Sabeda | টবে সবেদা চাষ

Sabeda | টবে সবেদা চাষ

বাড়িটার দিকে পথচলতি মানুষ না তাকিয়ে পারে না। এমন নয় যে, তাদের ঝাঁ-চকচকে তাকলাগানো বাড়ি। কারণটা হল, বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান। সেখানে বড় যত্নে তার দাদু লাগিয়েছিল অনেক গাছ। এখন সেই শখ শিকড় বিছিয়েছে দিঘির মায়ের মধ্যেও। বাগানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু... হরেক গাছ। ফলের কী বাহার! দিঘিদের বাগানের রসালো ফলের সুখ্যাতি গোটা এলাকা জুড়ে। এটুকু পড়ে আপনি ভাবছেন তো, আপনার বাড়িতে এত জায়গা নেই, যেখানে এমন সাধের বাগান বানাবেন।

থাকেন দু’কামরার ফ্ল্যাটে, তাই ও সব শখের জায়গা নেই। দাঁড়ান-দাড়ান! এত তাড়াতাড়ি হার মানলে চলে? ইচ্ছে যখন আছে, তখন তা পূরণও হবে। ফলগাছ লাগানোর জন্য যে একখানি বাগান থাকতেই হবে, তা নয়। আপনার বারান্দায় কিংবা ছাদের টবেই লাগাতে পারেন আপনার পছন্দের ফলের গাছটি। আপনি যে ফল খেতে ভালবাসেন, তারই বীজ রোপণ করতে পারেন আপনার টবে। টবে ফলগাছ লাগানোর মজা কোথায় জানেন? বাগানে গাছ লাগালে শিকড় অনেকটা ছড়িয়ে যায়। তাই ফল আসার জন্য বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু টবে বছরের দুয়েকের মধ্যে ফল ধরতে দেখা যায়। আর নিজের হাতে লাগানো গাছে হওয়া ফল খাওয়ার মজাই আলাদা। 

সফেদা বা 'সবেদা' (ইংরেজি: Sapodilla; বৈজ্ঞানিক নাম: Manilkara zapota) এক প্রকার মিষ্টি ফল। সবেদা গাছ বহুবর্ষজীবী, চিরসবুজ বৃক্ষ; এর আদি নিবাস মেক্সিকোর দক্ষিণাংশ, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল। পেটেনেস ম্যানগ্রোভ ইকো-অঞ্চলের উপকূলীয় ইউকাতানে এই গাছ প্রাকৃতিকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। স্প্যানিশ উপনিবেশ আমলে এটি ফিলিপাইনে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মেক্সিকোতে এর ব্যাপক উৎপাদন হয়।

ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে সবেদাকে বলা হয় 'মিস্পেল', হন্ডুরাস, এল-সালভাদর ও কিউবাতে এর নাম 'zapote', ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র, কোস্টা-রিকা, কিউবা, পুয়ের্তো-রিকো, নিকারাগুয়া, কলম্বিয়া ও ভেনিজুয়েলাতে একে বলে 'níspero', বাহামায় এর নাম 'dilly', জ্যামাইকা ও অন্যান্য ক্যারিবীয় অঞ্চলে একে বলে 'naseberry', ব্রাজিল ও হাইতিতে বলা হয় 'sapoti', ফিলিপাইনে এর নাম 'chico' বা 'tsiko' এবং মেক্সিকো, হাওয়াই, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও দক্ষিণ ফ্লোরিডায় একে বলা হয় 'chicosapote' বা 'chicozapote'।

সবেদা গাছ লাগাবেন মাটি 

গাছ লাগানোর জন্য আপনি ঘেঁষ (পাথুরে কয়লার ছাই) কিংবা মাটি যে কোনওটাই বেছে নিতে পারেন। ভাল মাটি পাওয়াটা অনেকের কাছেই বর্তমানে একটি সমস্যা। তাই অনেকেই ইদানীং গাছ লাগাতে মাটির পরিবর্তে ঘেঁষ ব্যবহার করেন। নার্সারিতে এটি কিনতে পাওয়া যায়। মাটিতে যখন জল দেওয়া হয়, তখন জল বেশি হলে তা বেরোতে পারে না। ফলে গাছের শিকড় পচে যায়। উলটো দিকে মাটির তুলনায় ঘেঁষের দানা অনেক বেশি আলগা। এতে সুবিধে হল, গাছের যেটুকু জল শুষে নেওয়ার সে টেনে নেয়। বাকিটা বেরিয়ে যায়। এতে গাছ নষ্ট হয় না, ভাল থাকে। কিন্তু ঘেঁষে গাছ লাগালে আবার সার অনেক বেশি দিতে হয়। কারণ ঘেঁষের নিজস্ব কোনও উর্বরতা শক্তি নেই। তবে ঘেঁষে গাছ লাগালে জলের উপর নিয়ন্ত্রণটা থাকে বলে, এতে গাছ লাগানো সুবিধেজনক। 

