পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল

সদ্য মন্ত্রিত্ব-খোয়ানো পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  সকালে কুণালের ‘আক্রমণাত্মক’ টুইট এবং বিকেলে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পর পার্থের মহাসচিব পদ যে যাবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত ছিল না।

আলোচনা হওয়ার ছিল একটি বিষয় নিয়েই— পার্থকে সাসপেন্ড করা হবে নাকি সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। মূলত সেটা আলোচনা করতেই অভিষেকের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেছিলেন দলের শীর্ষনেতারা। সেই বৈঠকেই পার্থকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পার্থের বিরুদ্ধে যে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চলেছে, তা বৃহস্পতিবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল কুণালের আক্রমণাত্মক টুইটে।

যেখানে তিনি দাবি তুলেছিলেন, মন্ত্রিত্ব এবং দলের সমস্ত পদ থেকে ছেঁটে ফেলা তো বটেই, প্রয়োজনে পার্থকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক!  কুণালের সেই দাবির অব্যবহিত পরেই জানা যায়, বিকাল ৫টায় তৃণমূল ভবনে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক। সেটিও কুণালই টুইট করে জানান। এ-ও জানান যে, তাঁকেও ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘটনাচক্রে, ওই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান আবার পার্থ নিজেই! কিন্তু ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ায় তিনি স্বভাবতই বৈঠকে থাকতে পারবেন না। এ-ও এক সমাপতন যে, একদা তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তাঁর বিরুদ্ধেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে বসল! সেই বৈঠকেই তাঁকে দলীয় শাস্তির মুখে পড়তে হল। এবং সেই চেয়ারম্যানের পদটি খোয়াতে হল।

 তৃণমূলের ওই কমিটিতে অভিষেক এবং পার্থ ছাড়াও রয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, রাজ্যের তিন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সংসদের অভিবেশন চলায় সুদীপ আপাতত দিল্লিতে। তাই তিনি ওই বৈঠকে ছিলেন না। প্রসঙ্গত, পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরে তৃণমূলের প্রথম প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ওই তিন মন্ত্রী। সেই বৈঠকটি অবশ্য হয়েছিল অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। সংযোজন ছিলেন কুণাল।

যেমন তিনি সংযোজিত ছিলেন বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও। এ ছাড়াও মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটকও। বৈঠকের আগেই পার্থের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন দলের নেতাদের একটা বড় অংশ। সকালে সেই সুর বেঁধে দিয়েছিলেন কুণাল স্বয়ং। তৃণমূলের অন্দরের দলীয় সমীকরণে রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল যেমন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’, তেমনই তিনি অভিষেকেরও ‘ঘনিষ্ঠ’।

বস্তুত, দলীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, প্রয়োজনে পার্থের বহিষ্কার দাবি করে কুণালের ওই টুইট দলের শীর্ষনেতৃত্বের বিনা অনুমোদনে ঘটেনি। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, কুণালের টুইটের কয়েক ঘণ্টা পরেই অভিষেক বিকেলে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে কুণালেরই টুইটে। ইতিহাস বলছে, তৃণমূলের অন্দরে পার্থের সঙ্গে কুণালের সম্পর্ক বরাবরই ‘মধুর’ থেকেছে। বস্তুত, কয়েক মাস আগে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্থই কুণালকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিন মাসও গড়ায়নি। ছবিটা একেবারে উল্টো হয়ে গিয়েছে!