পরিচারিকা থেকে মণি ঘোষ এখন সংহিতার অভিভাবক
মালদা : কলেজটা আর হল না মেয়েটার। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পরেই বাবা চলে গেল। তখনও রেজাল্ট বেরোয়নি। বাবার মৃত্যুতে গোটা পৃথিবীটাই যেন ভেঙে পড়েছিল সংহিতার।আক্ষেপটা ধরা দিল বছর পঞ্চাশের মণি ঘোষের গলায়। সদ্য কৈশোরে পা রাখা সংহিতার অভিভাবক এখন তিনিই।
বছর দশেক আগে পরিচারিকা হিসাবে সংহিতাদের বাড়িতে এসেছিলেন। মাতৃহারা মেয়ে দেখভালের জন্য মণিদেবীকে বাড়িতে আনেন সংহিতার বাবা গৌতম মজুমদার। তবে গৌতমবাবু এখন আর নেই। বেসরকারি সংস্থার কর্মী গৌতমবাবুর স্মৃতিটুকু ছাড়া মেয়ে জন্য বিশেষ কিছুই রেখে যেতে পারেননি। সালটা ২০১৫, সংহিতার জীবনে সবথেকে বড় বিপর্যয়টা নেমে এসেছিল সে বছরেই। সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। রেজাল্টের অপেক্ষায় দিন কাটছে। আমচকাই বাবা-মেয়ের সংসারে সংহিতাকে একা ফেলে চিরতরে চলে গেলেন গৌতমবাবু। মাকে আগেই হারিয়েছে।
এবার মাথায় ওপর থেকে বাবার হাতটাও সরে গেল। স্কুল পড়ুয়া মেয়েটির চোখের সামনে সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয় সংহিতার জীবন। শারীরিক প্রতিকূলতা তাকে বিশেষভাবে সক্ষমদের তালিকায় ফেলেছে।এমন পরিস্থিতিতে কী করবে বুঝে ওঠার ক্ষমতাটাও ছিল না সংহিতার। চরম দুঃসময়ে অভিভাবকের মতো পাশে পেয়েছে মণিদেবীকে। সেই থেকে মালদা শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির ভাড়া বাড়িতে সংহিতাকে নিয়ে সংসার মণি ঘোষের। মেয়ের মতোই আগলে রাখেন সংহিতাকে। সংহিতাকে দেখভালের জন্য মণিদেবীকে মাসে দুহাজার টাকা বেতন দেন গৌতমবাবুর সহকর্মীরা।
সেই বেতনের টাকাতেই সংহিতা ও নিজের খরচটুকু কোনওক্রমে চালান মণি ঘোষ। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলেন মণিদেবী। বললেন, বাড়ি ভাড়ার ৬ হাজার টাকাও সংহিতার বাবার সহকর্মীরা মিটিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ওঁদেরও বয়স হয়েছে। সকলেই অবসরপ্রাপ্ত। ওঁদের অবর্তমানে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও না চলে যায়। যদি মেয়েটার কিছু একটা সরকারি সাহায্য জুটত, ও তো লেখাপড়া জানে। সরকার চাইলে ওকে একটা কিছু কাজ দিতেই পারে। একটা ঘরও অন্তত যদি পাওয়া যেত, তাহলে আর বাড়ি ভাড়াটা গুনতে হত না।
[ আরও পড়ুন বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীদের নির্মম অত্যাচারের শিকার সংখ্যালঘুরা,ট্রাম্পের সাহায্য চাইলেন প্রিয়া সাহা। ]