যে সব উপকরণ দিয়ে করা যায় না শিব পূজা
চলছে পবিত্র শ্রাবণমাস। হিন্দু ধর্মে শ্রাবণকে শিবের মাস বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। ভারতে, বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে এই মাস ভীষণই পবিত্র। শিবভক্তরা এই সময় উপোস করেন। এই সময় হয় কাওয়াঁর-যাত্রা। বাঁকে করে জল নিয়ে কাওয়াঁররা যান বিভিন্ন শিবতীর্থে, ভোলেবাবার মাথায় জল ঢালতে। হিন্দুধর্মে সোমবার হল শিবের বার। আবার মঙ্গলবার হল পার্বতীর বার।
অনেকে শ্রাবণ মাসের এই দুই বার ব্রত ও উপোস পালন করে থাকেন। শ্রাবণী মঙ্গলবার এই কারণে বহু জায়গায় মঙ্গল গৌরী ব্রত হিসেবেও উল্লিখিত। তবে, শিবের পুজোর ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। হিন্দুশাস্ত্র মতে, এই ক'টি জিনিস আছে, যেগুলি অন্য দেবদেবীকে অর্পণ করা গেলেও, শিবকে করা যায় না। জেনে নেওয়া যাক সেগুলি কোন জিনিস—
শঙ্খ বা শাঁখ : পুরাণ মতে, শঙ্খাসুর নামে এক মহাপরাক্রমশালী অসুর ছিলেন। ভগবানবিমুখ এবং প্রবল অত্যাচারী। পাপের ঘড়া পূর্ণ হলে শিব তাকে বধ করে ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেন। শঙ্খাসুরের স্ত্রী ঈশ্বরের কাছে স্বামীর জীবন চেয়ে তপস্যা শুরু করেন। এবং মৃত শঙ্খাসুরের অস্থি থেকে তৈরি করেন শাঁখ। সেই থেকে পূজার উপকরণ হিসাবে শাঁখ ব্যবহার করা হলেও শিব পূজায় শাঁখ নিষিদ্ধ।
গোটা নারকেল : শিবলিঙ্গে গোটা নারকেল দেওয়া হয় না। দিলে তা ভেঙ্গে দেওয়া উচিৎ। কারণ নারকেল দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। দেবী লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে সম্পর্কিত তাই গোটা নারকেল শিবলিঙ্গে অর্পণ করা হয় না।
কেতকী ও চাঁপা ফুল : কথিত আছে, শিব এই দুই ফুলকে শাপ দিয়েছিলেন- যে এই ফুল কোনও পুজোয় লাগবে না। পরে, শিবের কাছে অনেক তপস্যা করায়, শিব তুষ্ট হন। সেই থেকে শুধুমাত্র মহাশিবরাত্রির দিন কেতকী বা কেওড়া ফুলে পুজো হয়।
সিঁদুর : শিবের তিলক সিঁদুর দিয়ে করা উচিৎ নয়। শিব বৈরাগী, সন্ন্যাসী। শ্মশানে থাকেন। ছাই-ভস্ম মাখেন। আর সিঁদুর সৌভাগ্যের প্রতীক। বিবাহিত নারীর অলঙ্কার। তেল আর জল যেমন মেশে না তেমনই সৌভাগ্য আর বৈরাগ্য এক সঙ্গে থাকে না। তাই শিব পূজায় সিঁদুরের ব্যবহার নিষিদ্ধ।
ভাঙ্গা চাল : শিব পূজায় নিষিদ্ধ ভাঙ্গা চালও। চাল খন্ডিত হওয়ায় তা অসম্পূর্ণ ও অনুপযুক্ত। তাই শিব পুজো সবসময় অক্ষত বা সম্পূর্ণ চাল দিয়ে করা উচিৎ।
তুলসী : হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, তুলসীর প্রথম স্বামী শঙ্খচূড়কে অপছন্দ করতেন শিব ও পার্বতী। পরবর্তীকালে, শিবের হাতে মৃত্যু হয়েছিল শঙ্খচূড়ের। ফলে, তুলসী পাতায় শিবপুজো হয় না। যে কারণে, বেলপাতা দেওয়া হয়। কথায় আছে, ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের বৈঠকখানা। সেরকমভাবে ডাকলে ভগবান অবশ্যই সাড়া দেবেন। আর তিনি তো শিব, স্বয়ং মহাকাল। তিনি ভক্তবৎসল। ভক্তের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন তিনি।