অর্শরোগ কি | নির্মূল করতে অবলম্বন করুন এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি

অর্শরোগ কি |  নির্মূল করতে অবলম্বন করুন এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি

আজবাংলা    অর্শরোগ, পাইলস বা হেমোরয়েড এই নাম তিনটি যথেষ্ট। খুব পরিচিত একটি শারীরিক ব্যারাম। সাধারণত, ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায়। সম্প্রতি করা একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৫% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।এই রোগ সাধারণত হয়ে থাকে, ফাইবারযুক্ত খাবারের অভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, গর্ভাবস্থায়, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকার অভ্যাস থেকে।

সময়ের সাথে সাথে এই রোগ ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে। এই বিশেষ রোগের কোনও নির্দিষ্ট বয়সের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। এই রোগের সাধারন উপসর্গগুলি হল, মলদ্বার ফুলে ওঠা, মলদ্বারে যন্ত্রণা, রক্ত পড়া ইত্যাদি। নানাধরনের ওষুধ বা অস্ত্রপচারের মাধ্যমে  এই অর্শরোগ বা পাইলসের চিকিৎসা হয়। অনেকেই জানেন না যে, এর কিছু কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। যার দ্বারা সময়ের সাথে সাথে এটিকে নির্মূল করা সম্বব।

কখন হয় ও উপসর্গ

কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, দীর্ঘ সময় মল চেপে রাখার অভ্যাস, কম পানি পান, সবুজ শাকসবজি কম খাওয়া, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ফাস্ট ফুডে আসক্তি, ফাইবারযুক্ত খাবার না খাওয়া, ক্রনিক ডায়েরিয়া, ওবেসিটি, প্রেগন্যান্সি ও পায়ুসঙ্গম করলে অর্শ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে৷  মলত্যাগের সময় ব্যথাবিহীন রক্ত পড়া। প্রস্রাবের সঙ্গেও অল্প রক্ত পড়া। মলদ্বারে চুলকানি এবং অস্বস্তিবোধ, ব্যথা হওয়া। মলদ্বারের চারপাশ ফুলে ওঠা। মলদ্বারে লাম্প হতে পারে যা খুবই শক্ত হয়।

ইণ্টারনাল অর্শ – এটি সাধারণত রেকটামের ভিতরের দিকে হয়ে থাকে৷ যা বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়৷ সাধারণত মলত্যাগের সময় রোগী অস্বস্তিবোধ করেন এবং মলদ্বার থেকে রক্ত পড়ে৷

এক্সটারনাল অর্শ – মলদ্বারের চারপাশে যে চামড়া থাকে তার নিচে হয়৷ বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়৷ এক্ষেত্রে রোগীর মলদ্বার চুলকায় এবং রক্ত পড়ে৷

থ্রম্বোসড অর্শ – এক্ষেত্রে মলদ্বারের চারপাশে শক্ত লাম্প দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় জমাট রক্ত বের হয়৷ অসহ্য যন্ত্রণা হয়৷

আসুন দেখে নেওয়া যাক, সেই বিশেষ উপায়গুলি কি কি।

১. লেবুর রস ও আদাঃ অর্শরোগের আরেকটি বড় কারণ হল ডিহাইড্রেশন। আদাকুচি, লেবু এবং মধু সহযোগে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে দারুন কাজ হয়। বিশেষ এই মিশ্রণটি রোজ খেলে অর্শরোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর পাশাপাশি, প্রত্যেকদিন কম করে ২ থেকে ৩ লিটার জল খেলেও অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়।

২. অ্যালোভেরাঃ অর্শরোগের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করা উচিত। এটি অল্প সময়েই ব্যথা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। আবার থেকে অ্যালোভেরা পাতার কাঁটার অংশ কেটে জেল অংশটুকু একটি প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রেখে দেবেন।এই ঠান্ডা অ্যালোভেরা জেলের টুকরো খানি ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। শুধু জ্বালা বা ব্যথাই নয়, এর পাশাপাশি চুলকানি কমিয়ে দেয়।

৩. বরফঃ অর্শ নিরাময় করার জন্য আরেকটি বিশেষ উপাদান হল বরফ। একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ পেঁচিয়ে ব্যথার স্থানে ১০ মিনিট রাখুন। এভাবে দিনে বেশ কয়েকবার বরফ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন। ক্ষতস্থানে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

৪. অলিভ অয়েলঃ প্রতিদিন এক চা চামচ অলিভ অয়েল খান। এটি দেহের প্রদাহ দ্রুত হ্রাস করতে সাহায্য করে। অর্শরোগে নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী।

৫. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ একটি তুলোর বল নিতে হবে। তারপর তাতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগাতে হবে। প্রথমদিকে এটি জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করবে কিন্তু কিছুক্ষণ পর এই জ্বালাপোড়া কমে যাবে।এটি পদ্ধতিটিও দিনে বেশ কয়েকবার অবলম্বন করুন। অর্শরোগের জন্য এক চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খান। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

সতর্কতা

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। মল চেপে না রাখা। অতিরিক্ত তেল, ঝাল না খাওয়া। নিয়মিত ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া। মলত্যাগ করার পর টিস্যু ব্যবহার না করা। নিয়মিত মলদ্বার পরিষ্কার করা। মলের সঙ্গে সামান্য রক্ত পড়লেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। এটি অন্যান্য সব রোগের মতো সাধারণ একটি অসুখ তাই অযথা লজ্জিত না হয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত৷ অর্শ সার্জারি না কি সহজে সফল হয় না? এই নিয়ে মানুষের মনে নানা দ্বন্দ্ব থাকলেও অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে চিকিৎসা করালে অপারেশন সম্পূর্ণ সফল হয়৷