোটামুটি তিন কিলোমিটারের মতো।কসোল যাওয়ার সেরা সময় এপ্রিল থেকে জুলাই-অগস্ট। ডিসেম্বরে ঠাণ্ডা একটু বেশি থাকে, কিন্তু সেই সময়ে খুব নিরিবিলি থাকে কসোল।