বিশ্ব এইডস দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পা লনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব এইডস দিবস (World AIDS Day)। প্রতি বছর সারা বিশ্ব জুড়ে ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয় এইডস সম্বন্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য।
১৯৮৭ সালে আগস্ট মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organisation) এইডস বিষয়ক শাখার দুই জন তথ্য অফিসার (Public Information Officer): থমাস নেত্তের এবং জেমস ডব্লিউ বান প্রথম এই দিনটি পালনের প্রস্তাব দেন। তারপর তাঁরা এই প্রস্তাবটি এইডস বিষয়ক শাখার গ্লোবাল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ডঃ জোনাথন মানের কাছে রাখেন।
তিনি সেই প্রস্তাবটি গ্রহণ করে সেই দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এইচআইভি/ এইডস কর্মকাণ্ড (Joint United Nations Program on HIV/AIDS, UNAIDS) শুরু হয়। এরপর থেকে এই বিভাগটি বিশ্ব এইডস দিবস পালনের দায়িত্ব নেয়। তারাই এরপর থেকে এই দিনটির সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং প্রচার করতে থাকে।
১৯৯৭ সালে আনএইডস বিশ্ব এইডস ক্যাম্পেইন (World AIDS Campaign) শুরু করে। এর মূল লক্ষ্য ছিল শুধু একটি দিনের উপর নির্ভর করা নয়, সারা বছর ধরেই এই অসুখটি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা। ২০০৪ সালে এই বিশ্ব এইডস ক্যাম্পেইন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। ২০১৬ সালে বেশকিছু এইচআইভি এবং এইডস নিয়ে কাজ করা সংস্থা এই দিনটির নতুন নামকরণ এর জন্য প্রচার করেছিল। তারা চেয়েছিল এই দিনটির নামকরণ করা হোক বিশ্ব এইচআইভি দিবস।
২০০৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে এই দিনটি উপলক্ষে আঠাশ ফুট লম্বা একটি লাল রঙের এইডস রিবন ঝোলানো হয়। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের সরকার, স্বাস্থ্য দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ মিলে এই দিনটি পালন করে থাকে। প্রতি দিনই বিশ্বের কোন না কোন প্রান্তে এইডসের শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ এবং অসুখটি হওয়ার কারণে বহু মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। এইডসের প্রকোপ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অত্যধিক দেখা যায়। তবে উন্নত দেশগুলিও এই অসুখটি থেকে মুক্ত হয়নি।
এই অসুখটি সম্পর্কে বিশেষ সতর্কতা এবং সচেতনতা তাই খুবই প্রয়োজন। এই দিনটি উপলক্ষে নানান দেশে নানান সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়। অনেক জায়গায় মানুষ লাল রিবন (যেটি কিনা এই দিনটির প্রতীক) পরে রাস্তায় নামে। বহু মানুষ যারা এই রোগটির দ্বারা আক্রান্ত নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জনসমক্ষে আনে। এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য ফান্ড (fund) তৈরি করা হয়। এছাড়াও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যার মাধ্যমে এই রোগটির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলা হয়।
সমীক্ষা বলছে যে সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে প্রায় ১০৩৮০০ মানুষ এইচআইভির শিকারএবং সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষের এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে। এই রোগটিকে বিগত শতাব্দীর এবং এই শতাব্দীর অন্যতম ধ্বংসাত্মক রোগ বলে গণ্য করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের মানুষকে এই এইডস রোগটি সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন করা গেছে।
তা সত্ত্বেও প্রতি বছর ইংল্যান্ডে প্রায় ৪৪৫০ জন এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই বিশ্ব এইডস দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষকে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয় এই রোগটি এখনো আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং তা সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়নি। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে পোপ বিশ্বজুড়ে সমস্ত এইডস রোগীদের এবং ডাক্তারদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
প্রতি বছরই কিছু না কিছু থিমকে বেছে নেওয়া হয় এই দিনটি পালনের কেন্দ্র হিসেবে। এই থিম নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় আনএইডস (UNAIDS) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization, WHO), বিশ্ব এইডস ক্যাম্পেইনের গ্লোবাল স্টিয়ারিং কমিটি (Global Steering Committee) এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা এইচআইভি এবং এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রথম দুই বছর এই দিনটি পালনের থিম ছিল ‘শিশু এবং তরুণ প্রজন্ম’।
শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, শিশু এবং তরুণ প্রজন্মের বহু ছেলেমেয়েরাই এইডসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এইডস বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যই এই থিমটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে এর থিম ছিল ‘নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হওয়া’ (know your status) এবং ২০১৯ সালে এর থিম ছিল ‘সমাজই বদল আনে’ (community makes the difference)। ২০২০ সালে এই দিবসটির থিম হল ‘গ্লোবাল সলিটারি, শেয়ার্ড রেস্পন্সিবিলিটি’ (Global solitary, shared responsibility)।