কল্পতরু উৎসব, জানেন কি এই বিশেষ কথাটির তাৎপর্য কি?

আজবাংলা ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর ভক্তদের মন খুলে আশীর্বাদ করেন এবং যে যা চেয়েছিল তাঁর কাছে, সব তিনি পূরণ করেছিলেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এইদিন তিনি ঈশ্বরের অবতার হিসাবেই তাদের কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সেই থেকেই এই দিনটি তাঁর ভক্তগণেরা ধূমধামের সাথে পালন করে। তাদের পালন করা এই উৎসব কল্পতরু উৎসব নামে পরিচিত।
কিন্তু এই কল্পতরু কথাটির অর্থ কি? কোথা থেকে এসেছে জানেন? আসুন আজকের প্রতিবেদনে দেখে নেব এটি কোথা থেকে উত্তপত্তি লাভ করেছে। পুরাণে উল্লিখিত সমুদ্রমন্থনের কাহিনী অনেকেরই জানা। অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমুদ্র হতে তুলে এনেছিলেন একের পর এক সব আশ্চর্য বস্তু।
সেই মন্থনে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী, ঐরাবত হস্তী, উচ্চৈশ্রবা অশ্ব, অপ্সরাকুল, চন্দ্র, কামধেনু ইত্যাদি এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই হলাহল বিষ ও অমৃত। এগুলো ছাড়াও সেই মন্থনে উঠে এসেছিল এক আশ্চর্য বৃক্ষ, যার নাম হলো পারিজাত। পরবর্তীকালে স্বর্গের বর্ণনায় বার বার পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে এই পারিজাতের নাম।
ইন্দ্রের নন্দন কাননে প্রধান গাছটিই হলো এই পারিজাত, এমন কথা হিন্দু পুরাণে গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে উল্লিখিত রয়েছে। ‘হরিবংশ পুরাণ’-এ উল্লিখিত রয়েছে যে, পারিজাত একটি ‘কল্পতরু’, এই গাছের কাছে যা প্রার্থনা করা যায়, তাই নাকি পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে এ কথাও বলা হয়েছে যে, বেশিরভাগ পারিজাত স্বর্গে থাকলেও মর্ত্যভূমে একটি মাত্র গাছ নাকি রয়েই গেছে।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরবাঁকি জেলার কিন্তুরে একটি বাওবাব জাতীয় গাছকে পারিজাত বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। কিন্তু খুব প্রাচীন একটি স্থান। মহাভারত-এর অন্যতম চরিত্র পাণ্ডবমাতা কুন্তির নাম হতে এই স্থানের নামকরণ হয় বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী জানা যায়, এখানকার অসংখ্য প্রাচীন মন্দিরের একটি নাকি স্বয়ং কুন্তি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
এখন মনে করা হয়, কুন্তিকে এখানেই দাহ করা হয়েছিল ও তাঁর চিতাভস্ম থেকেই জন্ম নেয় এই পারিজাত বৃক্ষটি। অন্য এক কাহিনী মতে, কৃষ্ণ তাঁর পত্নী সত্যভামা, মতান্তরে রুক্মিনীর জন্য এই বৃক্ষটি স্বর্গ থেকে নিয়ে আসেন। এই সব কাহিনীর সত্যতা নিরূপণ দুরুহ ব্যাপার।