পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়, জানুন মায়ের বিভিন্ন রূপ

পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়, জানুন মায়ের বিভিন্ন রূপ

আজবাংলা        ‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। এই শব্দের অর্থ ‘কৃষ্ণ’ (কালো) বা ‘ঘোর বর্ণ’। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ যে ভদ্রকালীর উল্লেখ আছে, তা দেবী দুর্গারই (পার্বতী) একটি রূপ। তন্ত্র পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তোড়লতন্ত্র অনুসারে, কালী নয় প্রকার |

কালী বা কালিকা হলেন একজন হিন্দু দেবী। তার অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় কালীপূজা করে থাকে। তন্ত্র অনুসারে কালী দশমহাবিদ্যা-র প্রথম দেবী। শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।

পুরাণ ও তন্ত্র সাহিত্যে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেগুলি হল-দক্ষিণাকালী(শ্যামা), মহাকালী, শ্মশানকালী গুহ্যকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, আদ্যাকালী, চামুন্ডাকালী। আবার বিভিন্ন মন্দিরে "ব্রহ্মময়ী", "ভবতারিণী", "আনন্দময়ী", "করুণাময়ী" ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা পূজা করা হয়।

এই সব রূপের মধ্যে দক্ষিণাকালীর বিগ্রহই সর্বাধিক পরিচিত ও পূজিত। দক্ষিণাকালী চতুর্ভূজা। তার চার হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্ন মুণ্ড, বর ও অভয়মুদ্রা রয়েছে। তার গলায় রয়েছে নরমুণ্ডের মালা। দেবীর গায়ের রং কালো। মাথায় আলুলায়িত চুল এবং তিনি শিবের বুকে ডান পা আগে রেখে দণ্ডায়মান।

ব্রহ্মযামল নামক তন্ত্রগ্রন্থের মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। এছাড়া মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ভাদ্র ও পৌষ মাসের অমাবস্যায় কালী পুজো বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে।

আমরা যে রূপে কালীকে পুজো করি সেখানে কালীর পায়ের নীচে শায়িত থাকেন শিব। আসলে অসুরদের হারিয়ে প্রবল বিজয় নৃত্য শুরু করেছিলেন কালী। অসুরদের ধরহীন মুন্ড দিয়ে তিনি বানিয়ে ছিলেন কোমড়বন্ধ ও গলার মালা। কালীর সেই নৃত্য স্বর্গে ত্রাহি-ত্রাহি রব ছাড়ে। কালীর নাচে তখন সব কিছু প্রায় ধ্বংস হতে শুরু হয়েছে |

এমন অবস্থায় কালীর সেই নৃত্য মহাদেব বন্ধ করতে কালীর সামনে গিয়ে শুয়ে পরেন। তার পরে নিজের পায়ের নীচে স্বামীকে শুয়ে থাকতে দেখে জিভ কাটেন তিনি। পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে সেই সময় কালীর সেই রূপ পূজিত হয়ে আসছে আজও।