গুজরাট ভ্রমণ

ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গুজরাট রাজ্য ভারতের “পশ্চিমের মণি”। ভারতের এক সবচেয়ে শিল্পোন্নত এবং সমৃদ্ধ রাজ্য গুজরাত আধুনিক প্রতিবেশ এবং যুগবাহিত ঐতিহ্যের একটি আনন্দময় সংমিশ্রণ। এই রাজ্যের নাম ‘গুজারাত্তা’ নাম থেকে গৃহীত, যার অর্থ হল ‘গুজ্জারের দেশ’, একটি উপজাতি যারা দীর্ঘ পঞ্চম শতাব্দী থেকে ভারতে আছে। কিন্তু কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে কিছু এলাকা যেমন লোথাল, ধোলাবিরা, রংপুর সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার সময়ের অন্তর্গত।
তখন থেকে, এই রাজ্য বহু পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী হয়ে রয়েছে, যেমন – মৌর্য, খিলজি এবং অন্যান্য মুসলিম শাসক, মারাঠা এবং ব্রিটিশ পর্যন্ত। গুজরাটের মানুষের মধ্য দিয়ে এই রাজ্যের স্পন্দনশীল সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে। তারা রঙিন পোশাক পরতে ভালবাসেন এবং নারীরা অনেক অলঙ্কার পরিধান করতে পছন্দ করেন।
এখানকার অধিকাংশ মানুষ গুজরাটি ভাষায় কথা বলে। হিন্দি, উর্দু, সিন্ধি ও ইংরেজি ভাষাও গুজরাটে প্রচলিত। গুজরাট সারা বছর ধরে একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু উপভোগ করে। তবে, এই রাজ্যের কিছু অংশ, যেমন কচ্ছের অঞ্চল শুষ্ক এবং অত্যন্ত উষ্ণ জলবায়ুর শিকার হয়। এই রাজ্য পরিদর্শন করার সর্বোত্তম সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে।
ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিস্ময়কর রাজ্য গুজরাট দেশের এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য। এই রাজ্য তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক তাৎপর্য, হস্তশিল্প এবং অগণিত পর্যটক আকর্ষণের জন্য সুখ্যাত। ভারতের সবচেয়ে শিল্পোন্নত অঞ্চল হওয়া ছাড়াও গুজরাট সমগ্র দেশের একটি প্রধান কেন্দ্র। প্রেম, সহজাত দক্ষতা, রহস্য, স্পন্দনশীল রঙ এবং অসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি দেশ গুজরাট অসংখ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
গুজরাটে দেশেরএক অন্যতম দীর্ঘ উপকূলরেখা রয়েছে। অসাধারণ সৈকত রিসর্ট, তীরবর্তী মন্দির ও নীল উপহ্রদ সহ গুজরাট শ্রেষ্ঠ সমুদ্র-সৈকতের দেশ। প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং ধর্মীয় মিনারের সমন্বয়সহ গুজরাট ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরোদা গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী শহরের নাম বরোদা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবরাত্রী উৎসবের গড়বা নৃত্যের জন্য বিখ্যাত এই শহর। গায়েকওয়াদ রাজপরিবার অষ্টাদশ শতাব্দিতে শহরটিতে শাসন শুরু করেন। তাদের বিলাসবহুল প্রাসাদের নাম লক্ষ্মী ভিলাস প্যালেস। এটি ইন্দো-সারাকেনিক স্থাপত্যে নির্মিত। ৫০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তীর্ণ এটি। আহমদাবাদ শহর থেকে বরোদা শহরের দুরত্ব ১১৫ কিলোমিটার।
সড়কপথ দ্বারা – ভারতীয় জাতীয় এক্সপ্রেসওয়ে ১ এবং জাতীয় মহাসড়ক ৮ দ্বারা বদোদরা ভ্রমণ অনেক সুবিধাজনক হয়েছে। জনসাধারণের সড়ক পরিবহনের জন্য ভি.টি.পি.এল দ্বারা বাস পরিষেবা প্রদান করা হয় এবং তার পাশাপাশি স্থানীয় ট্যাক্সি ও অটোরিকশা উপলব্ধ আছে। বদোদরা রেলওয়ে স্টেশন এই শহরের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন যেখানে দিয়ে প্রায় ১৫০-টি ট্রেন চলাচল করে।
যেই ট্রেনগুলি ভারতের সমস্ত প্রধান শহরের সাথে বদোদরাকে সংযুক্ত করে । বদোদরার একমাত্র বিমানবন্দর যা এই শহরকে নয়া দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, নাগপুর এবং হায়দরাবাদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ভাবে সংযুক্ত করে। এই শহরে খুব শীঘ্রই তার নিজস্ব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৈরি হবে। বদোদরা একটি প্রাচীনতম শহর এবং একটি সাংস্কৃতিক স্থান হওয়ায় এখানে অসংখ্য পর্যটক আকর্ষণ রয়েছে। চমৎকার প্রাসাদ, প্রাচীন মন্দির, খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিউজিয়াম গুলি সারা দেশজুড়ে মানুষদের আকর্ষণ করে। এর মধ্যে কয়েকটি হল –
লক্ষ্মী বিলাস প্যালেস,মকরপুরা প্রাসাদ, প্রতাপ বিলাস প্যালেস, নজরবাগ প্যালেস,বরোদার মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়, অরবিন্দ আশ্রম, হাজীরা মকবরা, দক্ষিণামূর্তি মন্দির, কীর্তি মন্দির, বরোদা মিউজিয়াম ও চিত্র গ্যালারি, মহারাজা ফতেহ্ সিং মিউজিয়াম, জুবিলি বাগ, সায়াজি বাগ, শূলপানেশ্বর অভয়ারণ্য, সিন্ধ্রোত নেচার পার্ক, ইত্যাদি।
আহমেদাবাদ মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে যুক্ত অপরিমেয় ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কারণে আহমেদাবাদ গুজরাটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে এক অন্যতম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শিত গুজরাটের এই বিখ্যাত পর্যটক গন্তব্য তার অনন্য স্থাপত্যের জন্য জনপ্রিয় যা ইসলামী এবং হিন্দু শৈলীর একটি স্পন্দনশীল সংমিশ্রণ