মাটি প্রস্তুত করার সময় ভার্মি কম্পোস্ট, গোবর সার কিংবা সবজির খোসা পচিয়ে গুঁড়ো করে সার তৈরি করে দিতে পারেন। এই গাছ জলের প্রয়োজন হয় তবে অতিরিক্ত জল হয়ে গেলে এই গাছ মরে যায় না। আবার যদি কোনদিন জল দিতে ভুলে যান তাহলেও এই গাছ মরে যায় না। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে এতে জল দিন। গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরাতে গেলে প্রয়োজন সারের।

মাটি প্রস্তুতি সময়ে আপনি যদি এই ধরনের সার গুলো ব্যবহার করেই থাকেন তাহলেও অন্তত দশ দিন অন্তর অন্তর গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে। এই গাছের সার এর জন্য প্রয়োজন পটাশিয়াম। রাসায়নিক পটাশ সার ব্যবহার করতে না চান তবে যদি একেবারে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করতে চান তাহলে কলার খোসা ভালো করে গুঁড়ো করে নিয়ে মাটির মধ্যে মিশিয়ে দিতে পারেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে কলার খোসাকে অন্তত এক লিটার জলের মধ্যে চার দিন পচিয়ে সেই তরল সার গাছের গোড়ায় দিন। সরষের খোল পচা তরল সার দিন।

ভালো ফল ফলানোর জন্য গাছে সার দেওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ফল হওয়ার জন্য এই গাছে অন্তত সাত-আট ঘণ্টা কড়া রোদ ভীষন জরুরী। গ্রীষ্মকালে এই গাছে বেশ ভালোভাবে ফল ধরে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই সারা বছর আপনি সবেদা গাছ থেকে ফল পেতে পারেন। যাদের ছাদে বেশি জায়গা নেই তারা তাদের ব্যালকনিতে যেখানে উচ্চ আলো আসছে সেখানে সবেদা গাছ প্রতিস্থাপন করতে পারেন। সবেদা কাছে খুব একটা বেশি পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না। তবে পিপড়ে এবং মিলিবাগের সমস্যা থাকতে পারে।

গাছে যদি মিলিবাগ দেখতে পান তাহলে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো এক লিটার জলের মধ্যে একটি শ্যাম্পু পাউচ ঢেলে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে গাছের মধ্যে স্প্রে করে দিন। যদি সম্ভব হয় নিম তেল তৈরি করেও গাছের মধ্যে স্প্রে করতে পারেন। তাহলে খুব সহজেই বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন।

শিকড় কাটতে হবে

এর সঙ্গে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি। টবের মধ্যে যেহেতু গাছটা বাড়ে, শিকড় তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়, তাই প্রত্যেক বছর শিকড় কাটতে হয়। এর জন্য টব উলটে, মাটি ছাড়িয়ে পাশ থেকে শিকড় কেটে ছোট করে দিতে হয়, যাতে ছড়ানো শিকড়গুলো না থাকে। তার পর গোবর সার দিয়ে মাটি তৈরি করে, ঝুরঝুরে করে, আবার ওই টবের মধ্যে গাছ বসিয়ে দিতে হবে। তবে যখন এই শিকড় কাটার ‘অপারেশন’টা চালানো হবে, তার পর দিন-তিনেক গাছটিকে ছায়ায় রাখতে হবে, কারণ তখন তার জোর কম থাকে। আর আলাদা করে বিশেষ যত্নের দরকার হয় না। ফলের গাছ হলেও সাত-আট বছর দিব্যি বেঁচে থাকবে ও ফল দেবে।