শ্রী জগন্নাথ দেবের বিখ্যাত রথ যাত্রার ৫৬ ভোগের বিবরণ

আজবাংলা পুরি ওড়িশার বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র | এই শহরের ইতিহাস ২০০০ বছরের পুরোনো | এখানকার মানুষদের জীবন যাবেন ও সংস্কৃতির মধ্যে পৌরাণিক ভাবনার গভীর প্রভাব ররেছে |এই শহরের প্রধান আকর্ষণ শ্রী জগন্নাথের মন্দির ও বিখ্যাত রথ যাত্রা এছাড়াও ছোট বড়ো অসংখ মন্দিরের পাশে দেখতে পাবেন পুরির অপরূপ সুন্দর সমুদ্র সৈকত | পুরী তে যেকোনো সময় ভ্রমণের করতে যেতে পারেন কিন্তু পুরি ভ্রমণের শ্রেষ্ট সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস |
কিন্তু আমরা পুরি সম্পর্কে অনেককিছু জানলেও পুরীর প্রধান আকর্ষণ শ্রী জগন্নাথের মন্দিরে প্রতিদিনের পরিবেশিত ৫৬ টি ভোগ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা ,যে এই ৫৬টি ভোগ কখন কখন র কোন সময় আর কতবার পরিবেশিত হয় | শোনাযায় জগন্নাথ দেবের রান্না ঘর কে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রন্ধনশালা বলা হয় |তাই প্রথমে জেনে নেবো পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে মাদুল পঞ্জিকা অনুসারে যে পূজা বিধির নিয়ম-কনোম রয়েছে তাতে ভোগ প্রদানের সময় ও নিয়ম কানম গুলি কীকী | জগন্নাথ দেববের মন্দিরে জগন্নাথ ,বলরাম ,ও সুবোদরা দেবী কে মোট ৬ বার ভোগ নিবেদন করা হয় | সকাল ৭ -৮ টার মধ্যে প্রথম ভোগ দেওয়াহয় সকালের এই সময়ের ভোগকে বলা হয়
" গোপালবল্লভা ভোগ " | এই সময় ৮ প্রকারের ভোগ দেওয়াহয় পদগুলি হলো - ঘন দুধ ,মাখন ,নারকেল নাড়ু ,নারকেল জল, মিষ্টি খই , মিষ্টি দই ,পাকাকলা ,সুগন্ধি ভাত | এরপ আবার সকাল ১০টা নাগাদ ভোগ নিবেদন করাহয় জেক বলে
"সাকালা ধোপা "এই সময়ের ভোগকে রাজভোগ/কথাভোগ ও বলাহয়েগিয়ে থাকে | এই ভোগে মোট ২০ প্রকারের পদ নিবেদন করাহয় পদ গুলি হলো - পিঠে-পুলি, বাদকান্তি, এন্ডুরি(নারকেল দিয়ে তৈরী কেক ) , মাথা পুলি (পুলি-পিঠে) ,দাহি অম্ল, হামসা কেলি (মিষ্টি কেক) ,বড়া কান্তি , কাকাতুয়া ঝিলি ,আদা পঁচেদি , বোদে, টাটা খিচুড়ি , কানিকা, নুখুৱা খিচুড়ি ,সানা খিচুড়ি ,মেন্ধা মুন্ডিয়া (বিশেষ ধরণের কেক) ,আধা আনিকা ,তাইলে খিচুড়ি ,সাগু ,দালা খুচুরি | এরপর আবার ১১টার সময় আবার জগন্নাথ দেব কে ভগ্নিবেদন করাহয়
" ভোগা মধ্যাহ্ন ভোগা" এই ভোগটি পূর্ব নির্ধারিত করা থাকে অর্থাৎ আমরা সবাই যে ভোগের ডালা জগন্নাথ দেব কে দি বা উৎসর্গ করি ইটা সেই ডালা| আবার দুপুর ১২টা থেকে ১ টার মধ্যে জগন্নাথ দেবকে ভোগ নিবেদন করা হয় এই ভোগকে বলাহয়
"মধ্যাহ্ন ভোগা" এই ভোগের মধ্যে ৪০টি পদ থাকে বড়ো পিঠে ,দমলা ( সবজি ভাত ), মাথা পুলি , বারা , কাকারা , গোটাই ,সরমনোহর , বড়ো খির ছোলা, বড়ো আরিশা,পানা , ছানা আরিশা , পদ্দ পিঠে ,কাদামৰা (এক বিশেষ মিস্টি ), বিরি পিঠে , মির্চপানি ,সানা কাদম্বরী ,সুগন্ধি পোলাউ ,সানা পেস্তা, সাকারা (সুগার ক্যান্ডি) ,ভাগ পিঠে ,পান , কাদম্বরী হরি , সুজির খির ,মহূর (লাবরা),চোরাই নাডা মিস্টি,বারা (দুধ দিয়ে তৈরী মিস্টি ) , থালা অন্ন , শাকভাজা , খিড়ি (দুধ ভাত) , করোলা ভাজা , জানাদা তাডা, সানা আরিশা,মির্চিলাড্ডু ,সানা খিরাছুলা,থালিপাকা থাউলা,মনোহরা মিস্টি,ছোট পিঠে,বড়ো কাকারা,আরিশা(ভাত দিয়ে তৈরী মিস্টি ) ও ত্রিপুরি | এরপর জগন্নাথ দেবর বিশ্রামের সময় | এরপর জগন্নাথ দেবর সন্ধ্যা আরতির পর ভোগ নিবেদন করাহয় এই ভোগকে বলে
সন্ধিয়া ধোপা এই সময় ৯টা পদদের ভোগ দেওয়া হয় | সন্ধ্যায় যে পদগুই নিবেদন করাহয় সেগুলি হলো - ত্রিপুলা পোলাও , আমাশলু (মিস্টি লুচি ), সানা অলি পোলাউ ,কানার পুলি ,পাখাল (পান্তা ভাত ), সানাও আমল ,পানি পোলাউ ,সাকার ,মাঠ পোলাও | এরপর জগন্নাথ দেবকে ১১টার সময় ভোগ নিবেদন করা হয় এই সময় যে পদগুলি থাকে সরপিঠা ,সীতাভোগ ,সেরাগুলি পিঠা ,কানজি (চাল দিয়ে বিশেষ মিস্টি) ,কাঁদালি বারা ,পায়েস, লুনি খুরুমা (নোনতা বিস্কুট) | এই হলো গগনাথ দেবের ৫৬ টি ভোগ এর মধ্যে কিছু নাম অন্যরকম কারণ এগুলি প্রাচীন উড়িয়া ভাষায় নামকরণ | কিন্তু অনেকসময় গুনলে ৫৬ টার বেশিও পদ পাওয়াযায় যেমন ৮০টা বা ১০৮টা বা তার বেশি হয়েযায় |