মহালয়া কেন পালন করা হয়?

মহালয়া কেন পালন করা হয়?

 

এক ঝলকে দেখে নিন মহালয়ার ইতিকথা! ‘মহালয়া’ শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। আর যে আলয়ে দেবী দুর্গাই প্রধান হয়ে দাঁড়ান ,তাই হলো মহালয়া। বাঙালির জীবনে মহালয়ার তাৎপর্য অপরিসীম। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনার দিনটিকেই, সনাতন হিন্দু সংস্কৃতিতে মহালয়া হিসেবে উদযাপন করা হয়। দুর্গাপুজো বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব।

মহালয়ার দিন থেকেই যেন আরও পুজো পুজো ভাব চলে আসে বাঙালিদের মনে। পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর মানুষ এবং দেবতাদের কাছে অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছেই তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর পেয়ে দেবতাদের উপর মহিষাসুরের তান্ডব ক্রমশ বাড়তে থাকে।

অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গধাম থেকে বিতাড়িত করে বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। তখনই তাকে বধ করার জন্য এক নারীশক্তির জন্ম দেন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। তাঁরা নিজেদের শক্তি দিয়ে মহামায়ারূপী যে নারীশক্তিকে তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি।

সনাতন হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, মহালয়ার দিনই মহিষাসুরকে বধ করে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন মা দুর্গা। আর তাই অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আরাধনায় মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়ার দিন গঙ্গাবক্ষে দাঁড়িয়ে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেওয়া বা তর্পণের রীতি রয়েছে। কালো তিন আর কুশ সহযোগে পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।

বহু বছর ধরে বাঙালিদের কাছে মহালয়ার আরও একটা বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান। মহালয়ার পর থেকেই দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়ে যায় আট থেকে আশি সকলের। প্রসঙ্গত, মহালয়ার দিন কুমোরটুলিগুলোতে মায়ের চক্ষুদানও হয়। মহালয়ার তর্পণ তর্পণ কী? তর্পণ কেন পালন করা হয়?

দেবীপক্ষের সূচনার আগে ,মহালয়ার দিন ভোরে অসংখ্য মানুষ গঙ্গাবক্ষে দাঁড়িয়ে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে কালো তিল আর কুশ সহযোগে অঞ্জলি প্রদান করেন। যা সনাতন হিন্দু শাস্ত্রে তর্পণ রীতি নামে প্রচলিত। হাজার হাজার বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। যে রীতির অন্তরালে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনীর প্রচলনও রয়েছে। চলুন তবে সেই সকল কাহিনী জেনে নেওয়া যাক।

রামায়ণ অনুসারে, ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র অসময়ে অর্থাৎ বসন্তকালে দেবী দূর্গার আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য। আর তাই শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজো বসন্তকালে হওয়াই নিয়ম। শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবী দুর্গার বোধন করেছিলেন বলে একে অকাল বোধন বলা হয়। সনাতন ধর্মে কোনও শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়।

দেবীর আরাধনার আগে এমনটাই করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সেই থেকে মহালয়ায় তর্পণ অনুষ্ঠানের প্রথা প্রচলিত। অপর একটি মতানুসারে, মহাভারত অনুযায়ী, মৃত্যুর পর কর্ণের আত্মা পরলোকে গমন করলে তাঁকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণ ও রত্ন দেওয়া হয়। দেবরাজ ইন্দ্রকে কর্ণ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন যে, দানবীর কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণ ও রত্ন দান করেছেন, কিন্তু প্র্যাত পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান করেননি।

তাই স্বর্গে খাদ্য হিসেবে তাঁকে সোনাই দেওয়া হয়েছে। প্রত্যুত্তরে কর্ণ জানান, যেহেতু নিজের পিতৃপুরুষ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না, তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই পিতৃগণের উদ্দেশ্যে খাদ্য দান করেননি। এই কারণে কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।