মহাভারতের বনপর্বের পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়

মহাভারতের বনপর্বের পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়

Mahabharata মহাভারতের বনপর্বের পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে ধৃতরাষ্ট্রের বিদূরকে তাড়িয়ে দেওয়া এবং আবার ডাকা উল্লেখিত আছে। পরপর দুবার পাশাখেলায় হেরে গিয়ে পণ অনুসারে পান্ডবরা রাজ্য ছেড়ে তেরো বছরের জন্য বনবাসে চলে যান। সঙ্গে যান পান্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী ও পান্ডবদের পুরোহিত ধৌম্য। হস্তিনাপুর ছেড়ে এসে তাঁরা প্রথমে সরস্বতী নদীর ধারে কাম্যক বনে আশ্রম তৈরি করে বাস করতে থাকেন।

কয়েকদিন পর পান্ডবরা দেখতে পান যে বিদূর রথে চেপে তাঁদের আশ্রমের দিকে আসছেন। বিদূরকে দেখে যুধিষ্ঠিরের মনে চিন্তা শুরু হয়। তিনি ভীমকে ডেকে বলেন, “দেখ ভীম, কাকা বিদূরকে দেখে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। তবে কি দুর্যোধন আর শকুনি মামা আবার আমাদের পাশাখেলার জন্য ডেকে পাঠালেন? এবার কি আমাদের অস্ত্রশস্ত্র বাজি রাখতে হবে?

ভীম! আমাকে কেউ ডাকলে আমি তো না বলতে পারব না, কিন্তু যদি অর্জুনের গান্ডীব আর তোমার গদা আমাদের কাছে না থাকে তবে আমাদের হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়া খুব মুশকিল হবে।”এই কথাবার্তা চলতে চলতে বিদূর আশ্রমে পৌঁছে গেলেন। পান্ডবরা সবাই বিদূরকে সম্মান জানালেন এবং পা ধোয়ার জল ও আসন দিয়ে তাঁর সেবা করলেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর যুধিষ্ঠির হাত জোড় করে বিদূরের আশ্রমে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।

যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে বিদূর বললেন, “যুধিষ্ঠির! তোমরা সবাই হস্তিনাপুর ছেড়ে বনে চলে যাওয়ার পর মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং যাতে দুই দিকই রক্ষা পায় এমন কিছু উপদেশ দিতে বললেন। আমি তখন তোমাদের সাথে মিটমাট করে নেওয়ার কথাই মহারাজকে বলেছিলাম, কিন্তু মহারাজের আমার কথা ভাল লাগলো না। যেমন রোগীর ভালো খাবারে রুচি হয়না, ঠিক তেমনই তাঁরও আমার কথায় রুচি হল না।

যেমন কোনো দুশ্চরিত্রা নারী নিজের কুলের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনে, তেমনই ধৃতরাষ্ট্রও নিজের কুলের ধ্বংসের কারণ হলেন। যুধিষ্ঠির! যেমন বালিকা স্ত্রী নিজের ষাট বছর বয়সের বুড়ো স্বামীকে ভালোবাসতে পারে না, তেমনই আমার কথায় রাজার শ্রদ্ধা হল না। তখন তিনি রেগে গিয়ে আমাকে রাজ্য থেকে চলে যেতে বললেন। তাই আমি তোমাদের কাছে চলে এসেছি।” এই কথা বলার পর বিদূর আরও বললেন, “শোনো যুধিষ্ঠির, আমি তোমাকে কিছু ভালো উপদেশ দিতে এসেছি। মন দিয়ে শোনো এবং এই কথাগুলি সবসময় মনে রাখবে।

যুধিষ্ঠির! অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও যে শত্রুদের ক্ষমা করে ও ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করে, ভবিষ্যতে সে একা সমস্ত পৃথিবী ভোগ করে। যে আত্মীয়দের সাথে সমানভাবে সম্পত্তি ভোগ করে, আত্মীয়রা তার দুঃখকে ভাগ করে নেয়। আত্মীয়দের সাথে এইভাবে ব্যবহার করাই ঠিক, এর বিপরীত কাজ কখনও কোরো না। আত্মীয়দের সামনে কখনো নিজের প্রশংসা কোরো না। মনে রেখো, রাজা যদি এমন ব্যবহার করেন তাহলেই তাঁর সমৃদ্ধি হবে।” বিদূরের এই উপদেশ শুনে যুধিষ্ঠির হাত জোড় করে বললেন, “কাকা, আমি সবসময় আপনার এই উপদেশ মনে রাখব এবং এমনভাবেই কাজ করব।

আপনি চিন্তা করবেন না।” এদিকে বিদূরকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ধৃতরাষ্ট্র মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন যদি বিদূর পান্ডবদের পক্ষে যোগ দেন, তবে তাঁর মত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ মানুষকে পেয়ে নিশ্চয়ই পান্ডবদের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। এই কথা ভাবতে ভাবতে ধৃতরাষ্ট্রের মনে ভয় ও হিংসা দুইই হতে লাগল। তখন তিনি সঞ্জয়কে ডেকে বললেন, “সঞ্জয়! আমি আজ বিদূরের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি।

তাই সে অভিমান করে আমাকে ছেড়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে চলে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বিদূরকে ফিরিয়ে আনো। তাকে না দেখে আমি আর থাকতে পারছি না।” এই বলে ধৃতরাষ্ট্র কাঁদতে লাগলেন। সঞ্জয় তখন তাড়াতাড়ি কাম্যক বনে গিয়ে বিদূরকে ও পান্ডবদের সব কথা বললেন। বিদূর মনে মনে ধৃতরাষ্ট্রের ফন্দি বুঝতে পেরে যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে হস্তিনাপুরে ফিরে এলেন।

তিনি ধৃতরাষ্ট্রের কাছে যেতেই হাত জোড় করে ধৃতরাষ্ট্র ক্ষমা চাইলেন। বিদূর ধৃতরাষ্ট্রের কাছে বসলেন এবং তাঁরা দুজনে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। এই হল ধৃতরাষ্ট্রের বিদূরকে তাড়িয়ে দেওয়া এবং আবার ডাকা র কারণ।