তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিল প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা কর্মী

তনুজ জৈন হরিশ্চন্দ্রপুর : মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে উলটপুরাণ। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ধস শাসক শিবিরে। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিল প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা কর্মী। দুর্নীতি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়েই এই যোগদান বলে জানালো যোগদানকারীরা। যোগদান কর্মসূচি থেকে শাসকদলকে তীব্র আক্রমণ কংগ্রেসের। পাল্টা কটাক্ষ তৃণমূলের।
পঞ্চায়েত ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। হাতে আর মাত্র কয়েক মাস সময়। তার আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে জোর ধাক্কা খেলো শাসক শিবির। বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেসের দলীয় কার্য্যালয়ে প্রাক্তন বিধায়ক মুস্তাক আলমের হাত ধরে তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দিল হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় পাঁ চশতাধিক তৃণমূল নেতা কর্মী। যাদের মধ্যে রয়েছে বুথ সভাপতি ব্লক কমিটির সদস্য সহ বিভিন্ন পদাধিকারীরা।
যোগদানকারীদের দাবি দুর্নীতিতে ভরে গেছে তৃণমূল। দলের মধ্যে নেই কোন নিয়ম শৃঙ্খলা। এই দলে থেকে তারা মানুষের জন্য কাজ করতে পারছে না। তাই তারা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। এমনকি পঞ্চায়েত ভোটে সবকটা আসন দখল করবে কংগ্রেস রীতিমতো হুশিয়ারি দিল যোগদানকারীরা। এই যোগদান নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা মুস্তাক আলমের।
তিনি বলেন তৃণমূলের উচুতলা থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত দুর্নীতিতে ভরে গেছে। বিরোধী কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাচ্ছে। মানুষ আর সহ্য করবে না। সব কিছুর জবাব দেবে। যদিও এই যোগদান কে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবি ভোটের আগে প্রচারে আসার জন্য কংগ্রেস নাটক করছে। বিধানসভা ভোটের মতোই পঞ্চায়েত ভোটেও উন্নয়ন দেখে মানুষ দুহাত তুলে তৃণমূলকে ভোট দেবে।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তুঙ্গে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা। প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম বলেন, সকলেই তৃণমূলের প্রতি বিতশ্রদ্ধ। ওদের বড় বড় নেতা-মন্ত্রীরা কোটি কোটি টাকা চুরি করে জেলে। পঞ্চায়েতের প্রত্যেকটা প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে।বন্যা-ত্রাণ নিয়ে বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে এই এলাকায়। সন্ত্রাস আর মিথ্যা মামলার দিন এবার শেষ।
যোগদানকারী শামীম আহমেদ বলেন, আমি এর আগে পঞ্চায়েত সদস্য ছিলাম। বর্তমানে বুথ সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। এই দলের মধ্যে কোন রকম নীতি, নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। চারিদিকে দুর্নীতি। মানুষের জন্য কাজ করতে আমরা কংগ্রেসে যোগ দিলাম। যোগদানকারী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি ব্লক কমিটির সদস্য ছিলাম। তৃণমূলে থাকার মত পরিবেশ নেই।
চারিদিকে শুধু দুর্নীতি আর সন্ত্রাস। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আমরা কংগ্রেসের হয়ে জোর কদমে প্রচার করব। কোন রকম ধমকি হুমকি শুনবো না। সব আসন কংগ্রেস দখল করবে। হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, প্রচারে আসার জন্য এইসব যোগদান লোক দেখানো। কোথাও এক দুই জন যোগ দিতে পারে।
তৃণমূলের তাতে কোন ফারাক পড়বে না। কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি নেই। মানুষ মমতা ব্যানার্জির উন্নয়ন দেখে ভোট দেবে। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল সমগ্র মালদা জেলা। গনি খান চৌধুরী থেকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নেতৃত্বে বারবার মালদায় উড়িয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই কংগ্রেস জমি হারাতে শুরু করে এই জেলায়। বিধানসভা ভোটে ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ফের নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া কংগ্রেস।