সারা ভারতে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু’টি, জানুন কালনার একশো আট শিবমন্দিরের কাহিনী

সারা ভারতে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু’টি, জানুন কালনার একশো আট শিবমন্দিরের কাহিনী

আজবাংলা             পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি পৌর অঞ্চল তথা জেলার কালনা মহকুমার সদর। ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই শহরটি অম্বিকা কালনা নামে জনপ্রিয়। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে এই স্থানটি উল্লিখিত হয়েছে আম্বুয়া বা অম্বুয়া মুলুক নামে। স্থানীয় দেবী অম্বিকার নামানুসারেই শহরের এই নামকরণ। জেলাসদর বর্ধমান শহরের থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কালনায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কালনার রাজবাড়ি, প্রতাপেশ্বর মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্রজি মন্দির, লালজি মন্দির ও ১০৮ শিবমন্দির। ঐশ্বর্যপূর্ণ পোড়ামাটির মন্দির দ্বারা সমৃদ্ধ অম্বিকা কালনাকে আসলে “মন্দিরের শহর” বলা হয়।আজ আমরা জানব কালনার ১০৮ শিবমন্দিরের কিছু অজানা কাহিনী | সারা ভারতে ১০৮ শিবমন্দির মাত্র দু’টি জায়গায় আছে। আশ্চর্যজনক ভাবে এই দু’টি জায়গাই পূর্ব বর্ধমানে। প্রথমটি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাটে এবং দ্বিতীয়টি কালনাতে। এই দুটি মন্দিরই নির্মাণ করেছিলেন বর্ধমান জেলার  রাজপরিবারের সদস্যরা | 

নবাবহাট-সহ দেশের প্রায় সর্বত্রই বেশির ভাগ শিবলিঙ্গ কালো রঙের হয়ে থাকে | কিন্তু একমাত্র কালনার ১০৮ শিব মন্দিরের ক্ষেত্রেই সাদা ও কালো শিবলিঙ্গের সমাহার দেখতে পাওয়া যায় | সকলে শিবের এই মন্দিরকে ১০৮ শিব মন্দির বলেই চেনে | তবে কালনার এই মন্দিরের প্রকৃত নাম হল ‘নবকৈলাস মন্দির’ | ১৮০৯ সালে বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র এই ১০৮ শিবের মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন |  কথিত আছে, বিষ্ণুপুরে রাজকীয় সম্পত্তি স্থানান্তর ও মালিকানা উদ‌্‌যাপনের জন্য এই মন্দিরটি নির্মিত হয় | 

কালনার এই বিখ্যাত শিব মন্দির প্রায় টো০ বছরের পুরোনো | এই মন্দিরগুলি আটচালা শিল্পের আকারে তৈরী করা হয়েছে | প্রথমে বাইরের বৃত্তে ৭৪টি মন্দিরে পর্যায়ক্রমে একটি সাদা এবং একটি কালো এবং দ্বিতীয় তথা ভিতরের বৃত্তের ৩৪টি মন্দিরের সবক’টিতেই রয়েছে সাদা শিবলিঙ্গ । অর্থাৎ, মোট ৭১টি সাদা শিবলিঙ্গ ও ৩৭টি কালো শিবলিঙ্গ। দ্বিতীয় বৃত্তের শিবলিঙ্গগুলি প্রথম বৃত্তের থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট | 

মন্দিরগুলির উচ্চতা প্রায় কুড়ি ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ন’ফুট | মন্দিরের ভিতরের বৃত্তের মাঝখানে রয়েছে একটি বিরাট কূপ | জানা যায়, এখানে গর্ত করে একটি বড় কম্পাস বসিয়ে জ্যামিতিক ভাবে বৃত্ত মেপে নির্মাণ করা হতো সেই কারণেই এটি খনন করা হয়েছিল | অনেকেই মনে করে ওই স্থানে ১০৯টি শিব মন্দির রয়েছে | কারণ  ১০৮ শিবমন্দিরের বৃত্তের বাইরে পশ্চিম দিকে প্রধান রাস্তার পাশে জলেশ্বর নামক আরেকটি শিবমন্দির রয়েছে | সেই জন্যই সকলে বলেন ওই স্থানে রয়েছে ১০৯টি মন্দির | 

বছরের নানা সময়ে পশ্চিমবাংলার নানা এলাকা-সহ দেশের নানা প্রান্ত বিশেষ করে অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড-সহ নানা দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক কালনায় সফরে আসেন ১০৮ শিবমন্দির দেখতে। কালনার ১০৮ শিবমন্দিরের বিপরীতেই রয়েছে রাজবাড়ি চত্বর। যেখানে রয়েছে ২৫ চূড়াবিশিষ্ট কৃষ্ণচন্দ্র ও লালজির মন্দির, সঙ্গে টেরাকোটার প্রতাপেশ্বর মন্দির ও রাসমঞ্চ।