বাংলায় নেই চাহিদা, ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছে মালদার মাখনা

হরিশ্চন্দ্রপুর মালদা জেলায় তেমন চাহিদা নেই। তবে ভিনরাজ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মাখনার।পুষ্টিগুণে ভরপুর এই Prickly water lily মাখনার মূলত বিহার, ঝাড়খন্ড ও উত্তরপ্রদেশ সহ উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য গুলিতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে মালদহ জেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মাখনা ভিনরাজ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। লাভজনক এই ফসল উত্পাদনে ব্যাপক আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে মালদহ জেলার কৃষকদের মধ্যে।
মালদহ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহার সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় প্রথম শুরু হয় মাখনা চাষ। মাখনা জলজ উদ্ভিদ। মূলত জলাভূমিতে চাষ হয়। উত্তর মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকাজুড়ে প্রচুর জলাভূমি রয়েছে। স্থানীয়রা সেই জলাভূমি গুলিতে প্রথম মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। ১২ থেকে ১৫ বছর আগে থেকে মালদা জেলায় শুরু হয় মাখনা চাষ।
লাভবান ফসল চাষে সফল হওয়ায় বর্তমানে উত্তর মালদাহের একাধিক ব্লকে মাখনা চাষ রমরমিয়ে শুরু হয়েছে। মূলত হরিশ্চন্দ্রপুর- ১ও ২ নম্বর ব্লক, রতুয়া-১ ও ২ নম্বর ব্লক ও চাঁচল- ১ ও ২ নম্বর ব্লকে সবচেয়ে বেশি মাখনা চাষ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ইংরেজবাজার ,মানিকচক ও পুরাতন মালদহ সহ কিছু এলাকায় অল্পবিস্তর মাখনা চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা।
জলাজমি লিজে নিয়ে অধিকাংশ কৃষক মাছ চাষ না করে মাখনা চাষের দিকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মালদহ জেলা শিল্প কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরসুমে মালদা জেলায় মোট ২৩,৫০০ বিঘা জমিতে মাখনা চাষ হয়েছে। বর্তমানে মালদা জেলার প্রায় এক হাজার জন মাখনা চাষের সাথে জড়িত। মাখনা প্রতি এক বিঘায় তিনশো কেজি পর্যন্ত ফলন হয়।
কৃষকেরা বাজারে সাত হাজার টাকা কুইন্টাল দরে মাখনা বিক্রি করেন। তবে বাজারে দামের হেরফের হয়। কৃষকদের কাছ থেকে কিছু ব্যবসায়ী মাখনা কিনে নেন। সেগুলি তারা বিহার ঝাড়খণ্ড উত্তরপ্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেন। গত ১৫ বছর ধরে মালদা জেলায় মাখনা চাষ শুরু হলেও এখনো এই চাষে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শিখতে পারেননি কৃষকেরা।
বর্তমানে মালদহ জেলার কৃষকরা মাখনার বীজ বপন থেকে পরিচর্যা করে থাকেন। জল থেকে মাখনা তোলার কাজের জন্য এখনো ভরসা বিহারের শ্রমিকেরা। প্রতিবছর বিহারের শ্রমিকেরা মালদহে এসে মাখনা জল থেকে তোলেন।
ইতিমধ্যে জেলার কৃষকদের মাখনা চাষ সম্পূর্ণভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মালদা জেলা শিল্প কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মাখনা চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বিক্রি কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। শুধু তাই নয় মাখনা চাষে কৃষকদের সহযোগিতার জন্য সরকারি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ক ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।