শীতলা ষষ্ঠীর গোটাসেদ্ধ খাওয়ার রেওয়াজ?

শীতলা ষষ্ঠীর  গোটাসেদ্ধ খাওয়ার রেওয়াজ?

শ্রীপঞ্চমীর দিন প্রতি বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয় সরস্বতী পুজো। আর তার পরেরদিন শীতল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন বাঙালি মেয়েরা। বাড়ির সব মেয়ে-বউরা কনিষ্ঠ সন্তানকে কোলে নিয়ে এক সঙ্গে ব্রত কথা শোনেন। ব্রত পালনের পর হলুদ আর দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে দেন সবার কপালে। দুপুরে শীতল ষষ্ঠীর ভোগ- গোটা সিদ্ধ আর কুলের অম্বল।

শীতল ষষ্ঠীকে অপভ্রংশে শেতল ষষ্ঠী বলে থাকেন অনেকে। মা-ঠাকুমার কাছে এক কথায় গোটা সেদ্ধ। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের এও এক পার্বণ। বছরভর বিভিন্ন ষষ্ঠী পুজোর মধ্যে অন্যতম বসন্তপঞ্চমীর পরের দিন পালিত হওয়া শীতল ষষ্ঠী। মূলত বাঙালিদের মধ্যে এদেশীয় বা কথ্য ভাষায় ঘটী সম্প্রদায় এই ষষ্ঠী পালন করে থাকেন।

বাঙালির নিজস্ব একান্ত যে কয়েকটি সামাজিক প্রথা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এই শীতল ষষ্ঠী বা গোটা সেদ্ধর অনুষ্ঠান।  এই গোটা সেদ্ধর মধ্যে থাকে গোটা মুগ, বকড়াই, গোটা শিম, গোটা আলু , রাঙা আলু, কুলিবেগুন, কড়াইশুঁটি, শীষওয়ালা পালংশাক। এগুলি নুন আর লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়ে থাকে। অনেকে এর মধ্যে গোটা মশলা দেন তবে বেশিরভাগই কোনও মশলা না দিয়েই গোটাসেদ্ধ প্রস্তুত করেন।

অনেকে আবার এর সঙ্গে যুক্ত করেন সজনে ফুল এবং কুল। বিভিন্ন জায়গায় গোটা সেদ্ধর বিভিন্ন রকমফের আছে।  যারা শীতল ষষ্ঠী পালন করেন, তাঁরা সরস্বতী পুজোর পরের দিন বাড়িতে কোনও রান্না করেন না। শীতল ষষ্ঠীর দিনে বাড়িতে উনুন না জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। আগের দিন রান্না করে ষষ্ঠীর দিন সবকিছু ঠান্ডা খেতে হয়। এদিন গরম কোনও কিছু খাওয়া যায় না। এই প্রথা অনেকটা অন্ধনের মতো। 

কিন্তু কেন এই সময় শীতল ষষ্ঠী ? কেন গোটা সিদ্ধ ?  অনেকের মতে শীতল খাদ্য গ্রহণের যে-প্রথা পশ্চিমবঙ্গের বহু অঞ্চলে প্রচলিত তার অন্তরালে হয়ত আঞ্চলিক কিছু শস্যকেন্দ্রিক-ধর্মধারার অবশেষ আছে। এ ছাড়া এর পিছনে একটা বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক ব্যাখ্যা রয়েছে। শীত গিয়ে আসতে শুরু করেছে বসন্ত। এ সময় শরীরে জীবাণুর বাসা বাঁধতে শুরু হয়।

এই সকল রোগের হাত থেকে বাঁচতে এই সব টোটকার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সুচারূ কোনও গবেষণা হয়েছে কিনা জানা নেই, তবে সন্দেহ হয়, এটাই মুখ্য কারণ।  সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে তিথিগত ভাবে ষষ্ঠী থাকতে থাকতে হয় ষষ্ঠীপুজো। তারপর হয় বাড়ির শীল, নোড়ার পুজো। ফুল, প্রসাদ দিয়ে শীল-নোড়ার পুজো দিয়ে দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়ার গায়ে। পুজো শেষে সেই দই-ই আগের দিনের রান্না করা খাবারে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ব্যস, এবার ওই ঠান্ডা রান্না খাওয়ায় কোনও আপত্তি নেই।