বজ্রাসন

বজ্রাসন কী? বজ্রাসন হল মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম এর একটি বিশেষ ধরন যেটি একটি বিশেষ ভঙ্গিতে বসার মাধ্যমে করা হয়। অন্য যেকোনো ব্যায়াম ভরাপেটে করতে বারণ করা হলেও বজ্রাসন এর ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। বরং প্রতিবেলা খাওয়ার পরে ৫-১০ মিনিট এই ব্যায়াম টি করলে খাবার খুব ভালোভাবে হজম হয়। এবার তাহলে জেনে নেই বজ্রাসন কীভাবে করতে হয়।
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত আসন বিশেষ। এর অনেকগুলো অর্থ আছে। তবে এখানে বজ্র অর্থ নিদারুণ বা কঠিন অর্থে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এই আসনের নাম বজ্রাসন (বজ্র + আসন) রাখা হলেও, এই আসনটি যথেষ্ট কঠিন নয়। এর বর্ধিত প্রকরণগুলো হলো - লঘু বজ্রাসন, সুপ্ত বজ্রাসন।
পদ্ধতি ১. প্রথমে কোন সমতল স্থানে হাঁটু মুড়ে বসুন। এই সময় হাঁটু দুটো জোড়া অবস্থায় থাকবে এবং পায়ের গোড়ালির উপর নিতম্ব অবস্থান করবে। এই সময় পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে।
২. এবার দুই হাত হাঁটুর উপর স্থাপন করুন। এই সময় হাতের তালু হাঁটুর দিকে ফেরানো থাকবে।
৩. এবার ধীরে ধীরে পায়ে পাতা দুটো দুদিকে সামান্য পরিমাণ সরিয়ে দিন। এই অবস্থায় মেরুদণ্ড ও হাত সোজা রেখে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন। এ সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চালু রাখুন।
৪. ৩০ সেকেন্ড পর আসন ত্যাগ করে শবাসনে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন।
৫. এরপর আরও দুই বার আসনটি করুন।
উপকারিতা
১) বেশি খাওয়াদাওয়া করে অম্বল হয়ে গিয়েছে? সমাধান হতে পারে বজ্রাসন। এটি শরীরের হজমশক্তিকে উন্নত করে। এমনকি, কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাতও কমায়। এই আসন নিয়মিত করতে থাকলে শরীর ঠিক ভাবে খাদ্য থেকে পুষ্টি সঞ্চয় করতে পারে।
২) কোমর ও শরীরের নিম্নাঙ্গে ব্যথা? তাও কমাবে এই আসন। বজ্রাসন করার ফলে শরীরের ঊরু, নিতম্ব, হাঁটু ও গোড়ালির পেশি অনেক বেশি নমনীয় হয়ে যায়। তাই যে কোনও ধরনের ব্যথা থেকে সহজেই আরাম মেলে। কেবল তা-ই নয় প্রসববেদনা, ঋতুকালীন পেটেব্যথা ও গাঁটের ব্যথারও অনেকটাই কমবে এই আসন করলে।
৩) মানসিক উদ্বেগে রয়েছেন? বজ্রাসন করলে ভাল থাকবে মন। এই আসন মনোসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক অবসাদের সমস্যাকেও কমায়। মন শান্ত রাখে। ফলে ভাল ঘুম হয়। অনেকেই মেডিটেশন হিসাবে এই আসন করে থাকেন।
৪) পেটের মেদ কমাতে পারছেন না? বজ্রাসন করুন। বিশেষ করে যাঁদের স্থূলতার সমস্যা আছে, তাঁদের জন্যও বজ্রাসন উপকারী। এই আসন শরীরে হজম ক্ষমতাকে বাড়ায়। ফলে দেহ থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়।
বজ্রাসন খুবই সহজ একটি যোগব্যায়াম যেটি আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হাজারো কাজের ফাঁকে নিজের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন একটু সময় করে যদি ৩-৫ মিনিট ও ব্যয় করেন সহজ এই ব্যায়ামটি করতে তাহলে বজ্রাসন এর সুফল যেমন ভোগ করতে পারবেন তেমনি ছোট বড় অনেক শারীরিক সমস্যাকেও মোকাবিলা করতে পারবেন ওষুধ কিংবা ডাক্তারের সাহায্য ছাড়াই।
আজকের লিখায় আপনাদেরকে বজ্রাসন এর আসন করার নিয়ম এবং উপকারিতা সম্পর্কে সহজভাবে স্পষ্ট একটা ধারণা দেয়া হয়েছে। তাহলে আজ থেকে প্রতিদিনের কাজের তালিকায় নিশ্চয়ই বজ্রাসনকে যোগ করে নিবেন। নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন এবং ভালো থাকুন। আপনার প্রতিটা দিন হোক সুস্থ আর সুন্দর।