সন্তান জন্ম দেওয়াই কাজ মহিলাদের! দাবি তালিবান মুখপাত্রের
মহিলাদের প্রতি সদয় তারা কোনওদিনই ছিলেন না। সেটা ফের একবার প্রমাণ করল তালিবানরা। ধীরে ধীরে নিজেদের রং দেখাতে শুরু করে দিয়েছে তালিবান। শান্তি, সম্প্রীতি, নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার নিয়ে মাসখানেক ধরে আওড়ে চলা সমস্ত বুলি আসলে যে মিথ্যা তা আর বুঝতে বাকি রইল না। আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে মহিলাদের মন্ত্রীত্বের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তালিবানি মুখপাত্র জানিয়েছেন যে মন্ত্রিসভায় মেয়েদের কোনও স্থান নেই। মেয়েদের কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া।
প্রসঙ্গত, পুরুষ শাসিত তালিবান সরকার গঠনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন চারজন আফগান মহিলা। নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হন। এই প্রতিবাদ ও পুরুষ শাসিত সরকার গঠন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তালিবান মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি এক সাক্ষাতকারে বলেন, 'একজন মহিলা কখনও মন্ত্রী হতে পারেন না, এটা ঠিক এরকম যে মহিলাদের গলায় কিছু ঝুলিয়ে দেওয়া হল যা তিনি বহন করতে পারছেন না।' তিনি এও জানিয়েছেন যে মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে হবে মহিলাদের এমন কোনও বাধ্য বাধকতা নেই, তাঁরা সন্তান প্রসব করুক।
তালিবান মুখপাত্র এও বলেন, 'মহিলা প্রতিবাদকারীরা আফগানিস্তানের সব মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন না।' প্রসঙ্গত, অগাস্টে আফগানিস্তানে তালিবান শাসন ফিরে আসার পর আফগান নারীরা তারপর থেকেই নাগরিক অধিকারের বিচারে গত দু'দশক ধরে যা কিছু লাভ করেছে তা হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন। যদিও তালিবানরা মহিলাদের অধিকারকে সম্মান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, কাজ করতে চাওয়ার স্বাধীনতা থেকে শুরু এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা তালিবানরা মর্মান্তিকভাবে রোধ করেছে এবং মহিলাদের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলামিক শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের জন্য স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশনা দিয়েছেন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা। সেই আইন বাস্তবায়নের নামে তালেবান আসলে কী করবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সাধারণ আফগান থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা। এর মধ্যেই বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে কঠোর হয়েছে নবগঠিত তালেবান সরকার। তাদের নিষেধাজ্ঞার জেরে গতকাল কাবুলে আর মিছিল করতে পারেনি বিরোধীরা। স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে তালেবান জানায়, বিক্ষোভ মিছিল করতে হলে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টা আগে বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে।
এ নির্দেশনা কার্যকর ঘোষণা করে আরো জানানো হয়, অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত এর মধ্যে কোনো বিক্ষোভ মিছিল করতে দেওয়া হবে না। গত মঙ্গলবার তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার পর থেকে এর প্রতিবাদে রাজধানী কাবুলসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করে বিরোধীরা। তালেবানের কট্টর আচরণের আশঙ্কা উপেক্ষা করে মিছিল করতে থাকেন নারীরাও, কিন্তু গত বুধবারের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাজধানীতে কোনো মিছিল হতে দেখা যায়নি। যেখানে বিক্ষোভকারীদের জড়ো হওয়ার কথা ছিল, সেখানেও তাদের উপস্থিতি চোখ পড়েনি।
রাজধানীজুড়ে তালেবান সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীদের উপস্থিতি ও টহল ছিল চোখে পড়ার মতো।আগের দিন বুধবার অবশ্য কাবুলসহ বিভিন্ন শহরে তালেবানবিরোধীরা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়েন তালেবান সদস্যরা। এর মধ্যে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে বেদম পেটান তাঁরা। আহত সাংবাদিকরা হলেন তাকি দারিয়াবি এবং নিমাত নাকবি। তারা কাবুলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এতিলাত-ই-রোজে কাজ করেন। জানা গেছে, আটক করার পর দুই সাংবাদিককে কাবুলের একটি থানায় নেওয়া হয়।
সেখানে তাদের বেধড়ক মারধর করে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর ছেড়ে দেওয়া হয়। এতিলাত-ই-রোজ সম্পাদক জাকি দারিয়াবি বলেন, আমার দুই সহকর্মী জানিয়েছেন তালেবান তাদের চার ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছে। নৃশংস এই নির্যাতনে চারবার জ্ঞান হারিয়েছেন দুই সাংবাদিক। পিঠ ও পায়ে পেয়েছেন অবর্ণনীয় ব্যথা। নিমাত নাকবি বলেন, তারা আমাকে বলেছিলেন, আপনি ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না। যারা ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরে তালেবান সদস্যরা আমাকে অপমান করতে শুরু করেন। আমাকে লাথি মারতে থাকেন। যখন তিনি তালেবানকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তাকে মারধর করা হচ্ছে, তখন তাকে বলা হয়, 'তুমি ভাগ্যবান যে তোমার শিরশ্ছেদ করা হয়নি।'