বাড়িতে জন্মাষ্টমীর পুজোর আয়োজন কি করে করবেন? জেনে নিন

আজ বাংলা চন্দ্রমা ধরে হিন্দু শাস্ত্রে যে ক্যালেন্ডার হয় তাতে অষ্টমী তিথিতে জন্মছিলেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ৷ হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য দেখা যায়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। শাস্ত্রে আছে, কেউ যদি এক বার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করেন, তা হলে তাঁকে আর এই জড় জগতে জন্ম, মৃত্যু, ব্যাধি, কষ্ট ভোগ করতে হয় না ও পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। উৎসবটি প্রতি বছর ইংরাজি ক্যালেন্ডারে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও এক সময়ে পড়ে।
এই বছর জন্মাষ্টমীর পুজো হবে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে– অষ্টমী তিথি আরম্ভ– বাংলা– ১২ ভাদ্র, রবিবার। ইংরেজি– ২৯ অগস্ট, রবিবার। সময়– রাত ১১টা ২৭ মিনিট। অষ্টমী তিথি শেষ– বাংলা– ১৩ ভাদ্র, সোমবার। ইংরেজি– ৩০ অগস্ট, সোমবার।। সময়– রাত ২টো। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে– অষ্টমী তিথি আরম্ভ– বাংলা– ১২ ভাদ্র, রবিবার। ইংরেজি– ২৯ অগস্ট, রবিবার। সময়– রাত ১০টা ২৪ মিনিট ১৩ সেকেন্ড। অষ্টমী তিথি শেষ– বাংলা– ১৩ ভাদ্র, সোমবার। ইংরেজি– ৩০ অগস্ট, সোমবার। সময়– রাত ১২টা ২৭ মিনিট ০৫ সেকেন্ড।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বাংলার হিন্দুসমাজের আচরণীয় ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি ব্রত। হিন্দু প্রধানত বৈষ্ণব মতাবলম্বীরা জাগতিক মঙ্গলকামনায় এবং অশুভ-অকল্যাণ দূর করতে এই ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। এটি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমী তিথিতেই শ্রীকৃষ্ণের পুজো করা হয়ে থাকে। জন্মাষ্টমীর আগের দিন নিরমিষ অন্ন খেয়ে সংযম পালন করতে হবে এবং রাত ১২টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। ঘুমনোর আগে অবশ্যই ভাল করে মুখ ধুয়ে ঘুমতে হবে। জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ। উপবাস থেকে হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ, ভগবানকে দর্শন, ভক্ত সঙ্গে হরিনাম কীর্তন, অভিষেক দর্শন করতে হবে এবং ভগবানকে অভিষেক করে একাদশীর দিনের মতো অনুকল্প প্রসাদ সেবন করতে হবে।
পুজোর নিয়ম
: জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, ফুল, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধু পর্কের বাটি, আসন-অঙ্গুরী সংগ্রহ করতে হয়। এইদিনে উপবাসে থেকে উপকরণগুলি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। একটি শান্ত ও কোলাহল মুক্ত স্থান প্রয়োজন। স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে এবং পুজোর জন্য স্নান সেরে রাখুন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি ছবি অথবা মূর্তির সঙ্গে গণেশ মূর্তিও স্থাপন করা হয়ে থাকে। পাশে রাখতে হবে প্রদীপ ৷ মিষ্টি, ফল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী থালায় সাজিয়ে রাখতে হবে।
মাথায় রাখবেন গোপালের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাখন মিছরি, ননী,নাড়ু, তালের বড়া,ক্ষীর, রাবরি, মালাই , মালপোয়া ইত্যাদি, যা সাজিয়ে গোপালের সামনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে পারেন৷ প্রথমে শ্রী গণেশের প্রার্থনা(ওম শ্রী গণেশায় নমহা) করতে হবে ৷ এরপর কিছুক্ষণ ধ্যান করতে হবে মন যাতে শান্ত থাকে। প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা (‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’)করতে হবে। এরপর ফুল অর্পন করতে হবে। তুলসি পাতা থাকলে ভাল হয়। তাছাড়া ধূপ জ্বালাতে হবে। ফুল অর্পন করার সময় ঘন্টা বাজানোর রেওয়াজ আছে। ‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’ উচ্চারন করে যেতে হবে। এরপর ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্য অর্পন করতে হবে। প্রার্থনা শেষে কিছুটা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণ ভগবানের এই মন্ত্র বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারন করা যেতে পারে। এরপর ফল,মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্য প্রসাদ হিসাবে সবাইকে বিতরণ করতে হবে। পুজো শেষে ভগবত গীতা পাঠ করা হয়ে থাকে।
কী ভাবে পালন করবেন ব্রত:
জন্মাষ্টমীর আগের দিন নিরমিষ খেয়ে সংযম পালন করতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভাল করে মুখ ধুয়ে ঘুমোতে হবে।
জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ পালন করতে হয়। উপবাস থেকে হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ এবং ভাগবত পাঠ করতে হবে।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্রত পারণ মন্ত্র পাঠ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদ দিয়ে ব্রত সমাপ্ত করবেন।
পারণ আরম্ভের মন্ত্র: "সর্বায় সর্বেশ্বরায় সর্বপতয়ে সর্বসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।"
পারণান্তে মন্ত্র: "ভূতায় ভূতেশ্বরায় ভূতপতয়ে ভূতসম্ভবায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।"