হুগলীর ত্রিবেণীর ডাকাত কালী

হুগলীর ত্রিবেণীর ডাকাত কালী

কালো রঙ, টকটকে লাল জিভ, গলায় মুণ্ডুর মালা, শক্তির দেবী কালী রূপ দেখলেই মাথায় চলে আসে রোমহর্ষ করা সব কাহিনী। আর নানা সাধকদের পাশাপাশি সেসব কাহিনীতে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলার সব নামকরা নৃশংস ডাকাতদের নামও। শক্তির আরাধ্যা কালী আর এই সব ডাকাতরা ডাকাতিতে যাওয়ার আগে মা কালীর পুজো করত। আর সেসব থেকেই জন্ম নিয়েছে নানা গল্পের। এই সব ডাকাতরা প্রতিষ্ঠা করেছেন নানা কালী মন্দিরের। তেমনই এক একজন হলেন রঘু ডাকাত।

তবে বাংলার নানান ইতিহাসে অনেক জায়গাতেই রঘু ডাকাতের নাম এবং তার প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের কথা পাওয়া যায়। ডাকাত কালীর সন্ধানে, গঙ্গার পশ্চিম তীর বরাবর ডুমুরদহ থেকে যদি আরো কিছুটা দক্ষিণে ও ২০০ বছর পিছিয়ে যাওয়া যায়, আমরা পৌঁছে যাব রঘু ডাকাতের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিবেণীর বাসুদেবপুরের ডাকাত কালী মন্দিরে। যে সাতটি গ্রাম নিয়ে সপ্তগ্রামের সৃষ্টি তার অন্যতম বাসুদেবপুর। ত্রিবেণী ঘাটের এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি প্রধান রাস্তার সংযোগস্থলের পাশেই জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে রয়েছে এই ডাকাত কালীর মন্দির।

বাসুদেবপুরের দুই কুখ্যাত ডাকাত রঘু ডাকাত আর বুধো ডাকাত। এই দুই ডাকাতের আরাধ্যা দক্ষিণা কালী মন্দিরটি গম্বুজাকার, এক চূড়াবিশিষ্ট, এবং সামনে বিশাল চাতাল। মন্দিরের পিছনে রয়েছে একটি পুকুর যেখানে নাকি ডাকাতরা স্নান সেরে পুজো দিত বলে শোনা যায়। বর্তমানে মন্দিরটির বাইরের রূপে সংস্কারের ফলে আজবেস্টস, টাইলস ইত্যাদি আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও প্রাচীন পরম্পরাগুলি সবই আজও বজায় আছে। মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত সুমন চক্রবর্তীর পিতা কানাইলাল চক্রবর্তীর কাছে জানা গেল সেই সব পুরনো গল্প… আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগেও এই স্থান ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা, জনবসতিহীন।

দুপুর ৩টের পর এই অঞ্চলের ছায়া মাড়ানোও ছিল দুঃস্বপ্নের সামিল। এই ডাকাত কালী মন্দিরে নরবলির রীতি চালু ছিল। বর্তমানে প্রতি অমাবস্যাতে ছাগবলি দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। বিশেষ বিশেষ পুজোর দিনগুলোতে মা-কে ল্যাটামাছ পোড়া ভোগ দেওয়া হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষে অন্নকূট এবং কার্তিক মাসের দীপাবলি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব, এবং সেই উৎসব উপলক্ষে এই মন্দিরে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।