জেনে নিন পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের নানা অজানা কথা ও তথ্য

জেনে নিন পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের নানা অজানা কথা ও তথ্য

আজবাংলা     পুরীর কথা বলতেই সকলের মনে আসে প্রভু জগন্নাথ দেবের মন্দির ও পুরীর বিশাল রথযাত্রা উৎসব | চার ধামের মধ্যে পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির অবশ্যই অন্যতম | লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করেন জগন্নাথ দেবের মন্দিরে | প্রভুর দর্শনের জন্য দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত | পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরটি ওড়িশার পুরী পূর্ব সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত | ১০৭৮ সালে তৈরি হয় এই মন্দির | প্রতি বছর পুরীতে উজ্জাপন করা হয় বিশাল রথযাত্রা | এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু অজানা কথা |  

প্রতি ১২ বছর অন্তর জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর নতুন মূর্তি তৈরি করা হয় পুরী জগন্নাথ দেবের মন্দিরে | যাকে বলা হয় ‘নব কলেবর’ | নিম কাঠ ব্যবহার করে গড়া হয় জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি | কিন্তু, বিস্ময়ের ব্যাপার হল, পুরনো মূর্তি ভাসান দেওয়া হয় না | নতুন মূর্তির নীচেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয় | যা পরে মিশে যায় মাটির সঙ্গেই | 

পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকাটি লাগানো থাকে তা সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে | মূল মন্দিরের চূড়ায় যে সুদর্শন চক্র রয়েছে, তা যে দিক থেকেই দেখা হোক না কেন মনে হবে তা দর্শকের দিকেই | কথিত আছে  প্রায় ২০০০ বছর আগে এই সুদর্শন চক্র মন্দিরের চূড়ায় লাগানো হয়েছিল | কিন্তু, কী ভাবে তা মন্দির চূড়ায় লাগানো হয় তা এখনো অজানা | 

প্রভুর মন্দিরের দিয়ে উপর কোনও পাখি বা বিমান উড়তে পারে না | মন্দিরের ছায়া মন্দিরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটির ছায়া দিনের যে কোনও সময় অদৃশ্য থাকে | মন্দির চূড়ায় যে ধ্বজা রয়েছে তা প্রতিদিন ভোরে লাগানো হয় | এবং সন্ধাবেলা খুলে ফেলা হয়। কথিত, গত ১৮০০ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে |পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারের মন্দিরে প্রবেশ করার পরেই প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পাওয়া যায়না | কিন্তু ওই সিঁড়িটি টপকে গেলে আবার সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় | সন্ধেবেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় | 

পুরীর মন্দিরের সিংহ দরজাতে সাইন বোর্ডে লেখা আছে, সনাতন হিন্দু ব্যতীত কারও প্রবেশ নিষেধ | সেই কারণেই ১৯৮৪ তো স্বয়ং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকেও পুরীর মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি | কারণ তাঁর স্বামী ফিরোজ গান্ধী ছিলেন পার্শী | পাশাপাশি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামও পুরীর মন্দিরে প্রবেশাধিকার পাননি | 

এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দিনে ৩০ হাজারেরও বেশি ভক্ত সমাগম হয় এই মন্দিরে | জানা যায়, জগন্নাথ দেবের মন্দিরে দুটি ‘রত্ন ভাণ্ডার’ রয়েছে— ভিতর ভাণ্ডার ও বাহার ভাণ্ডার | যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রাকে সাজানোর জন্য বাহার ভাণ্ডারের অলংকারই ব্যবহৃত হয় বলে | মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের মোট সাতটি কক্ষ রয়েছে | কিন্তু তার বেশির ভাগই বন্ধ থাকে | ১৯৮৪ সালে, মাত্র তিনটি কক্ষ খোলা হয়েছিল পরিদর্শনের জন্য  | ২০১৬ সালে ফের খোলা হয়েছিল | মাত্র ১০ জন ব্যক্তি ঢুকেছিলেন | সেই সময়ে মন্দিরে কোনও ভক্তকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি | 

অন্যদিকে রথযাত্রার কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা-র কথা | জগন্নাথের প্রধান উত্‍সব | আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠান শুরু করে শুক্লা একাদশীর দিন পূর্ণযাত্রা বা উল্টোরথ অনুষ্ঠিত হয় |পুরীতে রথযাত্রা সময় সবার প্রথম বলভদ্রের তালধ্বজ চলতে শুরু করে | এর পরে সুভদ্রার পদ্মধ্বজ এবং সব শেষে জগন্নাথের নন্দীঘোষের পথ চলা শুরু হয় |