লিঙ্গরাজ মন্দির উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির গুলোর মধ্যে অন্যতম

লিঙ্গরাজ মন্দির উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির গুলোর মধ্যে অন্যতম

আজবাংলা         লিঙ্গরাজ মন্দির পূর্বভারতীয় রাজ্য উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির গুলোর মধ্যে অন্যতম। মন্দিরটি শিব এবং বিষ্ণুর মিলিত রূপ হরিহরের নামে উৎসর্গীকৃত। লিঙ্গরাজ মন্দির ভুবনেশ্বরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূস্থাপনা এবং প্রধান পর্যটন স্থান |এই মন্দিরটি ভুবনেশ্বরের সব থেকে বড় মন্দির।  ১৮০ ফুট উঁচুএই মন্দিরের কেন্দ্রীয় মিনারটি | মন্দিরটি দেউল শৈলীতে নির্মিত যার চারটি ভাগ আছে। সেগুলো হচ্ছে বিমান, জগমোহন, নাট্যমন্দির এবং ভোগমন্ডপ। ভাগগুলোর উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। মন্দির চত্ত্বরটি দেয়ালঘেরা।

ভুবনেশ্বরকে একাম্রা ক্ষেত্র বলা হয়ে থাকে। তেরো শতকে লেখা সংস্কৃত পুঁথি একাম্রা পুরাণ অনুযায়ী লিঙ্গরাজের মন্দিরটি একাম্রা (আম) গাছের নিচে অবস্থিত ছিলো। লিঙ্গরাজ মন্দিরটি মন্দির ট্রাস্ট বোর্ড এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়ার অধীনে পরিচালিত হয়।প্রতিদিন গড়ে ৬০০০ দর্শনার্থী মন্দিরটি দেখতে আসে এবং উৎসব মৌসুমে লক্ষাধিক ভ্রমণার্থী আসে। এখানকার শিবরাত্রি উৎসব প্রধান অনুষ্ঠান এবং ২০১২ সালে উৎসব প্রাক্কালে দুই লক্ষ দর্শনার্থী আসে। 


লিঙ্গরাজ শব্দের আক্ষরিক অর্থ লিঙ্গের রাজা, হিন্দুমতে শিবের প্রতিরূপ। আদিতে শিবকে কীর্তিভাসা এবং পরে হরিহর হিসেবে পূজা করা হতো। তাকে ত্রিভুবনেশ্বর (ভুবনেশ্বরও বলা হয়) বলা হয় যার অর্থ স্বর্গ, মর্ত ও শূন্যলোকের অধিপতি। তার সঙ্গিনীকে বলা হয় ভুবনেশ্বরী।এগারো শতকের শেষ দশক থেকে মন্দিরটি টিকে আছে। ষষ্ঠ শতকে মন্দিরটি নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায় কারণ সপ্তম শতকের কিছু সংস্কৃত পুঁথিতে মন্দিরটির উল্লেখ আছে।ফার্গুনসনের মতে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শুরু করেন ললাট ইন্দু কেশরী যিনি ৬১৫ থেকে ৬৫৭ সাল পর্যন্ত শাসন করেন।

জমায়েত স্থল জগমোহন এবং মন্দির মিনার এগারো শতকে নির্মিত হয় অন্যদিকে ভোগমন্ডপ বারো শতকে নির্মিত হয়। শালিনীর স্ত্রী ১০৯৯ থেকে ১১০৪ সালের মধ্যে নটমন্দির নির্মাণ করা হয়। এই অঞ্চলে জগন্নাথ অংশ বাড়তে থাকলে মন্দিরটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় বলে ধারণা করা হয়।ভুবনেশ্বরের সব থেকে বড় মন্দির হচ্ছে লিঙ্গরাজ মন্দির। সুপরিচিত সমালোচক এবং ঐতিহাসিক জেমস ফার্গুসন (১৮০৮-৮৬) মন্দিরটিকে ভারতের বিশুদ্ধ হিন্দু মন্দিরসমূহের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উঁচু মিনারটির প্রতিটি ইঞ্চি নকশাকৃত। প্রবেশপথের দরজাটি চন্দনকাঠে নির্মিত। 

লিঙ্গরাজ মন্দিরটি পূর্বমুখী এবং চুনাপাথরে তৈরী। মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথটি পূর্বে হলেও উত্তর ও দক্ষিণে দুটি ছোট প্রবেশপথ আছে। মন্দিরটি দেউল শৈলীতে নির্মিত যার চারটি অংশ আছে। বিমান, জমায়েতের স্থান জগমোহন, উৎসব মিলনায়তন নাটমন্দির এবং উৎসর্গ মিলনায়তন ভোগ মণ্ডপ। চারটি অংশ একই অক্ষে অবস্থিত। হিন্দু কিংবদন্তী অনুসারে একটি ভূগর্ভস্থ নদী লিঙ্গরাজ মন্দিরের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্দুসাগরে এসে পড়েছে এবং বিশ্বাস করা হয়ে থাকে এর পানির দৈহিক ও আত্মিক অসুস্থতা দূর করার ক্ষমতা রাখে।

পুকুরের জলকে পবিত্রজ্ঞান করা হয় এবং উৎসব মৌসুমে তীর্থযাত্রীরা এই পুকুরে পবিত্রস্নান করে থাকে।মন্দিরের প্রধান দেবতা লিঙ্গরাজকে শিব এবং বিষ্ণু উভয় হিসেবে পূজা করা হয়। হিন্দুধর্মের দুটি ধারা শৈবধর্ম ও বৈষ্ণবধর্মের মিলন ঘটেছে এই মন্দিরে যেখানে বিষ্ণু ও শিবের মিলিত রূপ হরিহরকে পূজা করা হয়।লিঙ্গরাজ মন্দিরের প্রধান উৎসব হচ্ছে শিবরাত্রি যা ফাল্গুন মাসে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এবং এ সময়ে কয়েক হাজার ভক্ত মন্দির পরিদর্শনে আসে। সারাদিনের উপবাস শেষে এই শুভদিনে লিঙ্গরাজকে বেলপাতা নিবেদন করা হয়।