দিনমজুর থেকে রাতারাতি বহুতলের মালিক কে এই তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ

দিনমজুর থেকে রাতারাতি বহুতলের মালিক কে এই  তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ

বগটুই গ্রামের বেতাজ বাদশা বরশাল গ্রামের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের পর এই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রামপুরহাট। তার খুনের পরেই তোলপাড় হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। কে এই ভাদু শেখ,  শাসক দলের এক শ্রেণির নেতার হঠাত্‍ 'বড়লোক' হয়ে ওঠা, রঙচঙে অট্টালিকার মতো বাড়ি বানিয়ে সামাজিক প্রভাব বিস্তার করা ইত্যাদি বাংলার ইতিহাসে নতুন নয়। বাম জমানার শেষ পর্বে বিনপুরের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের প্রাসাদতুল্য দুধ-সাদা বাড়ি জনরোষে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল।

যেখানে আশপাশের সব বাড়ি মাটির, যেখানে প্রায় সকলের জীবিকা নির্ভর জঙ্গলের কেন্দুপাতার উপর সেখানে সর্বহারাদের পার্টির নেতার এমন বাড়ি কী করে হয় তা নিয়ে কম প্রশ্ন ওঠেনি। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা সেখ সুফিয়ানের জাহাজ বাড়ির কথাও বাংলার রাজনীতিতে সবার জানা ।  কুঁড়ে ঘরের ভাদু হয়ে উঠেছিলেন প্রাসাদের মালিক। ভাদু শেখ প্রভাবশালী নেতা হলেও তার রাজনৈতিক উত্থান নজরকাড়া। ভাদু শেখ এলাকায় প্রথম পরিচিত ছিলেন থানার গাড়ি চালক হিসেবে। সেখান থেকেই পরবর্তীকালে তিনি হন থানার ডাক মাস্টার।

শুধু তাই নয় এটাও শোনা যায় যে তিনি নাকি কোন এক সময় দিনমজুরের মতো কাজও করেছেন বিভিন্ন দোকানে। মাঝে মাঝে কাজ করতেন মুরগির মাংসের দোকানে। তাও নিজের দোকান ছিল না। ছিলেন হেল্পার। পালক ছাড়িয়ে, রক্ত ধুয়ে দিতেন। তবে এসবের মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পর তিনি ১০ বছর আগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি উপ প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন। এইভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বৈধ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে ভাদু। এর পরেই তার পকেটে মোটা টাকা আসতে শুরু করে।

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এলাকার বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠেন তিনি।  সামান্য একজন থানার গাড়িচালক থেকে এইভাবে বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠার পাশাপাশি রাতারাতি রাজপ্রসাদ সমান বাড়ি তৈরি করান ভাদু শেখ। বছর কয়েক আগে এই বাড়ি তিনি তৈরি করেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। শুধু কি বাড়ি! বাড়ির নীচে রয়েছে দু'দুটি গ্যারাজ। তাতে থাকে অন্তত খান চারেক স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল তথা এসইউভি। সেই তিনিই খুন হয়ে গিয়েছেন। তারপর বগটুইয়ে যা হয়েছে তা নিয়ে তোলপাড় বাংলা।

অভিযোগ, অবৈধ বালি আর পাথর খাদান থেকে চোরাই সাপ্লাইয়ের বেতাজ বাদশা হয়ে উঠেছিলেন গ্রামের প্রায় সকলেরই পরিচিত ভাদু।ছোট গ্রামে যেমনটা হয় আরকি, সবাই সবার হাঁড়ির খবর রাখে! স্থানীয়দের অনেকের বক্তব্য, পয়সা, শাসকদের ছায়া—সব মিলিয়ে এই প্রাসাদোপম বাড়ি থেকেই নিজের বিস্তার ক্রমশ বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন নব্য-নেতা।

অলিখিত ভাবে ব্রহ্মাণী নদীর মালিক হয়ে উঠেছিলেন ভাদু।  গত সোমবার রাতে বগটুই গ্রামের এই বেতাজ বাদশা ভাদু শেখ ১৪ নং জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকার দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে নিহত হন। তারপরেই আগুন জ্বলতে শুরু করে বগটুই গ্রামে। সকাল হতেই জানা যায়, মৃত্যু হয়েছে কমকরে ১০ থেকে ১২ জনের। যদিও পরে পুলিশ মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে জানায় ৮।  ভাদুর এই বাড়ির সামনেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, বালি আর পাথরের টাকাতেই এই মহল বানিয়েছিলেন ভাদু শেখ। কিন্তু কেউ প্রশ্ন তোলেনি। ওখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো প্রাসাদ বানিয়েছেন, এখানে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো এই মহল বানিয়েছেন। সে যাক! পরিণতি ভাল হল কি!