ভারতের গুপ্তধনে ঠাসা রহস্যময় এই মন্দিরে পাহারায় আছে বিষধর সাপেরা

ভারতের গুপ্তধনে ঠাসা রহস্যময় এই মন্দিরে পাহারায় আছে বিষধর সাপেরা

কেরলের  রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত পদ্মনাভস্বামী মন্দির একটি হিন্দু মন্দির  , যাকে ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য।  শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির ইতিহাস খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর।  ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই মন্দিরের মূল দেবতা হলেন, ফনা তুলে থাকা অনন্তনাগের উপরে আধশোয়া অবস্থায় ভগবান বিষ্ণু।

স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণে   এই মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায়।শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবমুর্তিটি এর গঠন শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে ১২০০৮ টি শালগ্রাম শিলা, যেগুলি নেপালের গন্ডকী নদীর তীর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। শ্রীপদ্মনাভীস্বামী মন্দিরের গর্ভগৃহ একটি পাথরে স্ল্যাব দিয়ে তৈরি যার উপরে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের মূল দেবমূর্তিটি রয়েছে এবং মুর্তিটির মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলি দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়।

মন্দিরের স্থাপত্য পাথর এবং ব্রোঞ্জের কর্মের উপরে প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের ভিতরের অংশে রয়েছে সুন্দর চিত্রকর্ম । যার মধ্যে কিছুটা অংশ হল অর্ধশায়িত অবস্থায় ভগবান বিষ্ণুর পূর্ণ দৈর্ঘ্যের মুর্তি, নরসিংহ স্বামী , গনপতি দেব এবং গজলক্ষ্মী দেবী। মন্দিরের 80 ফুট উচ্চতার ধ্বজ স্তম্ভটি সোনার জল করা রূপোর পাত দিয়ে মোড়া।এই মন্দিরের  আকর্ষক স্থাপত্য হল নবগ্রহ মন্ডপ।যার ভিতরের ছাদে নবগ্রহের  ছবি প্রদর্শিত আছে। শ্রী পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরকে ‘স্বর্ণ মন্দির’ রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

পদ্মনাভস্বামীর মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, ত্রিবাঙ্কুরের রাজ পরিবারের তরফে পরিচালিত একটি ট্রাস্ট।২০১১ সালে মন্দিরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন এক আইনজীবি। সেইবছরই সুপ্রিমকোর্ট মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তির একটি তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেয়। জানা যায় গর্ভগৃহের নিচে ২০ ফুট গভীরে রয়েছে কতকগুলো গুহাকক্ষ। মন্দির কর্তৃপক্ষ ছয়টি ভল্টের কথাই সবাই জানতো।

কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরে জরিপ করার সময় আরো দুটি গুহাকক্ষ আবিষ্কৃত  হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৮টি গুহাকক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে শ্রী পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের অভ্যন্তরে।A গুহাকক্ষটি ১৯৩০ সালে শেষ খোলা হয়েছিল। C, D, E, F  গুহাকক্ষগুলো নিয়মিত খোলা হতো। সেগুলো মন্দিরের দুজন পুরোহিতের অধীনে থাকে।

জরিপের প্রয়োজনে ৫টি গুহাকক্ষ খোলা হয়েছে- C, D, E, F এবং A, আর বাকি গুহাকক্ষগুলো খোলা হয় পরে। রিপোর্ট থেকে জানা যায় গুহাকক্ষ-C  তে ১,৪৬৯ প্রকার, গুহাকক্ষ- D তে ৬১৭ প্রকার, গুহাকক্ষ-E ও গুহাকক্ষ-F এ ৪০ প্রকার আর কেবলমাত্র গুহাকক্ষ ‘এ’ তে রয়েছে ১ লক্ষ ২ হাজার প্রকার দ্রব্য। যার মধ্যে রয়েছে  কয়েকশো মূল্যবান হিরা,

রুবি এবং অন্যান্য মহামূল্যবান পাথরে সজ্জিত সাড়ে ৩ ফুট লম্বা নিখাদ সোনার তৈরি মহাবিষ্ণু মূর্তি।অগণিত হীরা, নীলা খচিত একটি সোনার সিংহাসন যাতে অন্তত সাড়ে ৫ মিটার দীর্ঘ একটি মূর্তি স্থাপন করা যায়। ১৮ ফুট লম্বা সোনার চেইন,রুবি, পান্না,  ৩৬ কেজি ওজনের ঝালর, রত্নখচিত ১,২০০টি সোনার চেইন , ৫০০ কেজি ওজনের সোনার স্তূপ, প্রভৃতি।আর আছে সোনার মোহর।

নানা সময়ের রাশি রাশি সোনার মোহর রয়েছে গুহাকক্ষগুলোতে। এর মধ্যে রোমান সাম্রাজ্যের কয়েক হাজার মুদ্রা, নেপোলিয়নের অজস্র মুদ্রা, আর খ্রিস্টপূর্ব ২০০ সালের ১,৯৫,০০০টি স্বর্ণমুদ্রা যেগুলোর ওজন সব মিলিয়ে ৮০০ কেজি।তবে দুই নম্বর ভল্টের ধনসম্পত্তির হিসাব আজও অধরা। কারণ সেই ভল্টের লোহার দরজা শত চেষ্টা করেও খোলা যায়নি।

কোনও এক অজানা মন্ত্রবলে মন্দিরের ভেতরের এই দু’নম্বর ভল্টটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দু’নম্বর ভল্টের দরজার গায়ে আঁকা রয়েছে সাপের ছবি, যা দেখে বহু শাস্ত্রজ্ঞ জ্ঞানী মুনি-ঋষিরা বলেন যে, বিশালাকার গোখরো সাপ এই ভল্ট পাহাড়া দিচ্ছে। তাই এই ভল্টের দরজা খোলা কার্যত অসম্ভব। শুধু তাই নয়, একমাত্র গড়ুর মন্ত্র জপ করেই নাকি এই দরজা খোলা সম্ভব।রাজপরিবারের বিশ্বাস, এই গুহাকক্ষ খুললে ঘনিয়ে আসবে ভয়াবহ বিপদ।

রাজপরিবারের এক সদস্যের মতে , এই প্রকোষ্ঠের মধ্যে এক সুড়ঙ্গ পথ আছে যার অন্য প্রান্তটি সোজা ওখানকার রাজার মহল হয়ে সমুদ্রের সাথে মিশেছে, তাই দরজা’টির কোথাও কোনও ছিদ্র নেই। আবার কেউ কেউ বলছে ওই কক্ষে আছে বিশালকার একটা কিংকোবরা, যার অনেকগুলো মাথা ও জিভ। সেই কিংকোবরাই নাকি এই দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের রক্ষক। তবে এর রহস্য ভেদে করা এখনও সম্ভব হয়নি ,  তাই যত দিন যাচ্ছে এই গুহাকক্ষ নিয়ে রহস্য ততোই ঘনীভূত হচ্ছে।