তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে ঠিকাদারি করা যাবে না, হুঁশিয়ারি দিলেন অভিষেক

হলদিয়ায় শ্রমিক সংগঠনের সভা থেকে এক দিকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে যেমন আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই দলীয় জেলা নেতৃত্বকেও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়ালেই কড়া ব্যবস্থা নেবে দল। তিনি বললেন, রানিচক সংহতি ময়দান আমাদের জন্য ছোট হয়ে যাবে, তা ভাবিনি। এত মানুষ এসেছেন এখানে।
দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে আমি বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশে যাই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি শ্রেষ্ঠ শ্রমিক সমাবেশ। আমাদের দু'দিন ব্যাপী এই কর্মসূচি হয়েছে। সেখানে শুধু নেতারা বলেছেন কর্মীরা শুনেছেন তা নয়। গতকাল স্বাধীনতা দিবস প্রকৃত অর্থে পালিত হয়েছে হলদিয়ায়। কর্মীরা বলেছেন, নেতারা শুনেছেন।
যে বা যাঁরা বলেছেন তাঁদের সব কথা আমার কাছে এসে পৌঁছেছে৷ কে অনুগামী সেজে দলে ঢুকে, দলের বারোটা বাজিয়েছে তা আমি দেখেছি। সেই অনুগামী এখানেও এসেছে। কে পয়লা মে বিজেপির পতাকা তুলে, পরের দিন টিএমসির পতাকা তুলেছে তাঁরও তালিকা আমার কাছে আছে। তাই আজ এখানে দেওয়াল আমি চূর্ণ করলাম। আজ থেকে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হল।
আমার যা দরকার আমি সরাসরি বলব। আপনাদের যা দরকার আপনারা সরাসরি বলবেন। এখানকার যিনি সর্বেরসর্বা ছিলেন, তিনি ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে এই পূর্ব মেদিনীপুরের আবেগ বেচে দিয়েছেন দিল্লির কাছে। দিল্লির তল্পিবাহক হয়ে দিন রাত কাটাচ্ছেন। তুমি দুবার দিল্লির বুকে আমার মাথা নীচু করেছো। আমি তোমার দুটো এমপিকে নিয়ে নিয়েছি।
বলে বোঝাতে পারছি না। দরজা খুললে দলটাই উঠে যাবে। হলদিয়ায় দুদিন ধরে যে বিশেষ কর্মসূচি চলছে তৃণমূলের, তার মধ্যে গতকাল রুদ্ধদার দলীয় বৈঠক করেছে দল। শনিবার হলদিয়ায় প্রকাশ্য সভা করলেন অভিষেক। তিনি বললেন, হলদিয়ার শ্রমিক মহল্লায় শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ঠিকাদারি করব আর শ্রমিকদের বঞ্চিত করব, সেটা হবে না। আমার কাছে পে-স্লিপ আছে। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজ। বেতনের তারতম্য কেন হল?
কেন স্থানীয় ছেলেদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে না? কেন হলদিয়ার ছেলেরা ১২ ঘন্টা কাজ করে বেতন যথাযথ পাবে না। এটা আমি চলতে দেব না। হয় ঠিকাদারি করো, নয় রাজনীতি করো। দুটো এক সঙ্গে হবে না। তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে ঠিকাদারি করা যাবে না। ১১ বছরের দেওয়াল ভেঙে চুরমার। আমি ৩ মাস সময় চাইছি। ম্যাক্সিমাম ১০০ দিন। আমি চার্টাড অফ ডিমান্ড দলের তরফ থেকে কোনও প্রস্তাব থাকবে। সেখানে কোনও ঠিকাদার থাকবে না। আপনাদের আন্দোলনের পাশে আমি থাকব।
ঠিকাদারদের যোগসাজশে তৃণমূল কংগ্রেস করা চলবে না। আমাদের নেত্রী একটাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও দাদার অনুগামী আমরা নই। আর যাঁরা ট্রেড ইউনিয়ন করে তাঁরা একটাই পরিচয়, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি। হলদিয়া শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলেই পরিচিত। নন্দীগ্রামও এই জেলাতেই। সেখানেই অভিষেকের সভা ঘিরে উত্তাপ ছিল চরমে।
সেই নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক মনে করান, হলদিয়ার মাটি আমাদের শক্ত ঘাঁটি। অভিমান করবেন না। অনেকে ভাবছেন পুরনোদের ওপরে সিপিএম-বিজেপি থেকে এসে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। সেটা হবে না। শুধু আপনারা পথে নামুন। আমি যখন বলছি তার মানে আমি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুমোদন নিয়ে বলছি।
ইউনিয়নের কাজ দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার। আগামীকাল থেকে নামুন কাজে৷ এটা গোটা বাংলায় করা হবে। তিন মাসের মধ্যে। পাশাপাশি, আমি হাতজোড় করে বলছি শ্রমিকদের প্রাপ্য যথাযথ মেটাতে হবে। এখন থেকে নামুন না হলে আপনাদের কপালে দুঃখ আছে। ১ তারিখ থেকে যেন অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব হয়। ঠিকাদার যা খুশি করবে সেটা হবে না।