পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য পিতৃপক্ষে যা অবশ্যই দান করতে হবে

পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য পিতৃপক্ষে যা অবশ্যই দান করতে হবে

পূর্বপুরুষদের জন্য উৎসর্গীকৃত পিতৃপক্ষের মাস ভাদ্রপদ পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন অমাবস্যা পর্যন্ত পালিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই এক পক্ষকাল সময় পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, সূর্যপুত্র যম ২০ হাজার বছর পর্যন্ত ঘোর তপস্যা করে শিবকে প্রসন্ন করেন। আশীর্বাদ হিসেবে শিব যমকে পিতৃলোকের অধিকারী বানান।

শাস্ত্র মতে, যে ব্যক্তি সারা বছর পুজো-পাঠ করেন না, তাঁরা যদি নিজের পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধ করেন, তা হলেও ইষ্ট কার্যসিদ্ধি ও পুণ্য অর্জন করতে পারেন। এই বছর পিতৃপক্ষ শুরু হয়েছে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে, চলবে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। শ্রদ্ধা সহকারে শ্রাদ্ধ করলে পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হন ও আশীর্বাদ দিয়ে পরলোক গমন করেন।

শাস্ত্র মতে, পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধকর্ম না-করলে তাঁরা রুষ্ট হন ও অভিশাপ পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রাদ্ধ ছাড়াও পিতৃপক্ষে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য দান-ধ্যান করে থাকেন অনেকে। শাস্ত্র অনুযায়ী, পিতৃপক্ষে যে সাতটি জিনিস অবশ্যই দান করতে হবে, সেগুলি হল -- 

কালো তিল

শ্রাদ্ধে অবশ্যই কালো তিল দান করা উচিত। এর ফল পূর্বপুরুষ ও দাতা উভয়ই লাভ পেয়ে থাকেন। শাস্ত্র মতে, এই সময় পূর্বপুরুষদের তর্পণের জন্য যে কোনও জিনিসই দান করা হোক না-কেন, সে সময় হাতে কালো তিল নিয়ে দান করা উচিত। কালো তিল বিষ্ণুর প্রিয়। এটিকে শনির প্রতীকও মনে করা হয়। তাই আপনার দানকার্যে অবশ্যই কালো তিল রাখবেন।

বস্ত্র

শ্রাদ্ধের সময় অতি অবশ্যই বস্ত্র দান করবেন। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, শ্রাদ্ধে যাঁরা পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে কাপড় দান করেন, তাঁদের ওপর পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ সব সময় বর্ষিত হয়। এছাড়া শ্রাদ্ধে ধুতি ও ওড়নার দান শুভ মনে করা হয়। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, আমাদের মতোই পূর্বপুরুষদের আত্মার ওপরও আবহাওয়া পরিবর্তন প্রভাব ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা বস্ত্রের কামনা করেন। শ্রাদ্ধে বস্ত্র দান করলে পূর্বপুরুষরা খুশি হন।

 রুপো

পিতৃপক্ষে রুপোর যে কোনও বস্তুই দান করতে পারেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এর ফলে পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্তি লাভ করে ও আশীর্বাদ দেন। পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদের ফলে দাতার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির আগমন ঘটে। পুরাণ মতে, চাঁদের ওপরের অংশে পূর্বপুরুষদের বাস। রুপো চাঁদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই শ্রাদ্ধে রুপো, চাল ও দুধে তাঁরা প্রসন্ন হন।

গুড় ও নুন

শ্রাদ্ধের সময় অবশ্যই এই দুই বস্তুর দান করা উচিত। শাস্ত্র মতে, নুন দান করলে যমের ভয়ও দূর হয়। পারিবারিক কলহ দূর করার জন্য শ্রাদ্ধে গুড় ও নুন অবশ্যই দান করা উচিত।

চটি-জুতো

শ্রাদ্ধে গরিবদের জুতো-চটি দান করা শুভ বলে মনে করা হয়।

 ছাতা

মনে করা হয় যে শ্রাদ্ধকর্মে ছাতা দান করলে, পরিবারে সুখ-শান্তি ও আনন্দ আসে। এর ফলে পূর্বপুরুষদের আত্মাও তৃপ্ত হয়।

 জমি

যদিও বর্তমান সময়ে ভূমি দান খুব একটা সম্ভব নয়। শ্রাদ্ধকর্মে জমি দান বেশিরভাগ মানুষই করে উঠতে পারেন না। তবু মনে করা হয় যে শ্রাদ্ধের সময় পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য অবশ্যই ভূ-দান করা উচিত।